মুজিব ফিরে আসুক আমাদের আচরণে, পথ চলায়
১৭ আগস্ট ২০২২ ১৩:২৪
বাংলাদেশ নামক জাতি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এদেশ এমনি এমনি আজকের অবস্থানে পৌঁছায়নি। বহু ত্যাগ, তিতিক্ষা ও লড়াই সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশ। পথ চলায় ও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যে মানুষটি সবচেয়ে বেশী সাহসিকতা ও দৃষ্টান্তের মাধ্যম বিশ্বকে জানান দিয়েছেন ‘আমরাও পারি’- তিনি বঙ্গবন্ধু। দূর্ভাগ্যবশত তার দেখানো পথে রাষ্ট্রযন্ত্র চললেও মানুষ হিসেবে আমরা দিনে দিনে বিচ্যুত হচ্ছি তার দেখানো পথ থেকে।
মুজিব, বাঙালির হৃদয় গহ্বরে আটকে থাকা এক শুদ্ধ চেতনার পরিপূর্ণ সংমিশ্রণ। বাঙালির কাছে মুজিব মানে এক সর্বশ্রেষ্ঠ অনুভূতি, অন্যায়কে পদানত করে ন্যায়ের পথে এগোনোর শক্তি। সময়ের স্রোতে সব হারিয়ে যায়। তবে হ্যাঁ, মুছে ফেলতে চেয়েও হারিয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি মুজিবের নাম। দূর্ভাগ্যবশত তার নাম মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি, তবে চলছে তার নামকে অমূল্যায়িত করার অবিরাম নেতিবাচক সংগ্রাম। যার ফলশ্রুতিতে অনুভূতির বঙ্গবন্ধু বাস্তবতায় এসে কতিপয় স্বার্থপরদের কাছে বদলে যাচ্ছে দিনদিন। যা কিনা খুবই উদ্বেগজনক এমনকি লজ্জাজনক গোটা বাঙালির জন্য।
তথাকথিত মাইম্যান সংস্কৃতি, অপশক্তিকে নিজ স্বার্থে মূল্যায়ন দিনে দিনে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে উঠেছে। যাদের পূ্র্বসূরীরা চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক অনেক ক্ষেত্রে তারাও আজ জয়বাংলা স্লোগানে মুখর করে তুলছে রাজপথ। অনেক ক্ষেত্রে সৃষ্টি হচ্ছে লাগামহীন দূর্নীতির নমুনা। যা অত্যন্ত হতাশা। সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের সকল সিস্টেম যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে পূর্বের মাত্রাতিরিক্ত দূর্নীতির রেকর্ড গুলো থেকে বাংলাদেশ বের হচ্ছে এটি সত্যি, তবে পাপ ছাড়ে না বাপকেও প্রবাদের মত সংক্রমনটা আসলে বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। দেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি মুজিবের দেখানো বা স্বপ্নের মত একে একে সত্যি করা হচ্ছে কিন্তু অপশক্তির দৌরাত্ম তার মাঝেও রয়ে যাচ্ছে। যাকে বলা যায় ‘সর্ষে ফুলে ভূতের মত’। দেখা যাবে নিজ স্বার্থে সুযোগসন্ধানী অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে শুধুমাত্র আখের গোছানোর ধান্দায়। আর এদিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে মুজিব আদর্শকে। অতিমাত্রায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নোংরা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অনেক দুঃসময়ের নেতারাও বাধ্য হয় বিপথগামীদের দলে টেনে নিজের শক্তিমত্তা বাড়াতে। যারা বিরোধিতা করে তাদেরকে আরেক নোংরা সিস্টেমের মাধ্যমে সরিয়ে দেয়া হয় এমনভাবে যেন দলে থেকেও অকার্যকর অবস্থায় থাকে। ফলশ্রুতিতে অভিমানকে বরণ করে তারা বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেয় হতাশায়। অথচ, মুজিবের প্রকৃত আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে রাজপথে অগ্নিপুত্রের যাদের আবির্ভাব দমন করতে পারতো অপশক্তির অপযাত্রা। রাজনীতিতে ফিরতো সুস্থতার ধারা, রাজনীতি হতো মেধাবীবৃত্তিক কর্মকান্ডের প্রকৃত ঠিকানা।
অনুপ্রবেশকারীদের গলাউঁচানোতে তারা নিজের অবস্থান হারাতে বসে। দুঃসময়ে জীবন বাজি রেখে লড়াই করার প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হয় তাদেরই হাতে যারা কিনা দুঃসময়ের ছিল তাদের উল্টো দিকে, তাদের জন্য জীবন নাশকারী হয়ে। এসব নোংরা হিসেবের বেড়াজালে অনুপ্রবেশকারীরা মুখে মুখে আদর্শ নিয়ে খুব সোচ্চার। মজার বিষয় হলো চূড়ান্ত আদর্শিক পরিচয় দেয়ার সময় যখন ঘনীভূত হয় ঠিক তখনই তাদের রূপটা সামনে চলে আসে স্পষ্টভাবে তখন তারা বুঝিয়ে দেয় যে কখনোই তারা মুজিব আদর্শের ছিল না, অনুভূতিতে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করেনি।
অনুভূতির বঙ্গবন্ধু সর্বদাই বাঙালির অবিনাশী চেতনার উত্তরাধিকার। বাস্তবতা যে ভিন্ন তা আগেই উল্লেখ করেছি। বর্তমান সময়ে সেই দূরাবস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে বেশ জোড়ালো ভাবে। রাষ্ট্রতন্ত্র কিংবা মতাদর্শ গত অবস্থা সুপথে থাকলেও তৃণমূল পর্যায়ে শুরু হয়েছে সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র, দূর্নীতির সীমাহীন মহড়া, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের অভাবটাও পরীলক্ষিত হচ্ছে তীব্র। ‘সংকটময় অবস্থা’ নিশ্চয়ই দৃশ্যমান। পিতা মুজিবের হাতে গড়া সংগঠনগুলো তৃনমূল পর্যায়ে সম্মুখীন হচ্ছে দিনে দিনে ভয়ংকর অবস্থার। মাই ম্যান সংস্কৃতি নির্ভর এক ধরনের সীমাবদ্ধ রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত প্রশ্নের মুখোমুখি করে তুলছে নীতি নির্ধারকদের। এসবের জন্মদাতা কারা? সেই প্রশ্নের উত্তরো এদেশের মানুষের ভালো করেই জানা। ৭৫ পরবর্তী সময়ে ক্ষমতার লালসায় যারা বাংলাদেশকে পরিণত করেছে অন্ধকার পল্লিতে, কলঙ্কিত করেছে বিশ্বের বুকে তারাই জন্ম দিয়েছে এ দৃশ্যপটের। পার্থক্য একটাই। সীমাবদ্ধ এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি তখন ছিল সীমাবদ্ধ জায়গায় আর এখন সার্বিকভাবে। স্বভাবতই মিডিয়ার যুগ তাই প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খায় প্রতিনিয়ত। ভাবতে পারেন তীব্র আদর্শিক বিরোধ যাদের সাথে তাদের মাধ্যমে কিভাবে গ্রাস হলো পিতা মুজিবের হাতে গড়া আবাসস্থলগুলো? উত্তরটা এখানেও জলের মতোই সোজা। প্রতিযোগিতার রাজনৈতিক বাজারে সবাই-ই চায় নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে হোক সেটা অন্য মতাদর্শের লোক দিয়ে না হয় ভিন্ন ভাবে।
প্রকৃতপক্ষে, এই দূরাবস্থার আরেকটি বড় কারণ মেধাবীদের রাজনৈতিক বিমুখতা। ‘আই হেট পলিটিক্স’টেনডেনসির সুযোগে অশিক্ষিত, টোকাইদের হাতে চলে যাচ্ছে রাজনীতি। সে অর্থে এরূপ অবস্থা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তবে উত্তোরণের জন্য নিশ্চয়ই মেধাবী ও বুদ্ধিমান ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেই এগিয়ে আসতে হবে। না হয় সুস্থতা আনয়ন কখনোই সম্ভব নয়। রাজনীতি হোক বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রকৃত মুজিব আদর্শের। বাংলাদেশ হোক চিরজীবি।
লেখক: শিক্ষার্থী
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
অনন্য প্রতীক রাউত মুক্তমত মুজিব ফিরে আসুক আমাদের আচরণে- পথ চলায়