Tuesday 22 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
গ্রেফতারি পরোয়ানার তথ্য আগেই পাচ্ছেন আসামিরা, তদন্ত কমিটি গঠন

রাশেদ মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:০৫ | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:১২

ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এখানেই চলছে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার কাজ। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের সব খবর আগেভাগেই চলে যাচ্ছে অভিযুক্তদের কাছে। গোপন থাকছে না গ্রেফতারি পরোয়ানার তথ্যও। একের পর এক এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিব্রত প্রসিকিউশন টিম। এমতাবস্থায় তথ্য ফাঁসে  জড়িতদের চিহ্নিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রসিকিউটর দফতর জানায়, গণহত্যায় মামলায় জড়িত পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা বের হওয়ার আগেই আসামিদের কাছে খবর চলে যাচ্ছে। ফলে পালিয়ে যান অভিযুক্তরা। তবে আগে থেকে পলায়কারীদের ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মূলত ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারের আমলে প্রশাসনে থাকা সুবিধাভোগীরাই ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন তথ্য চালাচালি করছে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, গত বছরের ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরার মেরাদিয়া এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা এক কিশোরকে গুলি করেন একাধিক পুলিশ সদস্য। ঘটনাটির দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়। নৃশংস এ ঘটনার নেতৃত্ব দেন রামপুরা জোনের এডিসি রাশেদুল ইসলাম। এ নিয়ে পাঁচ আগস্ট পরবর্তী মামলা হলে গেল ৯ মার্চ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু এর কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর চলে যায় এই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে।

ঠিক তখনই বরিশাল নগরীর শীতলাখোলা ট্রাফিক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি এডিসি রাশেদুল। এরপর থেকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। গণহত্যায় জড়িত রামপুরা থানার ওসি মশিউর রহমান ও এসআই তরিকুলও গ্রেফতারি পরোয়ানার এমন আগাম খবরে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতার পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে বেসামরিক ৭০ জন, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ৯ জন ও পুলিশ-র‌্যাব তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৬২ জন। পরোয়ানা জারির পর গ্রেফতার হয়েছেন ৫৪ জন। আর পলাতক রয়েছেন ৮৭ জন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানার সঙ্গে সাধারণ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা, চিফ প্রসিকিউটর দফতর, রেজিস্ট্রার কার্যালয়, এজলাস, আইজিপি দফতর ও সংশ্লিষ্ট থানা যুক্ত থাকে। এসব মাধ্যম থেকেই তথ্য ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, ‘প্রশাসনে এখনও ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুগতরা রয়েছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারাই অসহযোগিতার চেষ্টা করছেন। আসলে গত ১৬ বছরে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে আওয়ামীপন্থিদের বসানো হয়েছে। তাদের দিয়েই সব অপকর্ম করানো হয়েছে। সরকার বদলের পর তারাই আবার এক জায়গায় থেকে আরেক জায়গায় বদলি হয়েছে। এজন্যই ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। তবু আমরা সোচ্চার রয়েছি।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তথ্য ফাঁসকারীদের ব্যাপারে আমাদের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। আমরা এসব ছিদ্র বন্ধে কাজ করছি। আসলে ট্রাইব্যুনালে হওয়া মামলার আসামিরা বেশ প্রভাবশালী। তাদের কাছে প্রচুর অর্থ রয়েছে। আর এসব প্রভাব খাটিয়েই বিচার কাজকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছেন তারা।’

সারাবাংলা/আরএম/আরএস

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর