আর্তমানবতার সেবায় প্রথমসারির যোদ্ধা সেবিকা
১৩ মে ২০২০ ১৮:৪৬
মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে একুশ শতকে বিশ্ব বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। ছোট্ট এই ভাইরাসের ছোবলে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ব। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। যার ছোবল থেকে বাদ যায়নি প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও।
অন্য পেশার লোকজন যখন সাধারণ ছুটি কাটাচ্ছে। কিংবা বাড়িতে বসে অফিস করছে। ঠিক তখন সংকট মোকাবিলায় মানুষকে সেবা দিতে দিনরাত প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সেবা দিতে গিয়ে গতকাল ১১ মে পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রায় দেড় হাজার চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে নার্সের সংখ্যা প্রায় পাঁচশ। কয়েকজন আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
অজানা এই ভাইরাসটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকেই তছনছ করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (১২ মে) পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য- বিশ্ববাসীর স্বাস্থ্যের জন্য নার্স গুরুত্বপূর্ণ।
আধুনিক নার্সিংয়ের প্রবর্তক ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার জন্মদিন ১২ মে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এবার করোনাকালে দিবসটি অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে এরই মধ্যে প্রায় পাঁচশ নার্স আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। আক্রান্তদের অনেকে সুস্থ হয়ে আবার করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন। কেউ কেউ কাজে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার পরেও রোগীর পাশে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন নার্সরা।
তবে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এসবের মধ্যেই এবার দিবসটির আগে একটি সুখবর পেয়েছেন নার্সরা। করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী, ৫ হাজার ৫৪ জন নার্সকে নিয়োগ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। নতুন পাঁচ হাজার ৫৪ নার্স নিয়োগের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগে নার্সের সংখ্যা ৩২ হাজারে দাঁড়ালো। কয়েকদিন আগে নতুন করে দুই হাজার চিকিৎসকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এখন স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়ে ৩০ হাজারে পৌঁছেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স থাকতে হবে। এ হিসাবে অন্তত ৯০ হাজার নার্স থাকার কথা। তবুও এতো কম সংখ্যক নার্স এই সংকটে জীবনবাজি রেখে কাজ করছে। মানুষের স্বাস্থ্য সেবা করাই তাদের এখন প্রধান দায়িত্ব।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রহিমা খাতুন, সাহাজাদী হারুন, জোহরা বানু, আক্তার বানুর মতো কয়েকজনের হাত ধরে বাংলাদেশে এই পেশার যাত্রা শুরু হয়। সেই সময় নার্সিং পেশাকে বিশেষ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নার্সিংয়ের জন্য পৃথক প্রশাসন কাঠামো তৈরি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ছয় হাজার নার্স নিয়োগ দেন।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালে ১৬ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ২০১০ সালে দুই হাজার, ২০১৩ সালে চার হাজার ১০০, ২০১৬ সালে প্রায় ১০ হাজার এবং ২০১৮ সালে পাঁচ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়।
গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, বর্তমানে দেশে সরকারি ৬২টি নার্সিং প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ২১৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর সরকারি নার্সিং প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১১ হাজারের বেশি নার্স নার্সিং কাউন্সিল থেকে সনদপ্রাপ্ত হন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই নার্সিং পেশার সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে এটা বলাই বাহুল্য। সেবা পরিদপ্তরকে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে রূপান্তর করা হয়েছে। নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদায় উন্নীতকরণ এবং প্রথম শ্রেণির পদ সৃষ্টির পাশাপাশি উচ্চতর শিক্ষা নিশ্চিতে এমএসসি নার্সিং কোর্স চালুসহ সরকারিভাবে নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংকটে আর্তমানবতায় যারা স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত তাদের উদ্দেশ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, দায়িত্ব পালনকালে যদি কেউ আক্রান্ত হন, তাহলে পদমর্যাদা অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য থাকছে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমা এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৫ গুণ বাড়বে। স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমা বাবদ বরাদ্দ ৭৫০ কোটি টাকা।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ