রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে এশীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান
২৭ মার্চ ২০২৫ ১৪:১১ | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৫ ১৪:২২
বাংলাদেশের অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে এশীয় নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) তিনি হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ গত সাত বছর ধরে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, যারা মিয়ানমারের নাগরিক।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিপুল সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ব্যয় বহন করে চলেছি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি সংহতির নিদর্শনস্বরূপ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘যদিও বৈশ্বিক প্রচেষ্টা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাচ্ছে, তবে তা চলমান রয়েছে। এশিয়ার নেতাদের অবশ্যই একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে হবে।’
বিশ্ব সংকটের ওপর আলোকপাত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব বহুমুখী সংকটে ভুগছে, যেখানে যুদ্ধ ও সংঘাত মানবাধিকারের ক্ষতি এবং অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিশ্বব্যাপী নিন্দা চলমান থাকলেও গাজায় গণহত্যা এখনও চলছে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ফিলিস্তিন সংকট শুধু আরব বা মুসলিমদের বিষয় নয়, এটি একটি মানবিক সমস্যা।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ইউক্রেন সংকটের দীর্ঘায়িত উত্তেজনা বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এশিয়ার সম্ভাবনা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এশিয়ার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতার চালিকা শক্তি হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই তরুণদের উদ্যোক্তা কার্যক্রম ও টেকসই সমাধানের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মানবসম্পদে বিনিয়োগ এবং বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা এশিয়ার ভবিষ্যত প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা নির্ধারণ করবে।’
তিনি বলেন, ‘এশিয়ায় নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ এখনও কম এবং নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য বিদ্যমান রয়েছে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর এবং তাদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য—যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ভাষা, ঐতিহ্য, দর্শন ও রীতিনীতি—মানব সভ্যতার স্থিতিশীলতা যা সৃজনশীলতার সাক্ষ্য বহন করে।’
তিনি বলেন, ‘ইসলাম, কনফুসিয়ানবাদ, বৌদ্ধধর্ম এবং হিন্দুধর্মের দর্শন বিশ্ব চিন্তাধারাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে, যা নৈতিকতা, শাসন ও মানবিক চেতনার ওপর অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘বহু শতাব্দী ধরে এশিয়ার সভ্যতা বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করে সমৃদ্ধ হয়েছে। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের এই গতিশীল বিনিময় শুধু এই অঞ্চলকেই নয়, পুরো বিশ্বকে প্রভাবিত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আজ, এশিয়ার সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি তার বৈশ্বিক প্রভাবকে আরও শক্তিশালী করছে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ, প্রাচীন জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা এবং আধুনিক উদ্ভাবনের সংযুক্তি একসঙ্গে এক শক্তিশালী গতি তৈরি করেছে, যা অঞ্চলটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং তার গভীর ঐতিহাসিক শিকড়কে সম্মান জানাচ্ছে।’
সম্মেলনে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার মহাসচিব ঝাং জুন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও বোয়াও ফোরামের চেয়ারম্যান বান কি-মুন এবং চীনের স্টেট কাউন্সিলের নির্বাহী ভাইস প্রিমিয়ার ডিং শুয়েশিয়াংও বক্তৃতা করেন। তথ্যসূত্র: বাসস।
সারাবাংলা/এসআর