Monday 21 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিনিয়োগ সম্মেলনের পর সম্ভাবনা জাগাচ্ছে কোরিয়ান ইপিজেড

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ এপ্রিল ২০২৫ ২২:০০

চট্টগ্রামের কোরিয়ান রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড)। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিশাল বিনিয়োগ ও বড় আকারের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা জাগাচ্ছে চট্টগ্রামের কোরিয়ান রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড)। অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে বিদেশি বিনিয়োগকারী একটি বড় দল ইপিজেডটি পরিদর্শন করে গেছে। সরকারের সদিচ্ছায় ২৮ বছর পর কোরিয়ান ইপিজেডের ‍ভূমি জটিলতারও নিরসন হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন শুধু বিদেশি বিনিয়োগ এনে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। বছর কয়েকের মধ্যে দুই লাখ লোকের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলার সংযোগস্থলে পাহাড়ঘেরা প্রায় আড়াই হাজার একর ভূমিজুড়ে এ কোরিয়ান ইপিজেড বা কেইপিজেড। বেসরকারি বিদেশি বিনিয়োগকারীর উদ্যোগে গড়ে তোলা কেইপিজেড পরিচালনা করে কোরিয়ার বিশ্বখ্যাত শিল্পগ্রুপ ইয়াংওয়ান করপোরেশন।

এই শিল্পাঞ্চলের জন্য ১৯৯৭ সালে ২ হাজার ৪৯২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে অধিগ্রহণ করা জমি কেইপিজেড কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করে সরকার। আনুষাঙ্গিক চাহিদা ও সুযোগ-সুবিধা পূরণের পর কারখানা স্থাপন করে কেইপিজেডে উৎপাদন শুরু হয় ২০১১ সালের অক্টোবরে।

তবে অধিগ্রহণ করা ভূমিগুলোর দখল পেলেও কেইপিজেডের নামে মালিকানা স্বত্ত্ব হস্তান্তর নিয়ে তৈরি হয়েছিল জটিলতা। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা বিশেষ করে বিদেশি কোম্পানিগুলো বিনিয়োগে অনাগ্রহী হয়ে পড়ে। তবে ইয়ং ওয়ান নিজেরাই কয়েকটি কারখানা তৈরি করে সেগুলোতে উৎপাদন অব্যাহত রাখে।

জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কেইপিজেডকে জমির মালিকানা দিতে তৎপর হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন গত ৭ এপ্রিল কেইপিজেড কর্তৃপক্ষকে ২ হাজার ৪৮৩ একর জমির মালিকানা স্বত্ত্ব হস্তান্তর করে। এর মধ্য দিয়ে ২৮ বছরের ভূমি জটিলতার অবসান হয়।

বিজ্ঞাপন

কোরিয়ান ইপিজেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মুশফিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভূমি আমাদের দখলে ছিল। কিন্তু মিউটেশন না হওয়ায় আমরা কিছু সমস্যায় ছিলাম। বিনিয়োগকারী এলেও যখন তারা জানতে পারে যে, জমির মালিকানা নিয়ে সমস্যা আছে, তখন তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে। এজন্য অনেক বিনিয়োগকারী এসেও পরবর্তী সময়ে আর বিনিয়োগে আগ্রহ দেখায়নি। আমরা নিজেরাই অবকাঠামো তৈরি করে কিছু কারখানাকে ভাড়া দিয়েছি।’

‘কিন্তু এখন জেলা প্রশাসন মিউটেশন সম্পন্ন করে জমি আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে। এখন আশা করছি, বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবেন। অবশ্যই বড় বড় ইনভেস্টমেন্ট আসবে।’

যেদিন ভূমি জটিলতার অবসান হলো, সেদিনই কোরিয়া, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৬০ জন ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা কেইপিজেড ঘুরে গেছেন। ছিলেন ইয়াংওয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান কিহাক সাং। বিনিয়োগকারী দল তার সঙ্গেও বৈঠক করেন। তারা কেইপিজেডে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখেন। কারখানা পরিদর্শন শেষে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের পক্ষ থেকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে কেইপিজেডে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে গত সপ্তাহে দেশে অনুষ্ঠিত হলো ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫’। সেই সামিটে যোগ দিতে আসা বিনিয়োগকারীদের কর্মকাণ্ডই শুরু হয়েছিল কেইপিজেড পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে।

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের একটি দল কেইপিজেড পরিদর্শন করে গেছেন। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের একটি দল কেইপিজেড পরিদর্শন করে গেছেন। ছবি: সংগৃহীত

‍মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘কোরিয়ান ইপিজেড হচ্ছে দেশের একমাত্র আইকনিক ইকো-ফ্রেন্ডলি ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন। আমাদের এখানে যেসব সুযোগ-সুবিধা আছে, অবকাঠামোগত যে সুবিধা আমরা তাদের দিতে পারব, সেটা আমরা বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরেছি। তারা সবকিছু দেখেছেন। তাদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব আমরা দেখেছি। আশা করছি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটা সুফল আমরা পাব। এ ছাড়া, বর্তমান সরকার তো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার বিষয়ে খুবই উদ্যোগী। সরকার কাজ করছে। আমরা বিদেশি বিনিয়োগ গ্রহণে প্রস্তুত।’

কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ৭০ লাখ বর্গফুটের বেশি আয়তনের কোরিয়ান ইপিজেডে এখন পর্যন্ত গড়ে উঠেছে ৪৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তৈরি পোশাক, জুতা, চামড়াজাত পণ্যের কারখানা আছে এখানে। এখানকার সব প্রতিষ্ঠানই গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে স্বীকৃত। এসব কারখানায় প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ কাজ করছে। শ্রমিকবান্ধব কেইপিজেডে আছে ১০০ শয্যার একটি হাসপাতাল। ৬০০ শয্যার আরও একটি হাসপাতাল নির্মাণাধীন আছে।’

১০০ একর জমিতে একটি আইটি পার্ক নির্মাণের কাজ চলছে বিদেশি বিনিয়োগে। দুটি ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। অবকাঠামোগত কাজ পুরোপুরি শেষ করে দ্রততম সময়ের মধ্যে পার্কের কার্যক্রম শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এ ছাড়া, একটি বিশ্বমানের টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চালু আছে। টেক্সটাইল জোনে আরও পাঁচটি কারখানা নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে দুটি চালু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কমপক্ষে দুই লাখ লোকের কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নিয়ে কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

কেইপিজেড কর্মকর্তা ‍মুশফিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইটি পার্ক হচ্ছে, টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আমাদের এখানে প্রায় ১৭ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। সব মিলিয়ে সম্ভাবনার একটি জায়গা তৈরি হয়েছে।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

কোরিয়ান ইপিজেড বিনিয়োগ সম্ভাবনা সম্মেলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর