Wednesday 01 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে নারী ও শিশুকে রক্তাক্ত করাই কি আন্দোলন?

সৈয়দ আশিকুজ্জামান আশিক
১৮ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৪৭ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৫৪

ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার ছবিটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকে বারবার বলে আসছে যে কোনো দাবি থাকলে তাদের কাছে যেতে। তাদের কাছে আবেদন জানালে তা নিয়ে তারা আলোচনা করবে, বিবেচনা করে দেখবে।কিন্তু আমরা দেখলাম কী? সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় আসা আন্তনগর ট্রেন উপকূল এক্সপ্রেস লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়ে মারা হয়। সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে,তাদের দাবি হচ্ছে, কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

মহাখালীতে তারা শুধু সড়ক অবরোধ করলে না হয় মানা যেত, যেহেতু এটিই এ দেশের রেওয়াজ! কিন্তু তারা ওই এলাকার রেলপথও অবরোধ করলেন। রেলপথ অবরোধের ঘোষণা কি তারা আগেই দিয়েছিলেন? এমন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে থাকলেও সেটির প্রচারণা কি তারা যথাযথভাবে চালিয়েছিলেন? সেটি না হয়ে থাকলে ওই পথ দিয়ে চলন্ত ট্রেনের তো জানার কথা নয় সেই রেলপথ অবরোধের বিষয়টি। ফলে যা হওয়ার তা–ই হলো— রেলপথ দিয়ে ট্রেন ছুটে চলল। রেলপথের ওপর থাকা অবরোধকারীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ট্রেনের গতিও কমালেন চালক। এরপরেও অবরোধকারীরা সেই ট্রেন থামাতে যা করলেন, তা খুবই ভয়াবহ।

বিজ্ঞাপন

রেলপথের দুই পাশে দাঁড়িয়ে ট্রেন বরাবর পাথর ছোড়া শুরু করলেন কিছু বিক্ষোভকারী। আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার দাবিদার এসব আন্দোলনকারী কীভাবে ভাবলেন, এভাবে পাথর ছুঁড়ে ট্রেন থামানো যায়! আচমকা ট্রেন থামানোর যে সুযোগ নেই, সেটি নিশ্চয়ই তাদের না জানার কথা নয়। আর ট্রেনে পাথর মারলে কী হয়, সেটিও নিশ্চয়ই তাদের না জানার কথা নয়। ফলে তাদের ছোড়া পাথরের আঘাতে ট্রেনের বেশ কয়েকটি জানালার কাঁচ ভাঙল। শুধু তা–ই নয় সেই পাথরের আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছে কয়েকজন যাত্রীও। রক্তাক্ত যাত্রীদের ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। নারী ও শিশুর চোখ-মুখ রক্তে ভরে গেছে। যাত্রাপথে এমন নিষ্ঠুরতা, নির্মমতার শিকার হতে হলো তাদের। তিতুমীর কলেজের আন্দোলনকারী কতিপয় শিক্ষার্থী দাবি আদায়ের কর্মসূচির নামে যা করলেন, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

পাথর ছোড়ার সময় এতগুলো শিক্ষার্থী একবারও ভাবলেন না যাত্রীদের কথা। এটি কি ব্যাঙকে মাথর ছুঁড়ে মেরে আনন্দ পাওয়ার খেলা! এ কেমন কথা! তারা কি আসলে তাদের দাবি আদায় করতে চান? এরপর শহরজুড়ে চরম অচলাবস্থা তৈরি হলে তাদের একটি প্রতিনিধিদল ঠিকই সচিবালয়ে গেল আলোচনা করতে। সেটিই কেন তারা শুরুতে করলেন না? কেন ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আটকে দিয়ে মানুষের চরম ভোগান্তি তৈরি করলেন, কেন পাথর মেরে নারী ও শিশু ট্রেনযাত্রীকে রক্তাক্ত করলেন? এখন সাত কলেজের প্রতিটি কলেজই কি তাহলে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি নিয়ে রাস্তায় নামবে? কালকে কি আমরা দেখব ইডেন কলেজের ছাত্রীরাও নীলক্ষেতের রাস্তায় নেমে এসেছে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে? পরেরদিন মিরপুরের রাস্তা অবরোধ করতে নেমে এসেছে সরকারি বাঙলা কলেজ? এভাবে অন্য কলেজগুলোও? এভাবে চলতে থাকলে তো দেশের এ-মাথা ও-মাথার জেলা-উপজেলার সব কলেজই নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় দাবি নিয়ে রাস্তায় নামা শুরু করবে!

তিতুমীর কলেজ বা সাত কলেজ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ, সেটি মেনে নিয়েই তো শিক্ষার্থীরা সেখানে ভর্তি হয়েছেন। এখন অধিভুক্ত হওয়ার কারণে নানা জটিলতা ও সমস্যা তৈরি হয়েছে। নানাভাবে সেগুলো সমস্যার সমাধান হতে পারে, সে অনুসারে আলোচনা ও পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর জন্য আছে স্ব স্ব কলেজ কর্তৃপক্ষ, আছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সর্বোপরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শুরুতে কর্তৃপক্ষগুলোর সঙ্গেই কোনো আলোচনায় না গিয়ে সরাসরি দাবি আদায়ের জন্য সরকারকে বাধ্য করাও কতটা যৌক্তিক, সেই প্রশ্নও চলে আসে।

একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলেজ থাকবে কী না, বিশ্ববিদ্যালয় হবে অর্থাৎ এর ‘স্ট্যাটাস’ কী হবে, সেটি কি শিক্ষার্থীদের নির্ধারণ করার কথা? একটি কলেজের ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ হওয়ার কী কী যোগ্যতা বা সামর্থ্য আছে সেটিও তো গুরুত্বপূর্ণভাবে বিবেচনার বিষয়। এখন সাত কলেজকে বা প্রতিটি কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করে ফেললে তাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তা কী করে নিশ্চিত হলেন তারা? জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর যে ‘উচ্চশিক্ষার মেকি উন্নয়ন’ দেখানো হলো, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কী হাল তারা কি তা জানেন না? তারা কী করে ভাবলেন সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করলে, ট্রেনে পাথর ছুঁড়লে কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয় করার ঘোষণা চলে আসবে!

লেখক: গবেষক, বায়োইনফরমেটিক্স রিসার্চ ল্যাব, সেন্টার ফর রিসার্চ ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিআরআইডি)

সারাবাংলা/এসবিডিই

তিতুমীর কলেজ

বিজ্ঞাপন

ফিরে দেখা ২০২৪ / ছবিতে বছর ভ্রমণ
১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪৫

আরো

সম্পর্কিত খবর