Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জীবনানন্দ দাশ: বাংলা সাহিত্যে ‘আধুনিক চিত্রকল্পের’ সংযোজক

ইমরান ইমন
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:৪২

বিশ্ব ইতিহাসে ক্ষণজন্মা প্রতিভাধর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি জীবনানন্দ দাশ। ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রেমের কবি, ভালোবাসার কবি, শুদ্ধতম কবি, রূপসী বাংলার এই কবির ১২৫তম জন্মদিন।

১৮৯৯ সালের আজকের এই দিনে তিনি বরিশালের ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার বামনকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনানন্দ দাশের বাবা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক। মা কুসুমকুমারী দাশও ছিলেন একজন কবি। সাংসারিক কাজের ফাঁকে তিনিও কবিতা লিখতেন। জীবনানন্দ মায়ের কাছ থেকেই সাহিত্যচর্চা ও কবিতা রচনার প্রেরণা লাভ করেন।

বিজ্ঞাপন

১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্রহ্মবাদী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় ‘বর্ষা আবাহন’ নামে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তখন তিনি শ্রী জীবনানন্দ দাশগুপ্ত নামে লিখতেন। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিনি জীবনানন্দ দাশ নামে লিখতে শুরু করেন। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এর লোকান্তর হলে তিনি ‘দেশবন্ধুর প্রয়াণে’ শিরোনামে একটি কবিতা লিখেছিলেন যা বঙ্গবাণী পত্রিকার শ্রাবণ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।

জীবনানন্দ দাশ নিঃসন্দেহে সর্বোৎকৃষ্ট নিঃসঙ্গতার কবি। যাকে বলা হয় Poet of Surrealism। তাই সাড়ে আট শত কবিতার বেশি কবিতা লিখলেও তিনি জীবদ্দশায় মাত্র ২৬২টি কবিতা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও কাব্যসংকলনে প্রকাশ করতে দিয়েছিলেন। তার জীবদ্দশায় তার নামের প্রতি কোনো সুবিচার হয়নি বললেই চলে। মৃত্যুর পরেই তার মূল্যায়ন বা জনপ্রিয়তা পরিপূর্ণভাবে শুরু হয়।

এ প্রসঙ্গে কবি হুমায়ুন কবিরকে লেখা এক চিঠিতে জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, “বিশিষ্ট বাঙালিদের ভিতর আমি পড়ি না; আমার বিশ্বাস, জীবিত মহত্তর বাঙালিদের প্রশ্রয় পাওয়ার মতনও কেউ নই আমি। কিন্তু আমি সেই মানুষ, যে প্রচুর প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রতিটি দ্রব্যকে সোনা বানিয়ে তুলতে চায় অথবা মহৎ কোনও কিছু, যা শেষ বিচারে একটা কোনও জিনিসের-মতন-জিনিস; কিন্তু, ভাগ্য এমনই যে, আজ তার পেটের-ভাত জুটছে না। কিন্তু, আশা করি, একটা দিন আসবে, যখন খাঁটি মূল্যের যথার্থ ও উপযুক্ত বিচার হবে; আমার ভয় হয়, সেই ভালো দিন দেখতে আমি বেঁচে থাকব না।”

বিজ্ঞাপন

১৯৫২ সাল থেকে নিয়মিত তার কবিতা প্রবাসী, বঙ্গবাসী, কল্লোল, কালি-কলম, বিজলী, ধূপছায়া, প্রগতি প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশ হতে থাকে। কবির উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো: কাব্যগ্রন্থ বনলতা সেন, ঝরা পালক, ধূসর পাণ্ডুলিপি, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা, বেলা অবেলা কালবেলা। তার একমাত্র প্রবন্ধগ্রন্থ ‘কবিতার কথা’। প্রবন্ধগ্রন্থটি পড়ে বোঝা গেল, কবিতার মতো প্রবন্ধেও অনন্য ও শক্তিমান ছিলেন জীবনানন্দ দাশ। মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় তার বিখ্যাত দুটি উপন্যাস ‘মাল্যবান’ও ‘সতীর্থ’।

জীবনানন্দের কবিতায় পশ্চিমা সাহিত্যের ছাপ প্রতিফলিত হয়। পশ্চিমা সাহিত্যের ধারাগুলোকে তিনি পাকাপোক্তভাবে আয়ত্ত করেছিলেন বলেই তার কবিতা চিত্ররূপময় হয়ে ওঠে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতাকে ‘চিত্ররূপময়’ বলে অভিহিত করেছেন এবং বুদ্ধদেব বসু তাকে ‘নির্জনতম কবি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। অন্নদাশঙ্কর রায় তাকে ‘শুদ্ধতম কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন। বাংলা সাহিত্যে কবিতার ধারায় জীবনানন্দ যে চিত্রকল্পের সংযোজন ঘটিয়েছেন তা বাংলা সাহিত্যের জন্য অমূল্য সম্পদ। যেমন তিনি বলেছেন: “যে জীবন ফড়িংয়ের, দোয়েলের, মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা”, “চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের পর/ হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা”, “সুরঞ্জনা, তোমার হৃদয় আজ ঘাস, বাতাসের ওপারে বাতাস/ আকাশের ওপারে আকাশ”, “চোখে তার যেন শত শতাব্দীর নীল অন্ধকার!”

নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলন ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দ পরিবর্তিত সিগনেট সংস্করণ ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থটি বাংলা ১৩৫৯-এর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ বিবেচনায় পুরস্কৃত করা হয়। কবির মৃত্যুর পর ১৯৫৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৪) সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করে। ১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ অক্টোবর রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে কবি মৃত্যুবরণ করেন।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

ইমরান ইমন জীবনানন্দ দাশ: বাংলা সাহিত্যে ‘আধুনিক চিত্রকল্পের’ সংযোজক মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর