ভয়াল ২৯ এপ্রিল: অরক্ষিত বেড়িবাঁধ যেন উপকূলবাসীর কান্না
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৩৬
তারা ভালো নেই। যারা প্রকৃতির সাথে নিত্য লড়াই করে বাঁচে। বাঁচার তাগিদে ঘর ছাড়ে। উঠোনবাড়ি কিংবা পৈতৃক ভিটা-মাটির মায়ায় আবার সেখানে ফিরে আসে। হাজারো দুর্দিন আর হাহাকারের তীব্র আর্তনাদে তাদের জীবন। তারা উপকূলবাসী। কথা বলছি তাদেরই নিয়ে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে খবর পায়, নতুবা মাইকিং কানে বাজে যে, বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মাইকিং কিংবা আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া সংকেত কানে বাজার আগেই যেন তাদের মনে ভয় আর উৎকন্ঠার সংকেত বেজে উঠে। চিন্তায় পড়ে যায়, এই বুঝি সব ভাসিয়ে নিলো নিলো। শুরু হয়ে যায় দৌড়ঝাঁপ। কেউ ছুটে গরু-ছাগল কিংবা ছেলেপুলে নিয়ে। কেউ ছুটে কোনো মতে ঘরটা রশি কিংবা দঁড়ি দিয়ে আটকে রাখতে। শেষ সম্বল এটা অনেকের, মন তো আর মানে না।
চারদিকের প্রবল বাতাস আর সাগরের ঢেউ খেলানো মরণ খেলায় তারা বারবার হেরে যায়। হেরে যায় প্রকৃতির কাছে। হারিয়ে ফেলে তাদের সম্বল। কেউবা হারায় নিজের পৈতৃক ভিটা-মাটি, কেউ বা হারায় তিল তিল করে গড়ে তোলা শখের বাড়িটা। কেউবা আবার নিঃস হয়ে কেবল সাগর পানেই চেয়ে চেয়ে কাঁদে। কাকে বুঝাবে এই দুঃখ? প্রকৃতি যখন তাদেরই প্রতি এতই বেখেয়ালি।
আবার অনেকে প্রকৃতির বেখেয়ালিপনাকে দুষছেন না, বরং অভিযোগ তাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি। হাজার হাজার টাকা কিংবা তার চেয়ে বেশি কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলেও এখনো দেশের অনেক জায়গায় অরক্ষিত বেড়িবাঁধ। নেই তাতে কর্তৃপক্ষের কোনো সুদৃষ্টি। যার প্রেক্ষিতে প্রতিনিয়তই দুঃচিন্তা আর উৎকন্ঠায় দিন কাটে উপকূলবাসীর।
ভুলতে পারে না সেই দিনগুলির কথা, যে দিনে তারা তাদের শেষ সম্বলটুকুও রক্ষা করতে পারেনি। এমনও অনেক দিনের সাক্ষী থাকে উপকূলবাসী। তবে মারাত্মক চিত্র দেখেছে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের বাঁশখালীবাসী। জানা যায়, ‘১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে আঘাত হানে একটি প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়। যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ কিমি (১৫৫ মাইল/ঘণ্টা)। সাথে ৮ থেকে ১০ মিটার (৩০ ফুট) উঁচু জলোচ্ছ্বাস। প্রলংয়ঙ্করী এই ঘূর্ণিঝড় এবং তার প্রভাবে সৃষ্ট ১০ মিটার (৩০ ফুট) উঁচু জলোচ্ছ্বাসে বাঁশখালী, আনোয়ারাসহ উপকূলবর্তী জেলা-উপজলোগুলোতে প্রথম ধাক্কায় মৃতের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮২ জন। মারা যায় ২০ লাখের অধিক গবাদি পশু। গৃহহারা হয়েছিল কোটি মানুষ। ক্ষয়ক্ষতির বিচারে এই ঘূর্ণিঝড় বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে পরিচিত। মাছ ধরার ট্রলার, নৌকা, বৈদ্যুতিক খুটি, গাছ-পালা, চিংড়ি ঘের, স্কুল-মাদ্রাসা, পানের বরজ, লাখ লাখ গবাদি পশু, ব্রিজ কালভার্ট ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ।’
এখনো তারা ভুলতে পারে না সেইদিনটিকে। অথচ কোটি কোটি টাকার বাজেট হয় এই বেড়িবাঁধ সংস্কারের নামে। অনেক ক্ষেত্রে এর বাস্তবায়ন হলেও দেশের অনেক জায়গায় এখন অবধি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন অধরাই রয়ে আছে। ফলে দেশের হাজার হাজার ঘরবাড়ি আর লাখ লাখ মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে না এই অরক্ষিত বেড়িবাঁধের চিন্তায়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর ঘূর্ণিঝড়ে এই চিন্তা আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায় উপকূলবাসীর।
ঘূর্ণিঝড় কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মহা বিপদ সংকেত শুনতে শুনতে তারা বেশ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তবুও শেষ হয়নি তাদের দুর্দিনের বলা গল্পগুলো। গল্পের কোনো এক শিরোনামে হয়তো তারা একটা নাম দিয়েই রেখেছে যে, এটিই তাদের কান্না, অরক্ষিত বেড়িবাঁধ। কখন থামবে তাদের এই কান্না? তারা অবহেলিত কেন? পানি উন্নয়ন বোর্ড অবশ্যই বিষয়টি যদি একটি তালিকা করে দেশের সকল অরক্ষিত বেড়িবাঁধগুলো যথাযথ ভাবে সংস্কারের ব্যবস্থা করে অন্তত তারা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতো। হারাতে হতো না তাদের পৈতৃক ভিটা-মাটি। বিলীন হতো না কোনোমতেই নদী ভাঙনের করাল গ্রাসে তাদের ঘরবাড়ি।
লেখক: শিক্ষার্থী
সারাবাংলা/এসবিডিই
তৌহিদ-উল বারী ভয়াল ২৯ এপ্রিল: অরক্ষিত বেড়িবাঁধ যেন উপকূলবাসীর কান্না মুক্তমত