গাছের উপর এতো অত্যাচার কেন
১১ জুলাই ২০২৩ ১৩:৩৫ | আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৩ ১৪:১৬
কদিন আগেও খরতাপ দাহ রোদ থেকে বাঁচার জন্য দেশের মানুষ একটু শীতল হাওয়া, একটু অক্সিজেনের জন্য কতো হাঁসফাঁস করে ফিরেছে। এক একটা গাছ মানে এক একটা অক্সিজেনের ভান্ডার। চট্টগ্রাম নগরীতে দিন দিন গাছ বিলুপ্তের পথে। সরকারী বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে নির্বিচারে গাছ কাটার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরে একসময় বড়ো বড়ো পাখুড় গাছ, বট, রেইনট্রি,কদম, তুলা, নিম, বাদাম গাছ ছিলো এখন তা দেখা মিলে না। নগরীর পার্কগুলো বৃক্ষ শুন্য হয়ে পড়ছে। তাল গাছ বন্ধু বৃক্ষ। বজ্রপাতের প্রাণহানি কমাতে তালগাছ লাগানো পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে সরকারের দুর্যোগ মন্ত্রণালয়। তালগাছ রাস্তার পাশে প্রাকৃতিক শোভা বৃদ্ধি করে। তাল গাছের ডালে বাবুই পাখির দুলে এখন শুধু বইয়ের পাতায় আছে বাস্তাবে দেখা মিলে না। তালগাছ নেই বাবুই পাখির বাসা এখন চোখে পড়ে না। বিদ্যুত বিভাগ, ওয়াশা, সড়ক ও জনপদ কে দেখা যায় বিদ্যুতের লাইন টানার নামে কিংবা সড়ক প্রশস্ত করার নামে রাস্তা কুড়াকুরি করে বর্ষিয়ান গাছগুলোর উপর চড়াও হয়। যে বৃক্ষটি বিনামুল্য অক্সিজেন দেয় তার কথা নিমিষেভুলে যায় কি নিমুক হারাম মানুষ। খুব অবাক লেগেছে পটুয়াখালি জেলার কলাপাড়ায় গ্রামীন সড়ক নির্মাণের সময় ৩০টি তাল গাছ কেটে সাবাড় করেছে। এজন্য হাইকোট নির্দেশনা দিয়েছেন অনিবার্য প্রয়োজনে একটি গাছ কাটলে ঐ গাছের পরিবর্তে ১০টি গাছ লাগাবে। এবং আগে গাছ লাগাতে হবে তারপর কাটবে। সম্প্রতি টাইঙ্গাইলেও সড়কও জনপদ বিভাগ জন্য বেশ কিছু বর্ষিয়ান গাছ কেটে ফেলেছে। কেনো নির্বাচারে বৃক্ষ হত্যা চলছে।
চট্টগ্রাম সরকারী কলেজের মুল ফটকের AK (Acquired Knowledge) নকশাটি ও চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ শিল্পী সবিহ্ উল আলমের করা। বর্তমানে ফটকটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে) ফটকটির নকশা করার সময় প্রকৃতিপ্রেমী শিল্পী প্রফেসর সবিহ্ উল আলম বর্ষিয়ান রেইন ট্রিকে বাঁচানোর জন্য নান্দনিক কলেজের গেইটের নকশাটি সরু করেছিলেন। অথচ বছর দুয়েক আগে দৃষ্টিনন্দন গেইটটি ভেঙ্গে নতুন গেইট করার জন্য বর্ষিয়ান রেইনট্রিগুলো কেটে ফেলেছে। ইচ্ছে করলে গাছগুলো বাঁচাতে পারতো। চট্টগ্রাম শহর থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে পাখিডাকা ছায়াসুনিবিড় রাস্তার দুপাশে কিছু বর্ষিয়ান গাছ ছিলো। গাড়িতে করে যাওয়ার সময় মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করতাম গাছের শোভা। রাস্তা প্রশস্ত করতে গিয়ে গাছগুলো উপড়ে ফেলা হয়েছে। যে যার ইচ্ছেমতো গাছের ডাল-পালা ভেঙ্গে নিয়ে যায়। গাছের শরীরে মাশাআল্লাহ পেরেকের শেষ নেই। গাছের উপর ব্যানার ফ্যাস্টুন, লাগানোর জন্য দা-বটি, চাকু কুন্তি-কোড়াল এসবের কোপ নিয়মিত পড়ছে। দেখলে মনে হয় প্রতিনিয়ত যেনো বৃক্ষরাজী ধর্ষিত হচ্ছে। অনেকে দেখা যায় লাইন ধরে গাছের নীচে বসে দিনদুপুরে জলবিয়োগ করে, লজ্জা সরমের বালাই নেই। নগরীর বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় গাছের নীচে ময়লার বার্গার। এমনভাবে ময়লা আবর্জনা ছুড়ে মারে মনে হয় গাছকে ময়লা খেতে দিচ্ছে। গাছ যদি কথা বলতে পারতো, প্রতিদিন গাছ কেখোদের বিরুদ্ধে থানায় শতো শতো অভিযোগ/ মামলা হতো। গাছের অভিযোগ শুনে পুলিশও বিরক্ত হতো। যতো অত্যাচার সব গাছের উপর। এসবের মাঝেও ভালো সংবাদ চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন কদমতলী, বটতলী, আমবাগান, নিমতলাসহ গাছে নামে যে এলাকায় রয়েছে সেই নামের সঙ্গে মিল রেখে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে সত্যি প্রশংসার দাবী রাখেন চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসন।
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে উন্নয়ন কাজ করার সময় বৃক্ষকে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় সে চিন্তা করে কাজ করে। অথচ আমাদের দেশে উন্নয়নের নামে কাজ শুরু করার আগে মাশাল্লাহ গাছের উপর মারো কোপ হেইয়ু জোড়ে কাটো হেইয়ু। যতো তারাতারি গাছ কেটে রাতের আঁধারে চুরি করে বিক্রি করা যায় সে দান্দায় থাকেন একটি স্বার্থানেষীমহল। উন্নয়নের নামে গাছ বিক্রির টাকা অ-ভদ্র দলদাসদের পকেটে না হয় সরকারী আমলাদের পকেটে যায়। পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার সত্য কথা বলেছেন, “বৃক্ষ বাঁচিয়ে উন্নয়নের চিন্তা এ দেশে নেই”। তাঁকে ধন্যবাদ তিনি যে বিষয়টি গভীরভাবে অনুধাবন করেছেন। যারা গাছের উপর নির্বিচারে অত্যাচার করে বৃক্ষ নিধন করে এদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হওয়া উচিত।
সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মুর্তিরমতো বর্ষিয়ান পাখুড় এবং বট গাছগুলোর নিচে গেলে কি প্রশান্তি শীতল হাওয়া। এসব গাছের ফলগুলো পাখিদের খুব প্রিয় খাবার। তাছাড়া এসব গাছে নানা রকমের পাখির অভয়ারণ্য বিশেষ করে, টিয়া, ময়না, বুলবুল, বট ঘুঘু, চিঁহি, শালিকসহ নানারকমের পাখির আবাসস্থল বর্ষিয়ান গাছগুলো। গাছ সংকটের কারণে অনেক বন্য প্রাণী ও বিহঙ্গ আজ বিলুপ্তের পথে।
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট মনিষী প্রিয় নবিজি হযরতম মুহাম্মদ(সাঃ) বলেছেন, “যদি তুমি জানো পরের দিনই রোজ কেয়ামত, তারপরেও একটি গাছ লাগিও”। গাছ নিয়ে বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “গাছগুলি যে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ওদের মধ্যে যেন একটা না জানা ভাব আছে সেই ভাবনায় বর্ষার মেঘের ছায়ায় নিবিড়ে শীতের সকালের রোদ্রোজ্জ্বল হয়ে উঠে। সেই না জানা ভাবনার ভাষায় কচি পাতায় ওদের ডালে ডালে বকুনি জাগে, গান ওঠে ফুলের মঞ্জুরিতে”।
প্রকৃতি আজ বিপন্ন। প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। পাখিডাকা ছায়া-ঘেরা সবুজ গ্রামও হারিয়ে যেতে বসেছে। বৃক্ষ খেকোদের থামানো দরকার। প্রতিনিয়ত যেভাবে গাছের উপর অত্যাচার চলছে দিনদুপুরে গাছ সাবাড় করে ফেলছে এবং রাতের অন্ধকারে বন কেটে উজাড় করছে এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। গাছ কর্তনের ফলে প্রকৃতি যেভাবে ফোঁসে উঠছে এটার ফল কিন্তু আমরা পাচ্ছি। দিন দিন বেড়ে চলেছে তাপদাহ, জলোচ্ছাস, ভুমিকম্প, বন্যা, বজ্রপাতসহ মহামারী পিছু ছাড়ছে না।
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য হলো গাছ। মনকে ভালো রাখতে প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হয়। এখন গাছ লাগানোর শ্রেষ্ট সময়। আসুন গাছের উপর অত্যাচার বন্ধ করে চট্টগ্রাম নগরীকে সবুজায়ন করতে সবাই মিলে বেশি করে গাছ লাগাই পরিবেশ বাঁচাই।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই