Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা মোকাবিলায় `সীমিত আকার’: কী হতে চলেছে এখন?


৩০ মে ২০২০ ১৫:৪১

এক.
আমার বাসার আশেপাশে প্রায় দেখি ফুডপান্ডার লোক খাবার ডেলিভারি দিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে দেখি যারা ডেলিভারি করে তাদের অধিকাংশই কিশোর ছেলে, বাইসাইকেলে চড়ে এরা ডেলিভারি দেয়। যারা ডেলিভারি, হোম সার্ভিসটা দিয়ে যাচ্ছে, তাদের হাতে কোনো গ্লাভস থাকে না, মুখে কোনো মাস্ক থাকে না। কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা এদের মধ্যে নেই। এইরকম চিত্র প্রায় প্রতিদিনই দেখছি। যারা খাবার অর্ডার দিচ্ছে কিংবা অনলাইন হোম সার্ভিস দিচ্ছে, তাদের কর্মীদের খুব একটা সচেতনতা আছে বলে মনে হয় না। এদের ন্যুনতম স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই।

বিজ্ঞাপন

কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী একটা রোগ, আমাদের অজান্তে ছেয়ে ফেলছে, তার পরিণতি যে ভয়াবহ আমরা নিজেরাই এখন বুঝতে পারছি। আস্তে আস্তে করে কেড়ে নিচ্ছে নিজেদের আশেপাশের মানুষের প্রাণ। খুবই মর্মান্তিক একটি সময় পার করছি আমরা। সময়টা খুব অসহায়ত্বের। আমাদের অভাগা জীবন এখন। কেউ কাউকে সান্তনা দেওয়ার জায়গাটুকুও পাচ্ছি না। যারা প্রিয় মানুষগুলো হারাচ্ছে, তাদের কষ্ট প্রতিদিন বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এতটা শোক, এতোটা বেদনা আজ আমাদের! যারা স্বজন হারায়, যারা সন্তান হারায়, যারা পিতা হারায়, যারা স্বামী হারায়, যারা ভাই হারায়, তারা বুঝে কষ্ট কেমন!

বিজ্ঞাপন

ঘটনার উপরে ঘটনার প্রলেপ পড়তে পড়তে কত ঘটনাই তো ক্রমশ ফিকে হয়ে যায়। এ সবও কি কেউ মনে রাখবেন আজীবন? এত শত জটিল তত্ত্বের কথা স্বজনহারাদের মাথায় ঢোকে না।

দুই.
করোনাভাইরাস রোগ প্রতিরোধে অন্যতম প্রধান পন্থা হচ্ছে সচেতন থাকা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। এসব মেনে চলার ব্যাপারগুলো নিজের কাছে। এটা কারোর উপর কেউ নির্ভর হওয়ার বিষয় নয়। টেলিভিশনে, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিদিনই কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, তা দেখানো হচ্ছে, বলা হচ্ছে। এগুলো আমাদের মানতে হবে।

নাহলে রেহাই নেই। কারো কারো ক্ষেত্রে মেনে চলা কঠিন। তবুও মানতে হবে। জীবনপ্রণালী পরিবর্তন করতে হবে। করোনা অন্তত এ মেসেজটা আমাদেরকে দিয়ে যাচ্ছে। এতো বছর ধরে ডা. দেবী শেঠির মতোন হাইপ্রোফাইল চিকিৎসকরা যে মেসেজগুলো দিয়েও আমাদের মতো আলভোলা বাঙালিদেরকে পরিবর্তন করাতে পারেননি। জীবনবিতৃষ্ণা অথবা চিরাচরিত দুঃখবিলাসী থেকে অনেকে বলে থাকেন, মরে গেলে মরে গেলাম, কি আর হবে! মরণ আসলে কেউ কি ঠেকাতে পারবে। এ জাতীয় কথাবার্তাগুলো আমার কাছে মনে হয় খুবই সস্তা টাইপের। এ সমস্ত কথা বলে আপনার মূল্যবান সময়গুলো অকালে ঠেলে দিচ্ছেন। মরে যাওয়া তো বিষয় না, এই যুগে মৃত্যুর চাইতে সহজ কাজ নেই। কিন্তু ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যু আমাদের কারোরই কাম্য নয়। এ মৃত্যুর যন্ত্রণা হয়তো অনুভব করতে পারছি না, যারা প্রকট আকার থেকে সুস্থ হয়েছেন, তাদের কথা জানুন। কিভাবে তারা করোনা বিজয়ী হয়ে উঠছে।

বড় বড় টাকাওয়ালারা এখন হা-পিত্যেশ করছেন, একটা আইসিইউ বেডের জন্য। কিন্তু তারা আইসিইউ বেড পাচ্ছেন না। একটা ভেন্টিলেশন তারা পাচ্ছেন না। এক ভাইয়ের ভেন্টিলেশন খুলে আরেক ভাইকে দিতে হচ্ছে। যখন এতো এতো টাকা দিয়েও জীবন বাঁচাতে পারছেন না তাঁরা, তখন আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হবে, একবার ভেবে দেখুন।

এটা এমন একটা রোগ, সংক্রমণে প্রকোপ এতোটা বেশি যে, আপনি আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে আপনার আশেপাশে অন্যদেরও হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মনে রাখা দরকার ট্রান্সমিশন হচ্ছে এখন খুব বেশি। খুব দ্রুতই হচ্ছে। কোভিড-১৯ এখন আমাদের চেনা-জানা, আশেপাশের মানুষগুলোর মধ্যে চলে আসছে। কেউ ফিরছেন, কেউ ফিরছেন না। যারা ফিরছে ননা, তাদের ক্ষেত্রে দাফন করতে কোথাও কোথাও বাধাও দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের আমানবিক ঘটনা ঘটছে এখন। নিজেদের ভেতরেই।

তিন.
দেশে প্রতিদিনই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এরমধ্যে গণহারে সরকার সব কিছু খুলে দিয়েছে। গার্মেন্টস, দোকানপাট তো আগে থেকেই খুলে দিয়েছে। সব কিছু খুলে দেয়া মানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া নয়। মহামারী নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এটা অনেক শিক্ষিত মানুষও বুঝতে চায় না। ওই প্রসঙ্গে আর গেলাম না। এখন জীবিকা রক্ষা এবং অর্থনীতি চাকা ঘুরানোর জন্য সরকারকে বেশি চিন্তিত মনে হচ্ছে।

সীমিত আকারে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলা হচ্ছে। সীমিত আকারে গণপরিবহন চালুর কথা বলছে সরকার। অথচ সীমিত আকারের মডেলটা কী আমরা জানি না। আমরা বুঝতে পারছি এখন কী হতে চলেছে। তবু সরকার সিদ্ধান্ত নিলো। শাসক কি কখনও শাসিতদের কাতারে নিজেকে আবিষ্কার করে? অতএব নিজের সুরক্ষার দায়িত্বটা নিজেকে নিতে হবে। সচেতন থাকুন। সচেতন রাখুন। ভালো থাকুন। সবাইকে ভালো রাখুন।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, ঢাকা মহানগর

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর