এখনো ফাঁকা ঢাকা, যাত্রীচাপ মেট্রোরেলে
৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৪৩ | আপডেট: ৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:২৯
ঢাকা: ছুটি শেষ হলেও রাজধানীজুড়ে এখনো যেন ঈদের আমেজ। সড়কে যেমন বাড়েনি গণপরিবহন, তেমনি খোলেনি শপিং মল, ছোট খাটো দোকান-পাট। রাজধানীর মূল সড়ক, সিএনজি অটোরিকশার দখলে। আর যাত্রীরা স্বস্তি খুঁজতে ভিড় জমাচ্ছেন মেট্রোরেলে। গত দুই দিনের তুলনায় চাপ বেড়েছে মেট্রোরেলে।
শনিবার (৫ এপ্রিল) মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশন ছিল যাত্রীপূর্ণ। সবগুলো টিকিট কাউন্টার ছিল জনাকীর্ণ।
মেট্রোস্টেশন ঘুরে দেখা যায়, কেউ কেউ ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরেই বসে পড়েছেন। যাত্রীরা বলছেন, একটা টিকিট সংগ্রহ করতে ঘণ্টা পার হয়ে যাচ্ছে। তারওপরে ভাংতি টাকা না থাকলে টিকিট না পাওয়ার বিরম্বনা তো রয়েছেই।
উত্তরা পথের যাত্রী শরিফুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, স্ত্রী ও সন্তানকে বসিয়ে রেখে নিজে টিকিট কাটার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ৪০ মিনিট পার হয়েছে কিন্তু টিকিট কাউন্টার পর্যন্ত যেতে আরও ৫ জন পার হতে হবে।
সরাসরি কাউন্টারের পাশাপাশি অটোমেশিন থেকেও টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন যাত্রীরা। আর এই মেশিনের সামনেই জটলা বেশি। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অনেকেই এভাবে টিকিট সংগ্রহ করতে অভ্যস্ত নন। না জেনে এই লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে সময় বেশি লাগছে আর লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। এদিকে ভিড় দেখা গেছে রিফিল করার কাউন্টারেও। সে লাইনও লম্বা হচ্ছে। মেট্রোরেলের কর্মীরাও জানিয়েছেন গত কয়েকদিনের চেয়ে এদিন মেট্রোরেলে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে।
ডিএমটিসিএল এর কর্মী আসলাম বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে যাওয়া সহকর্মীরা এখনো কাজে যোগ দেননি। কাল থেকে সবাই কাজে যোগ দেবেন। কর্মী সংখ্যা কম থাকায়ও যাত্রীদের হেল্প করা যাচ্ছে না।’
কাউন্টারে যে ভিড় দেখা গেছে, সে ভিড় নেই প্লাটফর্মে। তবে ট্রেনের প্রতিটি কোচ ছিলো যাত্রীপূর্ণ। নারীদের জন্য সংরক্ষিত কোচেও ছিল অনেক যাত্রী। টিকিট সংগ্রহ করতে ভোগান্তি এবং দীর্ঘ সময় লাগলেও শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মেট্রোতে ভ্রমণ করে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।
মহিলা কোচে মিরপুর রুটের যাত্রী সায়মা বলেন, ‘টিকিট কাটতে লেগেছে ৩০ মিনিট কিন্তু ঘরে পৌঁছে যাব আরও কম সময়ে। সড়কে গাড়ীর সংখ্যা কম। যদিও বাসে ভ্রমণ করা যেত। কিন্তু তাতে সময় অনেক বেশি লেগে যায়। তাছাড়া বাইরে প্রচন্ড গরম। এই গরমে বাইরে চলাচল কঠিন। তাই কষ্ট হলেও মেট্রোকেই বেছে নিয়েছি।’
একই কথা বলেছেন শেওড়াপাড়া পথের যাত্রী ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘বাবার বাড়ি টিকাটুলি গিয়েছিলাম। সেখান থেকে মেট্রো চলছে বলে মেট্রোতে উঠলাম বাচ্চাদের নিয়ে। কিন্তু এতো ভিড় ধারনা করতে পারিনি। ভেবেছি ফাঁকা পাব।’
এদিকে রাজধানী সড়কে বাসের সংখ্যা গত দুই দিনের চেয়ে কিছুটা বাড়লেও যাত্রী সংখ্যা নেই। তাই বাসগুলো একে অপরের গা ঘেসে বিভিন্ন স্টপেজে কাটিয়ে দিচ্ছে দীর্ঘ সময়। মতিঝিল থেকে যাত্রা শুরু করে মিরপুর পর্যন্ত রাস্তা ফাঁকা থাকলেও দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে পথে পথে থামার কারণে।
এ প্রসঙ্গে বিহঙ্গ পরিবহনের চালক মামুনুর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যাত্রী নেই। একটা গাড়ি রাস্তায় নামালে যে খরচ হয় তা উঠছে না। তাই স্টার্ট বন্ধ করে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছি। তিনি বলেন, মানুষ এখনো ফেরেনি। হয়তো কাল রোববার থেকে যাত্রী পাব।’
গাবতলী লিংকের একজন যাত্রী বলেন, ‘মতিঝিল থেকে ফার্মগেট পৌঁছাতে ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। নানা স্থানে থামায়। গাবতলী যাব বলে এই গাড়িতে বসে আছি।’ সব গাড়ির অবস্থা একই রকম বলে জানান তিনি।
সড়কে বাসের সংখ্যা কম থাকলেও আজও সিএনজি অটোরিকশার দৌড়াত্ব রাজধানীর প্রধান সড়ক ও অলি গলিতেও। অনেকেই সিট বড় এবং দ্রুত চলাচলের কারণে অটোরিকশায় চলাচল করছেন। আবার সিএনজিতেও চলছেন অনেকে। যে পথে মেট্রোরেল নেই এমন রুটে সিএনজিতে ভ্রমণ করছেন যাত্রীরা। গত কয়েকদিনের চেয়ে পাঠাও চালকদেরও সড়কে বেশি দেখা গেল।
এদিকে ঈদের ছুটি শেষ হচ্ছে আজ শনিবার। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ঢাকামুখী মানুষের ঢল। বাস, ট্রেন, লঞ্চ সর্বত্রই ঢাকামুখী মানুষের ভিড়।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশন-বিটিআরসি বলছে গত সাত দিনে ঢাকা ছেড়েছেন ১ কোটি ৭ লাখ সিম ব্যবহারকারী। বিপরীতে ফিরে এসেছেন ৪৪ লাখ মোবাইল সিম ব্যবহারকারী।
সারাবাংলা/জেআর/এমপি