সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ‘পিপিই, মাস্ক অস্ত্র’
৩০ এপ্রিল ২০২০ ২০:০৯ | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২০ ২০:১০
কয়েকদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টেলিকনফারেন্সে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই), মাস্কের মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। হাসপাতাল কর্র্তপক্ষকে পিপিই, মাস্কের মান নিশ্চিত হয়ে গ্রহণ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই সব সামগ্রীর মান নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তুলেছিলেন ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক, এরপর ঢাকার বাইরের কয়েকজন সরকারি চিকিৎসক। প্রধানমন্ত্রী সংশয় প্রকাশ করার পরও ঐ সব চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গত কয়েক দিনে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঢাকাস্থ মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক শহিদ মো. সাদিকুল ইসলাম প্রথম এন-৯৫ মাস্কের মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তা গ্রহন করতে রাজী হননি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানান। এর আগে ৩০ মার্চ শহিদ মো. সাদিকুল ইসলাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে মাস্ক চান। তার চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মুগদা জেনারেল হাসপাতালের জন্য ৩০০ মাস্ক পাঠায়। পরবর্তীতে এই মাস্ক নিয়ে পরিচালক মো. সাদিকুল ইসলাম সন্দেহ প্রকাশ করেন। জল গড়ায় অনেক দূর। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় নকল মাস্কের বিষয়টি ফাঁস হয়। এর ধারাবাহিকতায় বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে গেলে তিনিও মাস্কের মান যাচাই করে হাসপাতালগুলোকে গ্রহণ করতে বলেন। মাস্কের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটনার মাসখানেক পর ২৯ এপ্রিল শহিদ মো. সাদিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।
রাজশাহীর একজন চিকিৎসক মাস্ক, পিপিই নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেই ঘটনায় এক মাসের মধ্যে দু’বার বদলী করে পাবনা মানসিক হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে তাকে।
কিছুদিন আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, করোনা আক্রান্তদের জন্য নির্দিষ্ট হাসপাতালগুলোর চিকিৎসক, নার্সদের থাকার সুবিধার্থে কয়েকটি উন্নত মানের আবাসিক হোটেল ঠিক করা হয়েছে। পরে সাংবাদিকরা খোঁজ নিয়ে দেখেন যে অনেক হোটেলের মালিক এসব ব্যাপারে কিছুই জানেন না। এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করলে কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হন।
এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, একটি শক্তিশালী, উদ্ধত চক্র সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এসব কর্মকাণ্ড করেছে। প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড ব্যস্ত এখন। এ ফাঁকে তারা এসব করেছে। এসব কর্মকান্ড তারা যতটা না প্রতিশোধের জন্য, নিজেদের সুবিধার জন্য করেছে তার চেয়ে বেশি। করেছে সরকার, আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীর বদনাম করতে ও তাদের বিব্রত করতে। এটা অনলাইন গুজবের প্রাক্টিক্যাল চেহারা। বদনাম যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
খেলা এখানেই শেষ না। খেলা আরো গভীর। গভীরতম। শাস্তির ভয়ে মানহীন পিপিই, মাস্ক নিয়ে কোন চিকিৎসক আর কথা বলবেন না। স্বাভাবিকভাবেই তারা করোনা রোগীর চিকিৎসা দিতে ভয় পাবেন। এতে করোনা চিকিৎসা মুখ থুবড়ে পড়বে। ডাক্তারদের চিকিৎসা দিতে বাধ্য করতে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে একদিকে ডাক্তাররা ক্ষেপে যাবেন, অন্যদিকে ক্ষিপ্ত হবে জনগন। সব দায় গিয়ে পড়বে সরকারের উপর।
আরো একটা বিষয় উল্লেখ্যযোগ্য যে, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের হার আশঙ্কজনক ভাবে বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে রোগী আর চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের হার সমান হয়ে যেতে পারে। এমনকি বেশিও হয়ে যেতে পারে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা আক্রান্তের জন্য সাধারণ মানুষ দায়ী করছে নকল মাস্ক, পিপিইকে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, একটা সুবিধাবাদী চক্র চাচ্ছে দেশে লাশের পাহাড়, গণহারে করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী। এই চক্রটি সাধারন মানুষের জীবন নিয়ে, চিকিৎসকদের জীবন নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে। তার সাথে আছে মোটা অংকের টাকার লোভ। এরা যে কোন মূল্যে সরকারকে সরাতে চায়। এরা কারা তা বোঝার জন্য গোয়েন্দা হতে হয় না। চলমান দুর্যোগকালে এই চক্রটি দু’পাশি করাত নিয়ে নেমেছে। একদিক দিয়ে দামি জিনিসের দামে সস্তা জিনিস দিয়ে মোটা অংকের টাকা পকেটস্থ করছে অন্যদিকে সরকারকে অসৎ, ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা করছে।
এন-৯৫ মাস্কের প্যাকেটে পাওয়া গেছে নকল, সস্তা দেশে তৈরি মাস্ক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বললেন “ভুল” হয়েছে। ভুল তো হতেই পারে। কিন্তু আপনি দোকানে সবজি কিনতে গেলেন। সবজি দোকানী ব্যস্ত। পটল চাইলেন। বাসায় এসে দেখলে পটলের জায়গায় আছে টমেটো। দোকানি ভুলে পটলের বদলে টমেটো দিয়ে দিয়েছে। এটা সম্ভব। কিন্তু যদি দেখেন পটলের জায়গায় মাছের থলে তাহলে আপনি কি ভাববেন? এটা ইচ্ছাকৃত। কারণ সবজির দোকানে মাছ থাকে না। তার জন্য অন্য দোকান।
এন-৯৫ মাস্ক আমাদের দেশে তৈরি হয় না। তাই তার প্যাকেটও এদেশে নাই। এন-৯৫ মাস্ক আনতে হয় বিদেশ থেকে। তাহলে এন-৯৫ এর প্যাকেটে ভুলবশত অন্য মাস্ক কীভাবে আসলো? প্যাকেটগুলো এদেশে কেন তৈরি করা হয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে।
এদের যদি এখনই থামানো না যায় তবে মৃত্যুর মিছিল, রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে।
লেখক: চলচ্চিত্র নির্মাতা