এবারও বন্ধ শিশু পার্ক
৩১ মার্চ ২০২৫ ১৫:০৭ | আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৫ ২০:৪৬
ঢাকা: শিশু পার্কের কাজ এখনো শেষ হয়নি। যে কারনে এ বছর ঈদেও বন্ধ থাকছে রাজধানীর একমাত্র বড় বিনোদনকেন্দ্র শিশু পার্ক। গেল বছরের মতো এবারও ঈদের দিন সকালে অনেকেই বাচ্চাদের নিয়ে এসে ফিরে গেছেন। তবে পার্কের সম্মুখ চত্বরে কয়েকটি রাইড নিয়ে বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বেসরকারিভাবে। সেখানেই কেউ কেউ শিশুদের নিয়ে কিছু সময় কাটিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে গত সাত বছর ধরে চলতে থাকা শিশু পার্কটির আধুনিকায়ন ও সংস্কার কাজ কবে শেষ হবে তা জানেন না কেউ।
সোমবার (৩১ মার্চ) রাজধানী শাহবাগ এলাকার ঢাকা ক্লাবের উল্টো দিকে অবস্থিত শিশু পার্কটিতে গিয়ে দেখা গেছে, জরাজীর্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সংস্কার কাজ চলমান বলে যে চারিদিকে দেয়াল তুলে দেওয়া হয়েছিলো তারও ভগ্নদশা। এই পরিস্থিতির মধ্যেই পার্কটির সামনের খোলা অংশে অল্প কিছু রাইড নিয়ে শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে পার্ক এ বছর খুলেছে ভেবে শিশুদের নিয়ে পার্কের সামনে ভিড় করেন অনেক অভিভাবক। কিন্তু পার্কের বেহাল অবস্থা দেখে আক্ষেপ নিয়েই ফিরে যান তারা। প্রত্যাশা থাকলেও এবার ঈদের আগেও চালু হলো না পার্কটি। অভিভাবকরা বলছেন, আধুনিকায়নের নামে দীর্ঘদিন ধরে পার্কটি বন্ধ রাখা ঠিক হয়নি। এটা সরকারের উদাসীনতা ছাড়া আর কিছু নয়।
পুরান ঢাকা থেকে দুই সন্তান নিয়ে শিশুপার্কে এসেছিলেন হাবিবুর রহমান, তিনি সারাবাংলাকে বলেন, গত দুই বছর ধরে এসে ফিরে যাচ্ছি। এবারও বাচ্চারা বায়না ধরেছে পার্কে যাবে। তিনি বলেন, এতো দূর থেকে এসেও দেখি বন্ধ। আরেক অভিভাবক মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, সাত বছর ধরে একটা পার্কের সংস্কার কাজ চলছে, এটা সরকারের উদাসীনতা ছাড়া কিছুনা। তিনি আরো বলেন, বাচ্চাদের জন্য কোনো মাঠ তো নগরীতে রাখেই নি। তারওপরে একটা মাত্র বড় পার্ক সেটাও সাত বছর ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। যাবো কোথায় আমরা? এই পার্কের সামনেই শিশুদের জন্য অল্প কিছু রাইড নিয়ে বসেছে এক ব্যবসায়ী। সংশ্লিস্ট কামরুল নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমরা মূলত উৎসবগুলোতে নাগরদোলাসহ এই রাইডগুলো নিয়ে বসি। এখানে অনেক বাচ্চা আসবে এই চিন্তা করে বসেছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৫ একর জমির ওপর ১৯৭৯ সালে পার্কটি নির্মাণ করা হয়। “ঢাকা শিশু পার্ক” নামে শুরু হওয়া পার্কটির পরিচালনায় ছিলো সিটি করপোরেশন। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই পার্কের নামও পরিবর্তন হয়েছে অনেকবার। বিএনপি সরকারের সময় নাম পরিবর্তন করে করা হয় ‘শহীদ জিয়া শিশুপার্ক’।
আবার আওয়ামী লীগ সরকার এসে ২০২১ সালে পার্কটির নতুন নামকরণ হয় ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্ক’। এখন বর্তমান অন্তবর্তী সরকার এই নাম পরিবর্তনের চিন্তা করছে বলে জানা গেছে। নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি পার্কটিরআধুনিকায়নে সংস্কার কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। যা এখনো চলমান। জানা গেছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পার্কটির সংস্কার কাজ ঝুলে গেছে। জটিলতা কাটিয়ে বছর চারেক আগে ডিএসিসি নিজেদের উদ্যোগে শিশুপার্ক আধুনিকায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। ৬০৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে তাতে একনেকের অনুমোদনও পায়। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ডিএসিসির মেয়র পালিয়ে দেশ ত্যাগ করায় সে উদ্যোগ থেমে যায়। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান অন্তবর্তী সরকার পার্কটির কাজ শেষ করার বিষয়ে ইতিবাচক। সময়মত শুরু করা গেলে আগামী ১ বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের জুনে পার্কটি চালু করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, সরকারিভাবে পরিচালিত দেশের সবচেয়ে বড় শিশুপার্ক এটি। ঈদ, অন্য যেকোনো উৎসব বা সাপ্তাহিক ছুটিতে নগরে শিশু-কিশোরদের বিনোদনে পছন্দের শীর্ষে ছিল শাহবাগে অবস্থিত এই শিশুপার্ক। এখানে কম খরচে সব শ্রেণির মানুষের বিভিন্ন রাইডে চড়ার সুযোগ ছিলো। শিশু-কিশোরের কোলাহলে মেতে উঠতো পুরো শাহবাগ এলাকা। আধুনিকায়নের নামে গত সাত বছর ধরে পার্কটি বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এতে আনন্দ-বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা।
সারাবাংলা/জেআর/এনজে