শরীয়তপুরে ২ ব্যবসায়ীকে অপহরণের চেষ্টা, ‘পুলিশ সদস্য’সহ আটক ৪
২৮ মার্চ ২০২৫ ১৬:৫১ | আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৫ ১৬:৫২
শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের ডামুড্যায় দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সময় চার যুবককে আটক করেছে পুলিশ। এরমধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য বলে পরিচয় দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দিবাগত রাত ১টার দিকে ডামুড্যা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে অপহরণকারীদের আটক করা হয়। এরআগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দারুল আমান বাজার এলাকায় অপহরণের ঘটনা ঘটে।
উদ্ধার হওয়া দুই ব্যবসায়ী হলেন- জুয়েল সরদার (৩২) ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইকর কান্দি এলাকার মৃত সোহরাব সরদারের ছেলে ও ফয়সাল সরদার (২৪) একই এলাকার মোহাম্মদ কাসেম সরদারের ছেলে। তারা ডামুড্যা বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সাড়ে ৯টার দিকে একটি মাইক্রোবাস ও একটি মোটরসাইকেল এসে রাস্তার পাশে দাঁড়ায়। এ সময় আটজন যুবকের মধ্যে চারজন নেমে এসে জুয়েল ও ফয়সালকে জোর করে মাইক্রোবাসে উঠায়। রাত ১টার দিকে ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ডের দিকে পৌঁছালে স্থানীয়দের তোপের মুখে তাঁরা মাইক্রোবাস থামান। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তিনজনকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। আর পাঁচজন পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে একজনকে শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকালে আটক করেছে পুলিশ।
আটকরা হলেন— কৌশিক আহমেদ সেতু (৩০) বাগেরহাট জেলার মোল্লার হাট থানার গারফা এলাকার বাচ্চু মিয়া শেখের ছেলে এবং তিনি খুলনা জেলা পুলিশ লাইনসে পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত আছেন। কাউসার তালুকদার (২৯) শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার বড় শিধুলকুড়া এলাকার মৃত আব্দুর রহমান তালুকদারের ছেলে এবং তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত আছেন। রুবায়েত মীর (২৭) মাগুরা জেলার বাসিন্দা এবং তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত আছেন। শরীফ হোসেন (৩৫) কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার আমৌদা এলাকার মৃত আনা মিয়ার ছেলে।
অপহরণকারী রুবায়েত মীর বলেন, কাউসার তালুকদার আমাদের বস। অপহরণের সময় যে টাকা পেয়েছিলাম তা কাউসারের কাছে। আমি আর কিছু জানি না।
প্রত্যক্ষদর্শী ফাহিম আব্বাস বলেন, এলাকায় ডাকাত পড়েছে শুনে আমি বাড়ি থেকে বের হই। পরে শুনি ডামুড্যা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাদের তিনজনকে আটক করা হয়। পরে এলাকাবাসী তাদের পিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয়। এ ছাড়াও কয়েকজন পালিয়ে যান।
ওই দুই ব্যবসায়ীর চাচাতো ভাই মিজানুর রহমান বলেন, আমার চাচাতো ভাই জুয়েল ও ফয়সালের ডামুড্যা ও ভেদরগঞ্জে তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অপহরণের পর ফয়সালকে দিয়ে অপহরণকারীরা তার আপন ভাই স্বাধীন সরদারকে মোবাইল ফোনে কল করে। ২০ লাখ টাকা চেয়েছেন অপহরণকারীরা। তখন ব্যাংক, বিকাশ ও নগদ থেকে ৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা পাঠানো হয় তাদের। পরে আরও টাকা দাবি করলে অপহরণকারীদের লোভ দেখিয়ে ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ডে আনা হয়। বাসস্ট্যান্ডে এলে জুয়েল ও ফয়সালকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা তিনজনকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে দেন। আর পাঁচজন পালিয়ে যান। পরে একজনকে আটক করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ফয়সাল ও জুয়েল বলেন, দোকান থেকে রাতে কদরের নামাজ পড়ার জন্য বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। দারুল আমান বাজারের কাছে মদন বেপারীর বাড়ির সামনে পৌঁছালে হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস ও একটি মোটরসাইকেল আমাদের গতিরোধ করে, আমাদের মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। হাতে হাতকড়া পরিয়ে পিস্তল ঠেকিয়ে তারা ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। আমরা পুলিশের লোক। পরে সেখান থেকে আমাকে দিয়ে আমার ভাই স্বাধীনকে কল করায় তারা। আমি ফোনে টাকা পাঠাতে বললে ৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা পাঠানো হয়। পরে বাকি ৬ লাখ ৯ হাজার টাকার জন্য অপহরণকারীরা ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ডে আসেন। সেখানে আমরা মুক্তি পাই।
এ ব্যাপারে ডামুড্যা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাফিজুর রহমান মানিক বলেন, দুজন ব্যবসায়ী রাতে দোকান থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথে তাদের অপহরণ করা হয়। তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। অপহরণের ঘটনায় পুলিশ ও জনগণ চারজনকে আটক করেছে। এর মধ্যে পুলিশ সদস্য রয়েছে। তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
সারাবাংলা/ইআ