২৭ ফেব্রুয়ারি: বাংলা সাহিত্যের কলঙ্কময় দিন
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:৩০
আজ কলঙ্কময় ২৭ ফেব্রুয়ারি। আজ থেকে ২০ বছর আগে ২০০৪ সালের এই দিনে রাতে অমর একুশে বইমেলা থেকে বের হয়ে বাসায় ফেরার পথে ধর্মান্ধ মৌলবাদী অপশক্তি দ্বারা চাপাতি ও বোমা হামলার শিকার হন বাংলা সাহিত্যের প্রধান প্রথাবিরোধী লেখক ও অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ।
প্রথমে হুমায়ুন আজাদকে ক্লিনিক্যালি ডেথ ঘোষণা করেন সিএমএইচ-এর ডাক্তাররা। পরে ৭২ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হুমায়ুন আজাদের জ্ঞান ফিরে আসে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন সরকার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে পাঠায়। এরপর কিছুটা সুস্থ হলেও এ যাত্রায় আর টিকে থাকতে পারেননি।
১১ আগস্ট রাতে জার্মান কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের দেওয়া একটি পার্টি থেকে ভালোভাবেই নিজের ফ্ল্যাটে ফিরেন। সে রাতেই কোনো একসময় হুমায়ুন আজাদ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন। ১২ আগস্ট ভোরে ফ্ল্যাটের নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। হুমায়ুন আজাদ কুসংস্কারহীন এক আধুনিক সমাজের স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু তাকে চলে যেতে হলো অকালে।
মূলত তার ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ উপন্যাসের জন্য তার ওপর এ হামলা হয়। ২০০৪ সালে ‘আগামী প্রকাশনী’ থেকে তার এ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেন আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনী।
এ প্রসঙ্গে ওসমান গনী আদালতকে বলেন, ‘২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত নয়টার দিকে বাসায় যাই। পরে টেলিফোনে প্রথমে সংবাদ পাই, হুমায়ুন আজাদ স্যারকে মেরে ফেলা হয়েছে। পরে শুনি, স্যার মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। এ সংবাদ শোনার পর আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে যাই। তখন হুমায়ুন আজাদ স্যারকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পাই।’
২০০৪ সালের বইমেলায় ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ উপন্যাসটি ব্যাপক বিক্রি হয় বলে জানান ওসমান গনী। তিনি আদালকে বলেন, ‘বইটি ইত্তেফাক পত্রিকায়ও বের হয়। তখন মৌলবাদীরা মিছিল করে বইটি নিষিদ্ধের দাবি জানায়। মৌলবাদীরা হুমায়ুন আজাদকে মুরতাদ ঘোষণা করে। তাকে হত্যার হুমকি দেয়। আমাকেও তারা মৃত্যুদণ্ড দিয়ে চিঠি পাঠায়।’
হুমায়ুন আজাদ ছিলেন ত্রিকালদর্শী লেখক। ত্রিকালদর্শী এ জন্যই যে, “সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে”-এর মতো সময়োপযোগী যুগান্তকারী কবিতা তিনি সৃষ্টি করে গেছেন। হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে আলোচনা আছে, সমালোচনা আছে। সবকিছু ছাপিয়ে তিনি স্বতন্ত্র বৈশিষ্টে দীপ্যমান। হুমায়ুন আজাদ ছিলেন ‘ঠোঁটকাটা’ ও ‘রগচটা’ প্রকৃতির মানুষ। ধর্মান্ধতা, অন্ধত্ব, গোঁড়ামি, কুসংস্কার, ভন্ডামীসহ যাবতীয় অন্ধকারের বিরুদ্ধে তিনি আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন।
হুমায়ুন আজাদ বলে গিয়েছিলেন— “সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।” বর্তমান সময়ে সর্বত্রই সেটার প্রতিফলনই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জাতির এই সংকটকালীন মুহূর্তে তার অভাব নিদারুণভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
২৭ ফেব্রুয়ারি: বাংলা সাহিত্যের কলঙ্কময় দিন ইমরান ইমন মুক্তমত