ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও জান-মালের নিরাপত্তা চায় জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা
২৮ মার্চ ২০২৫ ১২:২৬
ঢাকা: ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও জান-মালের নিরাপত্তা চেয়েছেন দেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন (বাজুস)। একইসঙ্গে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সদস্যদের বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি। আর উদ্বিগ্ন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা জান-মালের নিরাপত্তা প্রদানে সরকারের আরও অধিকতর সহযোগিতা চেয়েছেন।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর মগবাজারে বাজুস কার্যালয়ে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের জান-মালের নিরাপত্তার দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করা হয়।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন (বাজুস) এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাজুসের সহ সভাপতি মো. রিপনুল হাসান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাজুসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গুলজার আহমেদ, সহ-সভাপতি এম. এ. হান্নান আজাদ, সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান, সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন খোকন, সহ-সভাপতি সমিত ঘোষ অপু প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে বাজুসের সহ সভাপতি মো. রিপনুল হাসান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশের জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও ব্যবসায়ীদের ওপর সরাসরি আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি জুয়েলারী ব্যবসায়ীদের হত্যা, হত্যা চেষ্টা, অপহরণ চেষ্টা আমাদের জান-মালের নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমনকি বাসা বাড়িতেও জুয়েলারী ব্যবসায়ী ও তার পরিবারবর্গ নিরাপদ বোধ করছে না। এসব অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের হাতে জুয়েলারি ব্যবসায়ী হত্যা চেষ্টার ঘটনাও বাড়ছে। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে বাজুস। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের জান-মালের নিরাপত্তা প্রদানে সরকারের আরও অধিকতর সহযোগিতা চায় বাজুস।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ ২০২৫ ভোর ৫টায় বাজুসের সহ-সভাপতি ও দেশের স্বনামধন্য জুয়েলারী প্রতিষ্ঠন অলংকার নিকেতনের কর্ণধার এম. এ. হান্নান আজাদের বাসায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় ও ছদ্মবেশী ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতদল হামলা চালায়। এই সময় তার বাসা ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এমন কি এম এ হান্নান আজাদকে অপহরণের চেষ্টা করে। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাজুসের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. ওয়াহিদুজ্জামান সুজনের উপর ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা হয়। যা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বিগত জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ২৩টি জুয়েলারী প্রতিষ্ঠানে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ১১টি, আশুলিয়া সাভারে ১টি, মুন্সিগঞ্জে ১টি, খুলনায় ৪টি, কুমিল্লায় ১টি, পটুয়াখালীতে ২টি, ময়মনসিংহে ১টি, সিলেটে ১টি ও হবিগঞ্জে ১টি প্রতিষ্ঠানে চুরি ও ডাকাতি সংঘটিত হয়। আশুলিয়া সাভারে ডাকাতির সময় ডাকাতদের গুলিতে একজন জুয়েলারী ব্যবসায়ী নিহত হয় এবং বনশ্রীতে সোনা ছিনতাইয়ের ঘটনায় একজন জুয়েলারী ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হয়। বিগত এক বছরে এই চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় দেশের ২৩টি জুয়েলারী প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪৪ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে বাজুসের সহ সভাপতি রিপনুল হাসান বলেন, ‘এ সকল ঘটনায় জুয়েলারী ব্যবসায়ীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছে। এজন্য জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারের আলাদা দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সশস্ত্র প্রহরার পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের সকল জেলার জুয়েলারি মার্কেটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া জুয়েলারী প্রতিষ্ঠানে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই হওয়া অলংকার উদ্ধার এবং অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় ১৫ এপ্রিলের পর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে বাজুস।’
এছাড়া অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা রোধে জুয়েলারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের প্রতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদার করার অনুরোধ করছে বাজুস। এ ক্ষেত্রে করণীয় বিষয়ে সংগঠনটি বলছে- নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন; প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ও বাহিরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; সিকিউরিটি গার্ড মোতায়েন করা; নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিজ নিজ জুয়েলারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ নিশ্চিত করা; মার্কেটে অবস্থিত জুয়েলারী প্রতিষ্ঠান সমূহের মালিকগণ মার্কেট কমিটির সাথে আলোচনা করে নিজ উদ্যোগে পালাক্রমে পাহার নিশ্চিত করা; এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সোনা পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা গ্রহণ করা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনার সম্মুখীন হলে পুলিশ প্রশাসন ও বাজুসকে অবহিত করা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সদস্যদের এসব পরামর্শ দিয়েছে বাজুস।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এসডব্লিউ