Wednesday 01 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তারুণ্যের চাওয়াই বিজয়ের চাওয়া

আবু আফজাল সালেহ
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:০৭

আমাদের প্রধানতম অর্জন হচ্ছে স্বাধীনতাসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন করা। ছাত্র, শিক্ষক বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনতার স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে অসাধ্য বিজয় অর্জনে সক্ষম হয়েছি। চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে, তারুণ্য নতুন স্বপ্ন দেখছে। তারা চায় বিজয় সবার হোক। সব পেশার কিংবা সব সম্প্রদায়ের জন্য হোক কল্যাণকর।

রাজনৈতিক ভাবনার প্রথম দাবি বা চাহিদা হচ্ছে ‘স্বাধীনতা’। এরপর নিজস্ব ঐতিহ্য, স্মারক ও সংস্কৃতিকে লালনপালন করা। উভয়ক্ষেত্রে বাঙালিকে সংগ্রাম করতে হয়েছে, ত্যাগ-তিতীক্ষা বিসর্জন দিতে হয়েছে এবং সে সংগ্রাম আজও চলমান রয়েছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি সবসময়ই মাথাচাড়া দেয়। প্রতিনিয়তই বাঙালিকে নিরন্তর ঝুঝতে হয়। ক্ষুধা ও দারিদ্য মুক্ত করার জন্যও অন্তহীন প্রচেষ্টা করতে হচ্ছে। কর্মসংস্থান বড় সংকট। ঐক্যবদ্ধ বাঙালি অনেককিছুই অর্জন করেছে। এখনও অনেক কিছু অর্জন করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

রাজনীতি কিংবা অর্থনীতি কিংবা পরিচালনায় নারী ও পুরুষের বৈষম্য কমিয়ে উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। সবাই মিলে বৈষম্যহীন কিংবা অসাম্প্রদায়িক-চেতনায় লালিত হয়ে উঠি বাংলাদেশি। তাদের চাওয়া স্বাধীনতার দুর্বার চেতনায় একাতাবদ্ধ শক্তি বহিঃশক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করতে সক্ষম হবে। তারুণ্যের এ ভাবনা কিন্তু একাত্তরের ভাবনাও—বিজয়ের ভাবনাও।

বিজয়কে সুসংহত করতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে তারুণ্যকে আনন্দ দিতে পারলেই বিজয়ের প্রকৃত স্বাদ পাবো। তরুণদের পথচলা হোক আনন্দে। ব্যর্থতায়, সম্ভব নয়। তারুণ্যশক্তিকে অলস করে রাখলে দেশ ও জাতির জন্য হিতকর হবে। শিল্পায়নে অগ্রগতি, কৃষিখাতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি, চর, বরেন্দ্র,কিংবা প্লাবিত অঞ্চলে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। ওষুধে ভেজাল বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত ও সহজলভ্য করার জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে প্রাধিকার দিতে হবে। উচ্চশিক্ষায় গবেষণার জন্য বরাদ্দ ও তদারকি বাড়াতে হবে। বিদেশি-পরিকল্পনা না-গ্রহণ করে তা রূপান্তরিত ও স্থানীয়-পরিবেশ-বান্ধব করে এগিয়ে যেতে হবে। কৃষিকে সামনে রেখে বিভিন্ন পরিকল্পনা ফলপ্রসু হবে।

বিজ্ঞাপন

ইপিজেড এলাকাসহ পাট ও চা শিল্পকে জাগ্রত করতে হবে। গার্মেন্টশিল্পে স্থিতিশীলতা আনতে হবে। চিংড়ি শিল্পে বিশেষ নজর দিতে হবে। সুদরবনকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা নিতে হবে। সমুদ্র এলাকাকে আরও ফলপ্রসু ও অর্থনৈতিক লাভবান করতে বিশেষ পরিকল্পনা নিতে হবে। এক্ষেত্রে সমুদ্র ও নদীবন্দরগুলোকে আরও কর্মক্ষম করতে নজর বাড়াতে হবে। রেল সেক্টরে গতি বাড়াতে হবে। সৈয়দপুর, পার্বতীপুর ও চট্টগ্রামের রেলকারখানা থেকে সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে বরাদ্দ ও জনবল বাড়িয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধির বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ বিজয়ের প্রতি অন্যতম দান হতে পারে।

বিজয়কে সুসংহত ও কার্যকরী করতে হলে যার যার অবস্থান থেকে সবার আন্তরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বায়ু বা পানি কিংবা আলো দূষণ থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচানোর কার্যকরী ও সাহসী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও তা আন্তরিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ভবিষ্যত-প্রজন্মের জন্য উন্নতর অবস্থান রেখে যেতে হবে। তরুণদের জন্য পথ ছেড়ে দিতে হবে। তাদের জন্য পথ আটকানোর পুরাতন অথচ চালাকি উদ্যোগ গ্রহণ না-করে তরুণদের জন্য পথ খোলা রাখতে হবে। চব্বিশ অভ্যুত্থান তরুণদের কার্যকরিতা দেখিয়ে দিয়েছে। বায়ান্ন, উনসত্তর, একাত্তর কিংবা স্বৈরাচার এরশাদ পতনে তরুণরাই সামনের সারিতে ছিল। এখন, তাদেরকে কাজে লাগাতে হবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন রাজনৈরিক উন্নয়নের ওপর অনেকাংশে নিরভর্শীল। বাঙালির নেতিবাচক চিন্তাধারার উন্নয়ন দরকার। গণতান্ত্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে। নানা প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হচ্ছে। বাঙালিরা পরীক্ষিত জাতি। ব্রিটিশ থেকে মুক্ত, পাকিস্তানি-শাসন থেকে মুক্ত বা ঢাকার ভাষা-আন্দোলন কেন্দ্রিক ঐক্যবদ্ধ বাঙালিকে পেয়েছি। কিছু ব্যতিক্রম বাঙালিও রয়েছে। পলাশী বা বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে শত্রুপক্ষের সঙ্গে অনেকে হাতও মিলিয়ে থাকে। বাঙালির ক্ষেত্রে বুদ্ধিভিত্তিক চিন্তার অধিকারী নাগরিকের মর্যাদা ও মূল্যায়ন খুবই কম। অনেকের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার অভাব রয়েছে। ফলে সত্যিকারের বুদ্ধজীবিগণ কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এ থেকে আমাদের উত্তরণ দরকার। তারুণ্যশক্তির প্রবাহকে আমাদেরকে অনুধাবন করে এগিয়ে যেতে হবে। যদি পারি, তাহলে আমাদের বিজয় কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক মুক্তি পেতে হলে ঐক্যবদ্ধ বাঙালিকে অতি প্রয়োজন। কর্মক্ষম হাত সৃষ্টি টেকসই উন্নয়নে অন্যতম উপায়।

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক

সারাবাংলা/এএসজি

আবু আফজাল সালেহ মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর