বোরিং নাকি বুমেরাং!
১২ মে ২০২১ ১২:৫৫ | আপডেট: ১৩ মে ২০২১ ২২:৪৫
সামনের সপ্তাহেই তো ঈদ। তাই না? আমাদের লক ডাউন চালু। ইন্ডিয়ার কোভিড নিয়ে কুপোকাৎ অবস্হা। সেই দৃশ্য নিউজে দেখেও বাঙালির ঈদ বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়া। এরই মধ্যে ইন্ডিয়ার কোভিড ‘সিলড্ বর্ডার’ ডিঙিয়ে আমাদের দেশে প্রবেশেও করে ফেললো ভিসা ছাড়াই। বসুন্ধরা কি দারুণভাবে গার্লফ্রন্ডের আত্মহত্যা ম্যানেজ করে ফেললো!
কত ঘটনা! রোজা রেখে, নামাজ পড়ে, তারাবী পড়ে, সরকারি আদেশে (কিছুটা ভয় থেকে) বাসায় থেকেও গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে বেশ ‘এন্টারটেইনড’ হচ্ছি। পাগলের সুখ মনে মনে ধরনের বিষয় আর কি!
এদিকে বিদেশও পিছিয়ে নেই। বিদেশী চ্যানেলগুলি মেগান মার্কেল ভিকটিম না ভ্যাম্প এই ডিবেট শেষ করতে না করতেই ‘গেটস’ দম্পত্তি বোমা ফাটালো টুইটারে তাদের ডিভোর্সের খবর দিয়ে। আর যাই কই। বাংলাদেশের ফেসবুকবাসি পেয়ে গেল নতুন উপকরণ। ফেসবুকের ট্রলের বন্যা। আরে, আগে থামো বাঙালি। বিল গেটসকে নিয়ে সমানে ট্রল বানিয়েই চলেছো? তোমাদের সমস্যা কি? ২৭ বছর সংসার তো করলো। এখন তো একটু রেহাই দাও। ‘গেটস দম্পত্তি’র ডিভোর্স আমাদের শাকিব খান-অপু বিশ্বাসের ডিভোর্স না যে ট্রল বানাবে। খোদ আমেরিকাই চিন্তায় আছে এই বিষয় নিয়ে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিলিয়ন ডলার স্পন্সর করা দম্পত্তি চাইলেই বিশ্বের অনেক কিছুই হেলিয়ে দিতে পারে। কাজেই ট্রল করার আগে কিছুটা ভেবেচিন্তে। ওদের কাছে আমরা পিপড়া বই আর কিছুই না। তারপরেও এই দম্পত্তি তাদের যৌথ ফাউন্ডেশন থেকে সমানে কাজ করে যাচ্ছে আমাদের মতো পিপড়াদের জন্যই। মেলিন্ডা নীতা আম্বানী নয় যে হীরা খচিত মাস্ক পরে ঘুরে বেড়ায়। বা প্লাস্টিক সার্জারির পর সার্জারি করে ম্যানিকুইন সেজে বসে থাকে। মেলিন্ডা গেটস টানা কয়েক বছর ধরে ‘ফোর্বস’ পত্রিকার বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান নারীদের একজন যার এক ফুঁ তে স্বয়ং মোদীজ্বীও হেলতে পারে!
এদিকে আজকাল টুইটার নিজেই বেশ খবরে আসছে। তারা বেশ ব্যস্ত। টুইটারে ট্রাম্প নিষিদ্ধ হওয়ার পর কিছুদিন আগে আমাদের অনেকের প্রিয় নায়িকা কঙ্গনা রানাওয়াত সারা জীবনের জন্য টুইটারে নিষিদ্ধ হয়ে গেল। ওদিকে মুকেশ আম্বানির ভাতিজা। মানে অনিল আম্বানীর সুপুত্র টুইটার তোলপাড় করে ফেলছে চাচ্চু এবং সরকারের ব্যান্ড বাজিয়ে। মনে হয় তারও সময় ঘনিয়ে আসছে নিষিদ্ধ হওয়ার।
এদিকে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানে কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে হাহাকার। আর এদিকে ৩৫ শতাংশ আমেরিকান ঘোষণা দিয়েছে তারা ভ্যাকসিনই নেবে না। ৮ শতাংশ আমেরিকান প্রথম ডোজ নিয়ে গায়েব। বেচারা বাইডেন অর্ডার দিয়েছে ঔগুলারে খুজেঁ বের করে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার জন্য। আমেরিকায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার পারমিশন নাই। আর কানাডায় প্রধানমন্ত্রি ট্রুডো সস্ত্রীক অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দিয়ে আসল। কই যাই?
আবার কোভিশিল্ড তৈরির আসল মানুষ সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদর পুনেওয়ালা মন্ত্রী-মহামন্ত্রীদের থেকে থ্রেটের পর থ্রেট পেয়ে পালিয়ে লন্ডন হাজির। ভারতে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন তৈরির কি অবস্থা কে জানে! টিভি নিউজে দেখছি ভারতকে বাচাঁতে রাশিয়া স্পুটনিক ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে। আমেরিকা বসে থাকবে? ওরা ওদের স্টক লটের অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন ভারতে পাঠিয়েছে। আমি কিন্তু টিভি নিউজে দুটো ঘটনাই নিজের চোখে দেখলাম। ভারত তার দেওয়া কথা অনুযায়ী আমাদের কোভিশিল্ড না দিয়ে নির্বাচনে জেতার জন্য হুট করে ‘excited’ মোদী ১৮এর অধিক বয়সী ভারতীয়দের ভ্যাকসিন দিতে বলে ফেললো। এখানে একটু হেসে নিতে পারি। কারণ, ভারতে আমার বন্ধুদের কথা অনুযায়ী ওদের অনেকের বৃদ্ধ বাবা-মা’রই ভ্যাকসিন নেওয়া হয় নি এখনো। বিদেশীরা দেখিয়েই যাচ্ছে- ভারতে ভ্যাকসিন সেন্টারগুলি থেকে কত বয়স্ক মানুষ ভ্যাকসিন গ্রহণ ছাড়াই ফিরছে প্রতিদিন। অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মারা যাওয়া তো পুরানো খবর। বড় বড় ডাক্তাররা সেখানে ইমোশনাল ব্রেকডাউন করছে। এটা লেটেস্ট দেখছি। এই পর্যন্ত শুনলাম সাড়ে ৪ লাখের উপর মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তাই বলি কি, বাইডেন স্যার তাদের প্লেনটা একটু ডাইভার্ট করে বাংলাদেশে তাদের স্টক-লট অ্যাস্ট্রাজেনেকা পাঠালে মন্দ কি হয়? তার সাথে আমাদের সরকার অক্সিজেন মজুদ আর অস্থায়ী হাসপাতাল বানাতে শুরু করুক। যে হারে বাঙালি হতচ্ছাড়াগুলি শপিংয়ে ব্যস্ত। খুব বেশি দিন নাই, ঈদের জামা পরে নিজেরাও মরবে। আর আমরা যারা ঘরে তাদেরও মারবে! বাই দ্য ওয়ে- একদিকে শুনি কাজ বন্ধ কারও হাতে টাকা নাই। সরকারি কর্মকর্তারা ‘ঘুষ’ খেতে না পেয়ে মানসিক অবসাদ বা বিকারগ্রস্ত (ভাই এটা খবরে আসছে আমার বানানো না)। তাহলে শপিং এর টাকা কি ভূতে যোগাচ্ছে?
আমার ডাবল ডোজ ভ্যাকসিন নেয়ার পরই শুনলাম আমার বন্ধুর বাবা ডাবল ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পর গত সপ্তাহে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। হায় রাম করি কি! (হায় রাম কারণ ভ্যাকসিন রামের দেশ থেকেই তো আসলো)। কানাডা থেকে বড় ভাই বললো- খবরদার রাশান স্পুটনিক বা চাইনিজ সিনোভ্যাক নিবি না। মানে ভ্যাকসিনের নাম আর কি! যতই বলি আমি অলরেডি নিয়ে নিয়েছি এবং তোমার আগেই। কে শোনে কার কথা? প্রবাসি বাঙালিরা বোধহয় এমনি হয়। যেমন আমার ভাইয়েরা। সুযোগ পেলেই আমাদের সবদিক থেকে ছোট করতে থাকে। মানে আমাকেতো বটেই।
এর মধ্যে সবচেয়ে মনযোগ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে নেটফ্লিক্স। আহ নেটফ্লিক্সকে ভালবাসি। ২০২১ এই কোভিডের মধ্য দারুণ সব ছবি, সিরিজ, নতুন সিজন বানিয়েই যাচ্ছে একনিষ্ঠভাবে। হাউ সুইট! একদল কোভিডে মরছে। কিন্তু বাকিদের ও বিনোদন লাগবে নাকি! কি একাগ্রতা! আমার তো অনেকগুলিই দারুণ লেগেছে। যেমন- হিন্দীতে ত্রিভঙ্গ, পাগলাইট, ইজ লাভ এনাফ স্যার, বোম্বে বেগমস, আজীব দাস্তানস্, পরিনীতি চোপড়ার A Girl on the Train.
Searching For Sheela (রজনীশের স্ক্যান্ডালাস পার্টনার) দেখবো ভেবেছিলাম। কিন্তু ঐ করন জোহরের চেহারা দেখেই অফ করে দিলাম। যত্তসব!
সেলিব্রিটিরাও বিনোদন দিতে পিছিয়ে নাই। যেমন- প্রিয়াংকা চোপড়া জোনাস ঘরে বসেই মেমোয়ার লিখে ফেললো “Unfinished”. একটি পয়সাও খরচ হয় নি। বরং বইটি লিখে কামিয়েছে প্রচুর। বইটি প্রকাশনা Penguin Random এবং ইতোমধ্যে The New York Times Best Seller List এ পৌছে গেছে। বাহ্! এত টাকা আর সুখ্যাতি দিয়ে করবেটা কি মেয়েটা! প্রিয়াংকা’র মতোই আরেকজনও জানে কিভাবে অর্থ এবং মনযোগ পাওয়া যায়। সে হচ্ছে মেগান মার্কেল। প্রথমত অপরাহকে এক সাক্ষাৎকার দিয়ে বিশ্বজুড়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছেন না। তার চোখের পানি নকল না আসল, তার গল্পগুলি কতখানি হাস্যকর সেসব বিশ্লেষণ শেষ না হতেই মেগানও ঘোষনা দিয়েছে- তিনি বই লিখছেন বাচ্চাদের নিয়ে নাম ‘The Bench’. ব্রিটিশ রয়্যাল পরিবার থেকে সর্ম্পকচুত্য করলেও লেখকের জায়গায় নাম লিখেছে- মেগান মার্কেল দ্য ডাচেস অব সাসেক্স! হাততালি তার জন্য। বইটি বের হবে জুনে।
ভারতে মানুষ কোভিডে মরছে। আবার চার্টাড প্লেনের ব্যবসা ৪০ শতাংশ বেড়েছে। বসুন্ধরা একটা মাত্র চার্টাড প্লেন ভাড়া করে দেশান্তরি হয়েছে দেখে আমাদের গা জ্বলছে। আর ওদিকে ভারতে কোটিপতিরা এবং চলচ্চিত্র তারকারা সমানে দেশ ছাড়ছে চার্টাড প্লেন ভাড়া করে। গন্তব্য মালদ্বীপ বা মরিশাশ বা দুবাই। দেশের এমন পরিস্থিতি ওদের একদমই বরদাস্ত হচ্ছে না।
এসব দেখেশুনে আমি ভাবি, বিশ্বজুড়ে এই কোভিড পরিস্থিতি আমাদের জন্য ‘বোরিং’ নাকি উল্টো বিনোদনেরই যোগান দিয়ে যাচ্ছে। একটু চোখ-কান খোলা রাখলে এমন বিনোদন আপনিও পেতে পারেন। কোভিডের মধ্যেই আসছে আরও একটি ঈদ। ঘরেই থাকুন, বিনোদিত হন।
সারাবাংলা/আরএফ
আদর পুনাওয়ালা করভী মিজান করোনা ভ্যাকসিন কোভিড ভ্যাকসিন সিরাম ইনস্টিটিউট