Wednesday 01 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সম্পর্ক

রহমান মৃধা
২৪ আগস্ট ২০২২ ১১:৫৬

রক্তের সম্পর্কের আগের সম্পর্কটা হচ্ছে মনের সম্পর্ক। মনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে পরস্পর চেনা-জানার মধ্য দিয়ে যা আত্মার সম্পর্কে পরিণত হয় এবং আমরা হঠাৎ একে অপরের আত্মীয় হয়ে যাই। রক্তের সম্পর্ক কিছুটা ভিন্ন কারণ সে সম্পর্কে আত্মার প্রয়োজন নেই, কিছুটা ন্যাচারাল যা বাবা-মার যৌন সম্পর্কের মিলনের ফলে ঘটে। একই মাতৃগর্ভে এক বা একের অধিক ভাই-বোনের সৃষ্টি হয়। সেটা ছড়িয়ে পড়ে নানাভাবে যাকে পরে বলা হয় রক্তের সম্পর্ক। আমি জাজ করার জন্য নয় বরং আলোচনা এবং বিশ্লেষণের প্রয়োজনে আত্মা এবং রক্তের সম্পর্ক নিয়ে আমার ভাবনা থেকে কিছু তথ্য তুলে ধরব। বাবা-মা দুটো অত্যন্ত পরিচিত নাম। বাবা এবং মা দুজন ইনডিভিজুয়াল সাবজেক্ট এদের মধ্যে কোনো রক্তের সম্পর্ক ছিল না। এরা একে অপরের সঙ্গে পরিচয়ের মধ্যে সম্পর্ক গড়েছে এবং পরে পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি করেছে এবং জন্ম দিয়েছে সন্তানের যা রক্তের সম্পর্ক। রক্তের সম্পর্ক তৈরি করা লাগে না, এটা তৈরি হয়ে আসে। একে শুধু ধরে রাখা বা চর্চা করার নৈতিক দায়িত্ব আমাদের। এখন দেখা যাচ্ছে সেটা সঠিকভাবে আমরা মেইনটেইন্যান্স করতে ব্যর্থ হচ্ছি। কিন্তু মনের সম্পর্ক কিছুটা ভিন্ন, প্রথমত এটা তৈরি করতে হয় এবং সেটাকে সবসময় মেইনটেইন্যান্স করতে হয়।

বিজ্ঞাপন

আমি নিয়মিত পাঠকের থেকে ফিডব্যাক পেয়ে থাকি, বেশির ভাগ ফিডব্যাক প্রাসঙ্গিক নয় এবং দেখা যায় পাঠক তার নিজের সমস্যাকে কেন্দ্র করে সাহায্য চেয়ে আমাকে লেখে। সব সময় যে অর্থের সঙ্গে সম্পর্ক তা নয় মাঝে মধ্যে নানা বিষয়ের উপর যেমন ব্যক্তিগত বা লেখাপড়ার বিষয়, আর্থিক সাহায্য এবং কীভাবে বিদেশে আসা সম্ভব ইত্যাদি। যারা আমার কাছে সাহায্য চায় তাদের সঙ্গে আমার কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই, কিন্তু তাদের একটি ধারণা আমি নিশ্চয় কিছু একটা করতে পারবো। যেমন পরিচয় ছাড়া একজন পাঠক লিখেছেন ‘ভালো মনের মানুষের কাছে ছোট একটা আবেদন । স্যার, আলফ্রেডের ইতিহাস নিয়ে আপনি অনেক গর্ব করে লিখেছেন, তিনি বিশাল এক মহামানব, মানুষের জন্য তিনি অনেক অর্থ দান করে গিয়েছেন। সবাই যদি তার নিজের পরিবারের সদস্যদেরকে দান করে তাহলে তার ভাই-বোন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। আর সমস্ত পরিবারের উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন। এখন কথা হলো স্যার আমি নিজেই আমার সরকারি চাকরি জীবনে সব বেতন আমার ভাইয়ের পেছনে তার পড়াশোনার জন্য দান করেছি, আজ সে প্রতিষ্ঠিত। একটা বিষয়ে তার সাথে মনমালিন্য হলে গভীর টেনশনে আমার চাকরিটাই হারিয়ে অসহায় হয়ে গেলাম। এখন সেই ভাই তার বউকে নিয়ে ঢাকা শহরে সুখে বসবাস করছে আর আমি না পেলাম সংসার, না করলাম বিয়ে। ৩৭ বছর বয়সে একাকীত্ব জীবন পার করছি। কী লাভ হলো মানুষের জন্য ভাল কিছু করে? কই কোন মানুষ আমাকে তো সাহায্যে করতে আসে না? তবে আপনার লেখা পড়ে মনে হলো Alfred-এর মত মানুষ এখনো আছে তা না হলে কেউ এত গভীরভাবে নিজের দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য লিখত না। সুইডেন যেতে খুবই ইচ্ছা করে কিন্তু আপনি কি পারবেন স্যার মহামানব হয়ে আমাকে নিয়ে যেতে? সমস্ত টাকা আমি দেব আপনি শুধু প্রসেস করে দেবেন।’

বিজ্ঞাপন

ভদ্রলোকের লেখা পড়ে মনে হলো রক্তের সম্পর্কে ঘুণ লেগেছে, কারো ভালো উপদেশ এখন আর তার বিশ্বাস হয় না। এর ফলে আমাকে কিছুটা চাপ দিয়েছে তাকে সাহায্য করে যেন আমি প্রমাণ করি যে কথা আমি আমার আর্টিকেলে লিখেছি তা সঠিক। প্রথমত আমাদের জানতে হবে নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে আসতে কিছু নিয়ম রয়েছে, যখন দেখি নিয়মগুলো সঠিক আছে অবশ্যই সাহায্য করি দেশের মানুষদের। মহামানব হবার জন্য নয় দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসি তাই সাহায্য করি, কোন রকম এক্সপেক্টেশন ছাড়া। দ্বিতীয়ত আমার লিখার মূল উদ্দেশ্য ভালো কিছু শেয়ার করা, শিক্ষার যে মূল উদ্দেশ্যগুলো রয়েছে, সেটাকে প্রয়াগ করতে চেষ্টা করা।

যাইহোক এখন যে বিষয়টি নিয়ে লেখা সেটা হচ্ছে সম্পর্ক। রক্তের সম্পর্কে আমরা যা করি সেটা হয়তবা মনের সম্পর্কে সব সময় করিনে। তাছাড়া কিছু করে যদি বিনিময়ে কিছু প্রত্যাশা করি এবং যদি সেটা না পাই তখনই আমরা দুঃখ পাই, মর্মাহত হই ইত্যাদি। আমি আমাকে দিয়ে বিশ্লেষণ করি। আমি সাধারণত কারো জন্য কিছু করে তার বা তাদের থেকে ফিডব্যাক আশা বা তেমন কোন এক্সপেক্টেশন করিনে, যার ফলে দুঃখ বা কষ্ট আমাকে ঘিরে ধরে না। আমরা মূলত সব সম্পর্কে একটি কিছু আশা করি যেমন ভাই-বোনকে সাহায্য করি দায়িত্ব, কর্তব্য, স্নেহ ভালোবাসার কারণে, প্রেম করি কিছু পেতে, ধর্মীয় কাজ করি স্রষ্টার সান্নিধ্য পেতে, যাকিছু করিনা কেন বিনিময়ে কিছু পেতে চাই। এখন যদি পাওয়াটা না আসে সঠিক সময় তখন সম্পর্কে ঘুণ ধরে, হোক না সেটা রক্তের বা মনের। উচিত হবে সাহায্যের হাত বাড়ানো মানবতা থেকে বা সুযোগ আছে সাহায্য করার তাই করি, এই মন মানসিকতা নিয়ে।

আমাদের সম্পর্কে রয়েছে প্রতীক্ষা, রয়েছে অপেক্ষা, রয়েছে চাওয়া, রয়েছে পাওয়া। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে কি সম্পর্ক হচ্ছে দেওয়া নেওয়ার মিলনায়তন? এখানে শুধু নিতে নয় দিতেও হয়। বসে বসে যদি সেই শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় আর ভূপেন হাজারিকার গানের সুরে ভাবতে থাকি ‘একখানা মেঘ ভেসে এল আকাশে, একঝাঁক বুনো-হাঁস পথ হারালো, একা একা বসে আছি জানালা পাশে, সে কি আসে, যারে আমি বেসেছি ভালো’। হবে কি সম্পর্ক? সম্পর্ক মূলত অর্থ দিয়ে হয় না, ভালো এবং মধুময় সম্পর্কে থাকা দরকার ভালোবাসা, কারণ ভালোবাসায় রয়েছে শুধু ভালোবাসা।

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

মুক্তমত রহমান মৃধা সম্পর্ক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর