Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশকে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখবে ডেল্টা প্ল্যান


৫ জুলাই ২০২০ ২০:৪৬ | আপডেট: ৫ জুলাই ২০২০ ২১:০০

২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বন্যা, নদী ভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদী কৌশল হিসেবে আলোচিত ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। ‘ডেল্টা প্ল্যান’ নামে পরিচিত শত বছরের এ মহাপরিকল্পনার অধীনে আপাতত ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ৮০টি প্রকল্প নেবে সরকার।

তারমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে ২৩টি প্রকল্পের জন্য বিনিয়োগ করা হবে ৮৮ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। বরেন্দ্র এবং খরা-প্রবণ অঞ্চলের জন্য ৯টি প্রকল্পের আওতায় বিনিয়োগে হবে ১৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য ৬টি প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে ২ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য ৮ প্রকল্পের অনুকূলে ৫ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। নদী এবং মোহনা অঞ্চলে ৭টি প্রকল্পের অনুকূলে ৪৮ হাজার ২৬১ কোটি টাকা এবং নগরাঞ্চলের জন্য ১২টি প্রকল্পের অনুকূলে ৬৭ হাজার ১৫২ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রাক্কলন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘ডেল্টা কাউন্সিল’ গঠন করা হয়েছে। ১২ সদস্যের এই কাউন্সিল গঠন করে ১ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী এই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। পরিকল্পনামন্ত্রীকে কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান করা হয়েছে।

ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- কৃষিমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী। এছাড়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী, নৌমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী, পানিসম্পদমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে রয়েছেন। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্যকে এই কাউন্সিলের সদস্য সচিব করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এই কাউন্সিলকে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে নীতিনির্ধারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কৌশলগত পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিতে হবে। এছাড়া ডেল্টা প্ল্যান হালনাগাদকরণে দিকনির্দেশনা, এই প্ল্যানের বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রণয়নে এই কাউন্সিলকে নীতিনির্ধারণ ও নির্দেশনা এবং ডেল্টা সংগঠন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই কাউন্সিলকে দিকনির্দেশনা দিতে হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

আদেশ আরও বলা হয়েছে, কাউন্সিলকে বছরে ন্যূনতম একটি সভা করতে হবে। কাউন্সিল প্রয়োজনে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ এই কাউন্সিলকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।

বাংলাদেশ একটা ব-দ্বীপ। প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এ দেশকে এগিয়ে নিতে ডেল্টা প্লান ২১০০ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ আওয়ামী ‘৭৫ এ জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সপরিবারে হত্যার প্রায় ২১ বছর পরে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে। দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে চেষ্টা কাজ করেছে। এর আগে এই দলের আন্দোলন সংগ্রামেই প্রতিষ্ঠিত হয় সংসদীয় গণতন্ত্র। সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে সাথে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন।

এছাড়া কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করেন। এর মধ্যে দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প। ইনডিমিনিটি আইন বাতিল করে বিচার ব্যবস্থা পূর্ণগঠন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম শুরু, রাজনৈতিক হত্যা, বঙ্গবন্ধু ও তার সপরিবার, কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যাসহ সকল হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করেন।

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিরোধী দলে অবস্থানকালে আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন ও নেতৃত্বশূন্য করতে বেশ কয়েকবার মারণাঘাত চালায় ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট। ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষস্থানীয় সকল নেতা অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও ঝরে যায় অসংখ্য তাজা প্রাণ। ওয়ান-ইলেভেনের পর আবারও ঝড় আসে আওয়ামী লীগের ওপর। দীর্ঘ ১১ মাস কারাপ্রকোষ্ঠে বন্দী রেখেও বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া আওয়ামী লীগকে ভাঙ্গতে পারেনি নেপথ্যের কুশীলবরা। ২০০৮ সালে আবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একুশ শতকে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নেন। তারপর বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১৩,২৬০ মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন, ৫ কোটি মানুষকে মধ্যবিত্তে উন্নীতকরণ, ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড এবং ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, বিনা জামানতে বর্গাচাষীদের ঋণ প্রদান, চিকিৎসাসেবার জন্য সারাদেশে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৩৮.৪ থেকে ২০১৩-১৪ বছরে ২৪.৩ শতাংশে হ্রাস করে।

তারপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ, ভারতের পার্লামেন্ট কর্তৃক স্থল সীমানা চুক্তির অনুমোদন এবং দুই দেশ কর্তৃক অনুসমর্থন, (এর ফলে দুই দেশের মধ্যে ৬৮ বছরের সীমানা বিরোধের অবসান হয়েছে), মাথাপিছু আয় ১,৬০২ মার্কিন ডলারে উন্নীতকরণ, দারিদ্র্যের হার ২২.৪ শতাংশে হ্রাস, ৩২ বিলিয়ন ডলারের উপর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন কাজ করে।

এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ৭ জানুয়ারি ২০১৯ শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তারপর মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার কাজে সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য, কৃষি, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ খাত, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন দেশের ভেতর-বাইরে প্রশংসিত হয়েছে। শিক্ষাখাতে অভাবনীয় উদ্যোগ করেছে সরকার। বিনামূল্যে বই বিতরণ, মেধাবৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ যা জোট সরকারের আমলের ১৩ গুণ বেশি, শিক্ষক নিয়োগ ও মর্যাদা বৃদ্ধি, নতুন বিদ্যালয় স্থাপন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা, দারিদ্রপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড, কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন এবং সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ করছে।

ডেল্টা প্ল্যান একটি ঐতিহাসিক পরিকল্পনা। বাংলাদেশে এটিই প্রথম। পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় পানি সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে টেকসই করা হবে। এছাড়া হট স্পটে যেসব ঝুঁকি রয়েছে সেগুলো মোকাবেলা করা হবে। তখন আর ঝুঁকি থাকবে না। এটা বাস্তবায়ন হলে নতুন ভূমি পাওয়া যাবে। নদী পথের ব্যবহার বাড়ানো হবে। সেই সঙ্গে নদী ভাঙ্গনের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

২০১৮ সালের ২ সেপ্টেম্বরে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া অন্য কোনো সরকার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নিতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত করণীয় অনেক দূর এগিয়েছে। ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত আমাদের কী করণীয়, সেটা প্রণয়নে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। জাতির পিতা বলে গেছেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নই আমাদের ইচ্ছা। আর কিছু চাওয়ার নেই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যায়। অথচ বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় আসলে দুর্নীতি, ভাগাভাগি করে দেশের উন্নয়নকে ধূলিসাৎ করে দেয়। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার দেশ, মাটি, নদী ও মানুষের কথা ভাবে। যে কারণে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘ডেল্টা কাউন্সিল’ গঠন করা হয়েছে।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগ

বিজ্ঞাপন

লস অ্যাঞ্জেলসে দাবানল, নিহত ৫
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৪৩

২৪ ম্যাচ পর হারল লিভারপুল
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৩১

আরো

সম্পর্কিত খবর