বান্দরবানে সাংগ্রাই উৎসবে ‘মঙ্গলময় জল’ ঢেলে বুদ্ধমূর্তি স্নান
১৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:১৫ | আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:০৬
বান্দরবান: বান্দরবানে বুদ্ধধর্মাবলম্বীদের অতি পবিত্র বুদ্ধমূর্তিতে মঙ্গলময় জল ঢেলে (বুদ্ধমূর্তি স্নান) স্নান করানো হয়েছে। এদিন শত শত নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, আবাল বৃদ্ধসহ সারিবদ্ধভাবে সবায় চন্দন মিশ্রিত মঙ্গল জল হাতে নিয়ে রাজ গুরু বৌদ্ধ বিহার থেকে খালি পায়ে হেঁটে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উজানী পাড়ায় সাঙ্গু নদীর চরে সমবেত হয়।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে উজানী পাড়ার সাঙ্গু নদীর চরে আয়োজিত সমেবেত ধর্মীয় প্রার্থনার পরে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বুদ্ধমূর্তিকে স্নান করান। এ সময় শত শত নর-নারী, দায়ক-দায়িকা, উপ-উপাসীকারা চন্দন ও ডাপের পানি ও পূজা সামগ্রী নিয়ে অংশ নেন।
পরে রাজ গুরু বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ড. সুবর্ণ লংকরা মহাথের সবার উদ্দেশে ধর্ম নির্দেশনা দেন এবং পুর্ণ্যার্থীরা শীল নেন। এ সময় সবাই সমবেত হয়ে দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনা করেন।
ধর্ম নির্দেশনা শেষে শুরু হয় চন্দন মিশ্রিত মঙ্গল পানি দিয়ে বুদ্ধমূর্তি স্নান। প্রবীণ ভিক্ষুদের সঙ্গে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে বুদ্ধমূর্তিতে পানি ঢেলে স্নান করান বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষরা।
বুদ্ধমূর্তি স্নান অংশগ্রহণকারী পূজনীয়দের মতে, স্নান করলে যেমন শরীরের ময়লা, আবর্জনা পরিষ্কার হয়, গরমে শীতলতা লাভ করে, স্বস্তি, সতেজতা লাভ করে এবং রোগব্যাধি থেকে মুক্ত হওয়া যায় ঠিক তদ্রুপ বুদ্ধমূর্তিকে স্নান করানোর পুণ্যের ফলে সবাই এটাই কামনা করে যেন পৃথিবীর সকল প্রকার রোগব্যাধি এবং সকল প্রকার লোভ, দ্বেষ, মোহ নামক ময়লা আবর্জনা দূরীভূত হয়।
তারা মনে করেন, কারও যদি কোনো রোগ দীর্ঘস্থায়ী বা স্বল্পস্থায়ী যা হোক না কেন সেখান থেকে আরোগ্য লাভ করার জন্য এবং সকল প্রকার অন্তরায়, বিপদ সর্বোপরী জন্ম-জন্মান্তরের অন্তরের সমস্ত ময়লাগুলো অর্থাৎ লোভ-দ্বেষ-মোহ নামক আবর্জনাগুলো যেন পরিষ্কার হয় এই কামনা করে পূজারীরা বুদ্ধস্নান করে থাকেন।
পূজারীরা বলেন, বুদ্ধমূর্তিকে চাইলে দুধ দিয়ে স্নান করাতে পারে, বিশুদ্ধ, পরিষ্কার জল, চন্দন মিশ্রিত জল, সুগন্ধি মিশ্রিত জল দিয়েও স্নান করাতে পারে। সঙ্গে অবশ্যই সুন্দর, পরিষ্কার কাপড়-চোপড় পরিধান করতে হবে। সবচেয়ে যেটি বেশি প্রয়োজন তা হল মনের পবিত্রতা ও শ্রদ্ধাবোধ।
মূলত বুদ্ধমূর্তি স্নানের পরেই মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ জলকেলি উৎসব শুরু হয়। এ সময় তরুণ-তরুণীরা মেতে উঠেন আনন্দ-উল্লাসে।
উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি চনু মং মার্মা জানান, সপ্তাহ ব্যাপী মারমাদের সাংগ্রাই উৎসবে আজ ২য় দিন। সাংগ্রাই উৎসবের মূল আকর্ষণ হচ্ছে মৈত্রী পানি বর্ষণ বা জলকেলি।
তরুণ-তরুণীরা একে অপরের প্রতি পানি বর্ষণ করে। পানিকে পবিত্রতার প্রতীক মেনে মারমা তরুণ-তরুণীরা পানি ছিটিয়ে নিজেদের শুদ্ধ করে নেন। পাহাড়ের প্রতিটি পল্লীতে আয়োজন করা হয়েছে জলকেলি উৎসব। কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ এই খেলায় মেতে উঠেন। তাই এবারের কর্মসূতিতে তিনদিন জলকেলির অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে। এর পরে পাড়ায় পাড়ায় পিঠা তৈরি, বৌদ্ধ মূর্তি স্নান, রাতে বিহারে বিহারে হাজারো প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, সম্প্রদায়গুলোর নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী নৃত্য-গান নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আগামী ১৮ এপ্রিল মৈত্রী পানি বর্ষণ (জলকেলি) ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে সপ্তাহ ব্যাপী সাংগ্রাই উৎসব।
সারাবাংলা/এইচআই
জলকেলি বুদ্ধমূর্তি বুদ্ধমূর্তি স্নান মঙ্গলময় জল সাংগ্রাই উৎসব