Saturday 04 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুন ভোরের আকাঙ্ক্ষা

আবু আফজাল সালেহ
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:২৯

নতুন বছরে আমাদের চাওয়া অনেক- ‘সোনার বাংলা’ গড়া প্রধান চাওয়া। এ চাওয়াকে বাস্তবায়ন করতে হলে অনেক উদ্যোগ, ত্যাগ-বিসর্জন করা দরকার হবে। তবে বৈষম্যহীন ‘সোনার বাংলা’ গড়ার জন্য কয়েকটি বিষয়ের প্রাধান্য দিলেই অনেককিছুই সম্ভব। একাত্তর কিংবা চব্বিশে আমরা দেখিয়েছি আমাদের সামর্থ্য-আমাদের আস্থার প্রবল শক্তির বহিঃপ্রকাশ। তরুণরা আইন-বিচার-নির্বাহীসহ সব বিভাগে সংস্কার চান। তারা চান, কোথাও ঘুস-দুর্নীতি থাকবে না। আইন তার নিজের গতিতে চলবে। আইন ও ক্ষমতাকে অর্থ ও দুর্নীতির মাধ্যমে কব্জা করা যাবে না ইত্যাদির মতো তরুণদের এমন সব প্রত্যাশা তো সমগ্র বাংলাদেশেরই।

বিজ্ঞাপন

‘সুশাসন’ নিশ্চিত করাই হবে বড় ব্যাপার। সুশাসন নিশ্চিত করার মূলমন্ত্র হচ্ছে : ‘আইন তার নিজের গতিতে চলবে’। আইনে বিভিন্ন ফাঁকফোকর থাকতে পারে। গণমানুষের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে সেগুলো সংশোধন করে সময়োপযোগী করে নিতে হবে। এ সংকট নিরসনে দ্রুততম সময়ে উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বিচারবিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে এই একটি বিষয় নিশ্চিত করা গেলে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হবে। চুরি, ডাকাতি, অর্থপাচার, বিভিন্ন অংশের বৈষম্যের পরিমাণ প্রায় জিরোতে আসতে পারে। এটি বাংলাদেশের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। কিন্তু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং চব্বিশের তারুণ্যনির্ভর বিজয় এ উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে ‘সোনার বাংলা’ গড়তে সহজতর হতে পারে। এজন্য দরকার সরকারি-বেসরকারি কিংবা যার যার পজিশন থেকে ব্যক্তিগত আন্তরিকতা ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

বিজ্ঞাপন

নতুন ভোরের দ্বিতীয় চাওয়ার বিষয়টি হতে পারে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। দেশের বড় একটা অংশ হচ্ছে যুব বা তরুণ সমাজ। এ সমাজের ওপর নির্ভর করে সমাজ ও রাষ্ট্রের স্থিরতা ও শান্তিময়তা। তরুণ সমাজের বিপথ থেকে রক্ষা করতে আমরাই ব্যর্থ হয়েছি। পারিবারিকভাবে আমরা নৈতিক শিক্ষা দিতে পারছি না। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা কম করতে পারছি! অনেকক্ষেত্রে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ ও আইনের যথাযথ প্রয়োগে ব্যর্থ হওয়া ইত্যাদি কারণে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। তরুণ সমাজে স্থিতিশীলতা আনতে ব্যর্থ হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব না! উন্নয়নও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য হচ্ছে, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সুদৃঢ় অবস্থান তৈরি করে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করা। সেক্ষেত্রে মানুষের জীবনমান আরও উন্নত করা, মাথাপিছু আয় বাড়ানো, তরুণ প্রজন্মকে দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মে নিয়োগ দান, ২২ শতাংশ অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দারিদ্রচক্র থেকে যত দ্রুত সম্ভব বের করা, কন্যাশিশুসহ মাতৃপ্রধান পরিবারসমূহকে সহায়তা করা ইত্যাদি কাজ করতে হবে। শিক্ষিত তরুণরা যেন দেশে-বিদেশে চাকরি করতে পারেন, শ্রমবাজারে ছড়িয়ে পড়তে পারেন সেই ব্যবস্থাও সরকারকে করতে হবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাই হতে পারে তরুণ সমাজের সবচেয়ে বড় সমাধান। কর্মসংস্থানই তরুণদের পথচলাকে আনন্দময় করতে পারে। আইএলও-এর তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। বেকারত্বের এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে দু-এক বছরের মধ্যে মোট বেকারের সংখ্যা ছয় কোটিতে দাঁড়াবে। বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১২তম। বেকারের সংখ্যা দেড়-দশকের তুলনায় বর্তমানে অনেক বেশি। বেকারদের শতকরা ৭৪ ভাগই তরুণ-তরুণী। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করতে পারলে বিপুল সংখ্যক বেকার সমাজের বোঝা হয়ে যাবে। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত হবে। তার নমুনা দেখতে পারছি। চীনের ক্ষেত্রেও তরুণ সমাজের একটি অংশ বেকার-বয়স্ক হয়ে বোঝা হয়ে গেছে। তরুণসমাজের নিরানন্দ রুখতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতেই হবে।

বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের বড় তিনটি খাত পোশাক, চামড়া এবং ওষুধশিল্প। কিন্তু এ-খাতের মূল পদগুলো বিদেশিদের দখলে। আর তার কারণ, আমাদের দক্ষ জনশক্তি নেই। আমরা পোশাকশিল্পের কথা জানি। সেটা কিন্তু পড়তির দিকেই। বাংলাদেশের ওষুধশিল্প কর্মসংস্থানের বড় একটি খাত। সরকারি চাকরির বাইরে প্রতিবছর এখন প্রায় ৭০ হাজার চাকরির ব্যবস্থা হয় এ শিল্পের মাধ্যমে। আরো কয়েকটি খাত কর্মসংস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিজাত, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জাহাজ নির্মাণ, পর্যটন ও হালকা কারিগরি নির্মাণ শিল্প ইত্যাদি এ পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু তারা চাহিদামত দক্ষ জনশক্তি পাচ্ছে না। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে এখন দরকার ডিজাইনার, বিশেষ করে ফ্যাশান ডিজাইনার। এমবিএ ডিগ্রিধারী হচ্ছে, কিন্তু বেশিরভাগই বেকার থাকছে বা চাহিদামতো চাকুরি পাচ্ছে না। অন্যদিকে ফ্যাশান ডিজাইনার আনছি বিদেশ থেকে। পোশাক খাতেই আমরা বছরে বিদেশিদের বেতন দিয়ে থাকি অন্তত পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ অবস্থা অনেক সেক্টরে বিরাজ করছে।

তৃতীয় চাওয়ার বিষয় হতে পারে অর্থনীতি ও রাজনৈতিকক্ষেত্রে সংস্কার দরকার। যে উপায়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যাবে এমন সংস্কার জরুরি। এছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষায় অগ্রাধিকার ও উচ্চশিক্ষায় গবেষণার গুরুত্বারোপ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উন্নত দেশে এ দুটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। শিক্ষক পেশাকে মূল্যায়িত করতে হবে, মেধাবীদের এ পেশায় আনতে আর্থিক ও মর্যাদাবান করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে আন্তরিক-বাস্তবায়ন করতে হবে। বিভিন্ন পেশার মধ্যে কিংবা আন্তঃকাডার বৈষম্য বিলোপ করতে হবে। শিক্ষার পরিমাণগত হার বাড়ছে কিন্তু চাহিদাকৃত/কোয়ালিটি শিক্ষার হার খুব কমই বাড়ছে। এ থেকে উত্তরণে উন্নত শিক্ষানীতি ও বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়ে আন্তরিকতার সাথে বাস্তবায়ন করতে হবে। মানসম্মত কারিগরি শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান চেতনা বাস্তবায়ন করতে আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। বিখ্যাত আধুনিক কবি Robert Frost-এর ‘Stopping by Woods on a Snowy Evening’ কবিতার শেষ স্তবক- ‘The woods are lovely, dark and deep,/ But I have promises to keep,/ And miles to go before I sleep,/ And miles to go before I sleep.’ কবিও অনেক দূর যেতে হবে বলে পুনরাবৃত্তি করেছেন। এজন্য দরকার সবার সহযোগিতা। ধাক্কাটা ব্যক্তি থেকে নিজের থেকেই শুরু করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ প্রতিশ্রুতি দেবো ব্যক্তিপর্যায় থেকেই।আমাদের মনে আছে না? বৈষম্যহীন ভবিষ্যত-নির্মাণ করে শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসভূমি নির্মাণ করতে চাঁদে অবতরণের সময় নীল আর্মস্ট্রংয়ের অনুপ্রেরণার বাণী আমাদের সামনেই-ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদক্ষেপ নিয়েই মানবজাতির জন্য বৃহত্তর উদ্যোগ- ‘One small step for man, one giant leap for mankind.’

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক

সারাবাংলা/এএসজি

আবু আফজাল সালেহ নতুন ভোর মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর