Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভ্রমণে জ্ঞান, জ্ঞানই শক্তি

রাশেদুজ্জামান রাশেদ
২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৫০

ভ্রমণ করতে চায় না এমন মানুষের সংখ্যা খুবেই কম। ভ্রমণ করার মধ্যে দিয়ে জগতের প্রকৃতি সম্পর্কে অনেক জ্ঞান অর্জিত হয়। ভ্রমণের উপকারিতা যে ভ্রমণ করে সে ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারে। নদ-নদী, সমুদ্র সৈকত, পাহাড়-পর্বতের দেশ বলা হয় বাংলাদেশ। এই সবুজ সোনালি দেশের সুন্দরবনে আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হাতি, বানর, ঘড়িয়াল, লালকাকড়া, সাপসহ নানা জাতে পশু পাখি এবং গোলপাতা, সুন্দরী নানা গাছগাছালি।

আমাদের দেশের অপরূপ সৌন্দর্য্যের আধার দেখতে আসে বিদেশী ভ্রমণ পিপাসুদ বন্ধুরা। দেশের অভ্যন্তরে ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে ভ্রমণ দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। এসব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ভ্রমণ করার ইচ্ছে থাকলেও কিছু মানুষ ভ্রমণ করতে পারে না অর্থনৈতিক কারণে। তাই বলে কি ভ্রমণ করবেন না তা কি হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

একটা প্রবাদ আছে ‘যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন।’ তাই টাকা নেই বলে, বাড়িতে হাত গুটিয়ে বসে থাকব তা হতে পারে না। জ্ঞান অনুসন্ধানের ইচ্ছে থাকলে বাড়ির কাছেও ভ্রমণের জায়গা থাকে অহরহ। এতক্ষণে যা কিছু বলতেছি তা হয়তো ইতোমধ্যে বুঝা গেল। দূরে না পারলেও বাড়ির কাছাকাছি ভ্রমণ করতে হবে। ভ্রমণের স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত খুঁটিনাটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে হয়। আমিও বন্ধুদের সাথে ভ্রমণের স্থান নির্বাচন করি খুব কাছাকাছি জায়গায়। যেখানে অল্প খরচে কিছু বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

জয়পুরহাট সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বন্ধুবান্ধবীরা মিলে জয়পুরহাট জেলার অভ্যন্তরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ভ্রমণের স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। জায়গায় নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত। এটাও বুঝা গেল প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তির বিভিন্ন মতামত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই সকল মতকে সম্মান রেখে জায়গাটি বাছাই করা হয়েছে। জয়পুরহাট শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জে সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার কেন্দ্র।

বিজ্ঞাপন

ভ্রমণে যাওয়ার দিনেও অনেক বন্ধু-বান্ধবীর চোখ কপালে উঠেছে। কেউ কেউ কথা চেপে রাখতে না পেরে বলেই দিল, মুরগির খামার কোনো ভ্রমণের জায়গায় হল? কেউ তাচ্ছিল্য করে বলে, খেয়ে কাজ নেই, আমারা যাচ্ছি মশা মাছি তাড়াতে। বন্ধুদের মন্তব্য গুলো মাথার উপর গিজগিজ করছে। তাদের কেমন করে বুঝাই আনন্দ উপভোগ নিজের কাছে। আর অপরূপ সৌন্দর্য্যের আধার বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত যে কোনো স্থানে ভ্রমণ করলে কিছু না কিছু জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব।

সব উড়ো কথা উড়িয়ে দিয়ে গত ২৫ আগস্ট রোজ শুক্রবার সকাল ১০ টায় কলেজ ক্যাম্পাসে বন্ধুবান্ধবীরা উপস্থিত হই। আমাদের যাত্রার জন্য দুইটা বাস নিয়ে আসা হলো। সকলের তাড়াহুড়ো চল গাড়িতে উঠতে হবে। অনেক বন্ধুর ডাক হাক। বন্ধু রাশেদ চলে আসো আমার সীটে বস। বন্ধু মানে সহজ সরল আনন্দ করার কেন্দ্র। বন্ধু মানে আকাশ সমান ভালোবাসার চাদর। বন্ধু মানে হাসি কান্না, সুখ দুঃখের গল্প। আমার বন্ধু হলো পুরো কলেজ। কলেজে এসে জানতে পেরেছি শিক্ষার জন্য এসো, সেবার জন্য বেড়িয়ে যাও। ফলে সেবামূলক মনোভাব নিয়ে বন্ধুদের সাথে পথ চলি। পথে চলতে গিয়ে অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হয়।

বন্ধুর তালিকার মধ্যে শিপন দেবনাথ, জাহিদ হাসান, আজম, মাহবুদ, মজনু, রুহুল, ইউসুফ, রাহিদুল, মৃদুল, মাসুম, আলতাফ, হুমায়ুন, আসাদুজ্জামান, আদম, রেজওয়ান, মিনহাজুল, ওয়াদুদ, নাজমুনাহার, আয়শা, তমালিকা ও বর্ণ, ঐশী, কুসুম কলি, বৃষ্টি, সিনথিয়া, মুক্তাসহ আরও অনেকেই আছে। তাদের প্রত্যেকের ভালোবাসায় মুগ্ধ। কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ১০ টা ৩০ মিনিটে আমাদের গাড়ি ছাড়লো। ইট-পাথরের পাঁকা রাস্তায় মাঝে মাঝে ভাঙায় বাসের গতি কমে দেয় বাসচালক। তখন আলতো করে সামনের দিকে ঝুঁকে যায় সবাই। এ দিকে কালো মেঘের হালকা বৃষ্টিতে বেলা ১১ টার পরে খামারে পৌঁছে যাই।

খামার ঘুরে সোনালী মুরগি, রেড আইলান বা আর আই আর, ফাওমি, রেড শেভার মুরগিসহ নানা জাতের মুরগির উৎপাদন, পরিচর্যা, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেন খামারের কতৃপক্ষ। জয়পুরহাটের জামালগঞ্জে সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে গিয়ে বুঝা গেল ‘সম্ভাবনাময় জয়পুরহাটের সোনালী মুরগি নানা সংকটে জরাজীর্ণ। সংকট থেকে কবে বেড়িয়ে আসবে তা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা ভালো বলতে পারবে। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার বড় একটি সম্ভবনাময় প্রতিষ্ঠান।

এখানেই সম্ভব শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মস্থান সৃষ্টি করা কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই প্রতিষ্ঠানটি ধুঁকে ধুঁকে পড়ে আছে। কবে শুভবুদ্ধির উদয় হবে। নতুন একটা সূর্য উঠবে? বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের অবস্থা হচ্ছে সবাই সার্টিফিকেটধারী বিএ, এমএ পাস। তবে দুঃখের বিষয় পুঁথিগত বিদ্যা ছাড়া এদের কোন বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান নেই।

প্রতি বছর নতুন করে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে তাদের নিয়ে ভাবতে হবে। শিক্ষিত বেকারদের মাছের চাষ, হাঁস-মুরগির খামার, পশুপালন, ফলের চাষ, ড্রয়িং, গ্রাফিকস ডিজাইন, পোল্ট্রি ফার্ম, ডেইরি ফার্ম, বুটিকশিল্প, কম্পিউটার ট্রেনিং অ্যান্ড সার্ভিসিং, মোবাইল সার্ভিসিং, সেলাই, ইলেকট্রনিক সামগ্রী সার্ভিসিং, সেলুন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, হস্তশিল্প, কাঠের কাজ, বেতের কাজ, বাঁশের কাজ, লেদ মেশিন স্থাপন, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ, হোটেলসংক্রান্ত ট্রেনিং, চুলকাটার ট্রেনিং, দর্জি, কলকারখানার কাজ, সেলসম্যানশিপ ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

সব আলোচনা, গবেষণা শেষে মুরগির খামার পরিদর্শন করে। ভ্রমণকারী বন্ধুদের মাঝে কারিগরি মনোভাব তৈরি হয়েছে। এর পর কয়েকজন বন্ধুবান্ধবী মিলে গ্রুপ ভিত্তিক ভাবে ছবি তুলে স্মৃতির পাতায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়। তাই ভ্রমণ শুধু আনন্দ উপভোগের জায়গায় নয় কিছু কিছু ভ্রমণ মানুষের চিন্তার বিকাশ ঘটায়। নিজেকে চিনতে শিখে। প্রকৃতিকে উপলব্ধি করতে পারে। দুপুরের দিকে আমরা সবাই কলেজ ক্যাম্পাসে চলে আসি। খুব অল্প সময়ে জীবনের অসাধারণ এক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক

সারাবাংলা/এজেডএস

ভ্রমণে জ্ঞান জ্ঞানই শক্তি রাশেদুজ্জামান রাশেদ

বিজ্ঞাপন

শেষ কবে এতটা নিচে ছিলেন কোহলি?
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৪৪

মুম্বাই যাচ্ছেন শাকিব খান
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৩৫

আরো

সম্পর্কিত খবর