মানবিক যুবলীগ
১২ মে ২০২০ ১২:০২
ফরিদপুর জেলা যুবলীগের এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ভ্রাম্যমাণ বাজার শহরবাসীকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দিয়েছে। ঘরের দোড়গোড়ায় নিত্যপণ্য সরবরাহ পেয়ে মানুষ এই উদ্যোগকে প্রশংসার চোখে দেখছে। দেশে করোনাভাইরাসের কারণে মানুষকে ঘরে রাখতে ফরিদপুরে আট ধরনের পণ্য নিয়ে শুরু হওয়া ভ্রাম্যমাণ বাজারে এরইমধ্যে পণ্যের তালিকা বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫-এ দাঁড়িয়েছে।
চাল, ডাল, তেল, সাবানের সাথে এখন এই ভ্রাম্যমাণ বাজারে রোজাদারদের সুবিধার্থে পাওয়া যাচ্ছে খেজুর, তরমুজ এমনকি বেল, কদবেল, কলাসহ বিভিন্ন ধরনের ফল। এবার ক্রেতাদের সুবিধার্থে যুক্ত হয়েছে হটলাইনেও এসব পণ্য কেনার সুবিধা। কোনো প্রকার সার্ভিস চার্জ ছাড়াই নামমাত্র পরিবহন খরচ দিলেই সাধারণ ক্রেতার বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত পণ্য। গত ৪ এপ্রিল ১০টি ট্রাকযোগে শহরের বিভিন্ন পাড়ামহল্লায় ঘুরে ঘুরে এসব পণ্য স্বল্পমূল্যে বিক্রি শুরু হয়। পণ্যের মূল্যে কম থাকার কারণে ক্রেতাদের চাহিদা বাড়ায় ২০টি স্থানে বসানো হয় নিত্যপণ্যের এই দোকান।
ফরিদপুর জেলা যুবলীগের উদ্যোগে এই কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন প্রায় দেড় শতাধিক যুবলীগ কর্মী। এরই মধ্যে শহরের প্রায় ৩৫ হাজার পরিবারের মানুষ এই ভ্রাম্যমাণ বাজারের সুবিধা নিয়েছেন। চলমান দুর্যোগে অনেকে ঘর হতে বের হতে না চাইলেও যুবলীগ কর্মীরা চাহিদা মোতাবেক বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে কোনো চার্জ ছাড়াই। গত এক মাসে পাঁচ লাখ ৬০ হাজার ডিম বিক্রিসহ প্রায় ৮০ টন চাল, ২৫ টন চিনি, ২০ টন করে ডাল, পেঁয়াজ ও তেল, ১৫ টন করে ছোলা ও আলু, ২ টন খেজুর ও ৪ টন লবণ বিক্রি হয়েছে।
করোনায় সাহায্যের জন্য যারা হাত পাততে পারছেন না, পরিচয় প্রকাশের ভয়ে যারা সাহায্যের লাইনে দাঁড়াচ্ছেন না- এমন মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্তের সহায়তায় ধারাবাহিকভাবে উপহার খাদ্য সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে যুবলীগ। খুলনায় করোনা আক্রান্ত রোগী, তাদের পরিবারের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে খুলনা মহানগর যুবলীগ। ডাক্তাররা নিরাপদে থেকে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে ডক্টরস সেফটি চেম্বার চালু করেছে মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগ।
এ রকম শত শত উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত সারা বাংলাদেশের যুবলীগের প্রতিটি ইউনিট। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ৩১ দফা নির্দেশনার আলোকে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সঠিক দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সারা বাংলাদেশে ব্যাপক কর্মজজ্ঞের মাধ্যমে যুবলীগের মানবিক কর্মসূচী প্রশংসিত।
করোনার সংক্রমণ শুরু হলে দেশব্যাপী নাগরিক সচেতনতায় কাজ শুরু করে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিটি ইউনিট। প্রথমদিকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও মাস্ক বিতরণ করে নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে কর্মহীন, ছিন্নমূল, অসহায় মানুষের খাদ্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সংগঠনের প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, ফ্রি সবজি দোকান, ইফতার সরবরাহ, রান্না করা খাবার সরবরাহ, করোনা মৃতদেহ দাফন এবং ফ্রি টেলি মেডিসিন সেবা চালু করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, শোষনমুক্ত সমাজ, জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা। জাতীয় চার মুলনীতিকে সামনে রেখে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র দূরীকরণ, দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা সম্প্রসারন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, অসাম্প্রদায়ীক বাংলাদেশ ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং যুবসমাজের ন্যায্য অধিকারসমুহ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ১১ই নভেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে এদেশের যুব আন্দোলনের পথিকৃৎ শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
লক্ষ্য বাস্তবায়নে দেশের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের মধ্য থেকে স্বাধীনতা ও প্রগতিকামী যুবক ও যুব মহিলাদের ঐক্যবদ্ধ করে তাদের রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন গড়ে তোলাই যুবলীগের উদ্দেশ্য।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুবলীগের নেতাকর্মীরা দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের জঘন্য হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সর্বপ্রথম প্রতিবাদ গড়তে গিয়ে যুবলীগ নেতা বগুড়ার খসরু, চট্টগ্রামের মৌলভী সৈয়দ জীবন দিয়েছেন। যুবলীগ কর্মী নূর হোসেনের রক্তে অর্জিত হয়েছিল আমাদের গণতন্ত্র। দেশের প্রতিটি সংকট মূহুর্তে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের অবদান অনস্বীকার্য।
লেখক: সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা