উনত্রিশ ফেব্রুয়ারির জ্বলন্ত বেইলী রোড
৫ মার্চ ২০২৪ ১৫:৫৭
এমন উনত্রিশ ফেব্রুয়ারি আর না আসুক! কত স্বপ্ন, কত আশা, কত পরিকল্পনা এবং কত পরিবারের রক্তের আপন হারিয়ে গেছে। আগুনে দ্বগ্ধ হয়ে কয়লা হয়ে গেছে। সেই পরিবারের মানুষ গুলো কিভাবে নিজেকে শান্তনা দিবে? যারা হারিয়েছে প্রিয়জন। কত মা-বাবার বুক খালি হয়েছে। নিষ্পাপ শিশু আগুনে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়েছে। চোখের জল থামছে না মানুষের। হৃদয় হুহু করে ক্রন্দন করছে। কত ভাই বোনের লাশ এখনো মর্গে পড়ে আছে। চিহ্নিত করতে পারে নাই এখনো পর্যন্ত। বেইলী রোড অনেকের স্মৃতিতে স্বরণীয় হয়ে থাকবে। যে স্মৃতি বুকের বাম পাশে পিনপিন কষ্ট দিবে। মনে পড়লেই মন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে।
কিভাবে মনকে বুঝ দিবে জানি না। কত খুশি মনে জন্মদিন উপভোগ করতে গেছে। ফিরছে মৃত নিথর দেহ নিয়ে। ইতালি যাবে তাই পরিবার নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেছে। ফিরছে আগুনে জ্বলে নিঃশ্বাস হারিয়ে। যেখানে গ্রীন কার্ড নিয়ে ইউরোপ ঘুরার কথা। অথচ সেই ভাই ও তার পরিবার পুরো দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। বেইলি রোড়ের সেই মার্কেটের কর্মচারীরা পরিবারের জন্য রাত দিন এক করে পরিশ্রম করছে। কিন্তু কে জানতো সেই পরিবারের মুখে এমন কান্নার রুল পড়বে। জীবীকা নির্বাহের বট বৃক্ষ হারিয়েছে। অজর নয়নে চোখের জল ফেলছে। চোখ ফুলে গেছে স্বজনের আহাজারিতে। মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
উনত্রিশ তারিখ রাতে সেদিন সূর্যের জলন্ত অগ্নির মত জ্বলছে মার্কেট। পৃথিবীর সব আগুন যেন পরিবার পরিজন হারানো মানুষের অন্তর্দেশে লাগছে। আহ জীবন! কত রঙিন স্বপ্ন ছিল তাদের। উশষী থেকে ভোর পর্যন্ত পড়াশোনা করে বুয়েটে জায়গা করে নিয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পরিবার গর্ব করে বলত আমার ছেলে বুয়েটে পড়ে। আমার মেয়ে বুয়েটে পড়ে। নাহিয়ান ভাই ও লামিশা আপু। আপনারা আমাদের ক্ষমা করুন। নাহিয়ান ভাইয়ের বন্ধু জুনায়েদ উল্লেখ করেন, নাহিয়ান বলছিল, ‘এখানে থাকলে একদিন হয় রোড় এক্সিডেন্ট মারা যাব। না হলে আগুনে পুড়ে।’ এতো তাড়াতাড়ি নাহিয়ান ভাইয়ের কথা সত্যি হবে দেশের মানুষ কল্পনা করেনি। সেই বুয়েটের নাহিয়ান ও লামিশা আপু মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করছে বেইলী রোডে! কিভাবে স্থির থাকবে তাদের আত্মীয় স্বজনরা?
সেই মার্কেটের কর্মচারী! যার অক্লান্ত পরিশ্রমে সংসার চলছে। রাতে নাইট ডিউটি করছে। ওভার টাইমে কাজ করছে। নিচের ফ্লোর থেকে শেষ উপরের ফ্লোর পর্যন্ত চড়ে বেড়িয়েছে। পরিবারের আহার জোগাড় করছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার অর্থ দিয়েছে। পরিবারকে উৎফুল্ল ও প্রফুল্ল রাখতে চেয়েছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে এই ভেবে একদিন শান্তি আসবে। আগুনে সব শান্তি কেড়ে নিবে জানতো না। জানতো না জীবন যেখানে যেমন। সেই কর্ম ক্ষেত্র থেকে ফিরছেন নিথর দেহ নিয়ে। টাকার মেশিন অদৃশ্য হয়েছে পরিবারের। সৃষ্টি কর্তা এমন লিখন কেনো লিখেছিল? কেনো তাদের এমন যন্ত্রণাময় মৃত্যু দান করলো? দুনিয়াতে সব কিছুর শাস্তি দিয়েদিল।
ভর্তি পরীক্ষার খরচ জোগাড় করতে নাঈম প্রহরীর চাকরি নিয়েছিল। সেই নাঈম মৃত্যুর তালিকাতে ভর্তি হয়ে সারা জীবনের মতো চলে গেছে। এমন ভাগ্য জীবনে লেখাছিল জানলে নাঈম আজ কোথায় থাকতো? নাঈম আমাদের ক্ষমা করিস ভাই। মর্গে লাশ পড়ে আছে এক আপুর। এখনো শনাক্ত হয় নাই কোন ধর্মের তিনি। এমন অবস্থা হয়েছে আগুনে। আগুন লাগার ঘটনা এবার নতুন নয়। আমাদের দেশে এমন ঘটনা চলমান। দেশের আরো কিছু আগুন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নত করা দরকার। ফায়ার ডিপার্ট্মেন্টের ভাইরা যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়েছে। তবুও বহু জনের ঠিকানা হয়েছে মর্গে। সৃষ্টি কর্তা এমন কষ্ট কাউকে না দিক। তার নিকট সেই কামনা। এমন মৃত্যু কেউ সহৃ করতে পারবে না।
আমাদের জীবন লতা-পাতার সাথে লেগেও চলে যেতে পারে। এই মৃত্যু আমরা চাই না মহান রব। এমন মৃত্যু কাম্য নয়। যে মৃত্যুতে জাতি স্তব্ধ ও বাকরুদ্ধ! ভবন নির্মাণের সময় বেশি বেশি চিন্তা করুন। যাতায়াত সুবিধা অতিরিক্ত রাখুন। পানির কথাতো শুরুতেই মগজে গাঁথুন। কেননা, পর্যাপ্ত পানি জমায়েত থাকলে হয়তো এতো মানুষের জীবন কাল হতো না। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অন্তত কৃত্রিম কনক্রিটের দালানের সাথে লেপ্টে জ্বলে মরতে চাই না। ভবন নির্মাণের সময় সহস্রবার ভাবুন। আমাদের রক্ষা করুন। নিজে বাঁচুন। অপরকে বাঁচতে সাহায্য করুন। মহান রব সকল পরিবারকে হেফাজত করুক। সৃষ্টি কর্তার উপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। চোখ বুঝে হাহাকার হৃদয়কে শান্তনা দিচ্ছি। সুস্থ থাকুন! শান্তিতে থাকুন! অপরকে শান্তি দিন!
লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম
সারাবাংলা/এসবিডিই