Thursday 27 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রান্তিক খামারিদের ঝরে পড়া রোধে বিপিআইসিসি’র ৬ প্রস্তাব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৪ মার্চ ২০২৫ ২০:৩৭ | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫ ২২:৪২

ঢাকা: চলতি মাসে ডিমের দাম `অস্বাভাবিক’ কমে যাওয়ায় অনেক খামারি মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন। প্রতিবছর ৩ থেকে ৪ বার ডিম-মুরগির দরপতন হচ্ছে, অনেকে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসছেন। খামারিদের সুরক্ষা, উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে এ পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন।

সোমবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে পোল্ট্রি ও প্রাণিসম্পদ বীটের সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পোল্ট্রি খাতের নেতারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

মতবিনিময় সভায় বিপিআইসিসি’র পক্ষ থেকে তৃণমূল খামারিদের ঝরে পড়া রোধে ৬টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- স্বল্পসুদে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা; সরকারিভাবে ডিম-মুরগির সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করা; কোল্ডস্টোরে ডিম সংরক্ষণের সরকারি বাধা প্রত্যাহার করা; অফ-সিজনে তৃণমূল খামারিদের ভর্তুকী প্রদান; ফিডের দাম কমাতে এআইটি, টিডিএস, ভিডিএস হার শূন্যে নামিয়ে আনা এবং ডিম-মুরগির উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন বিষয়ক কৌশলপত্র প্রণয়ন করা।

ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা থেকে সাড়ে ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ঢাকা, ময়মনসিংহসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় খামার পর্যায়ে প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছে গড়ে ৮.৫০ টাকায়; অন্যদিকে টাঙ্গাইল ও নরসিংদিসহ অন্যান্য জেলায় বিক্রি হয়েছে গড়ে প্রায় ৮ টাকায়।

তিনি বলেন, কৃষি বিপণন অধিদফতর প্রতিটি ডিমের মূল্য নির্ধারণ করেছে- খামার পর্যায়ে ১০.৫৮ টাকা, পাইকারিতে ১১.০১ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ১১.৮৭ টাকা (সংযুক্তি)। প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ধরা হয়েছে ১০.১৯ টাকা। সে হিসাবে প্রতিটি ডিম বিক্রি করে খামারির লোকসান হচ্ছে গড়ে প্রায় ১.৬৯ টাকা থেকে ২.১৯ টাকা। ডিমের দৈনিক উৎপাদন সাড়ে ৪ কোটি পিস ধরলে, বিগত ২১ দিনে খামারির লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫৯ থেকে ২০৬ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, লোকসান সামাল দিতে না পেরে অনেক খামারি মুরগি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন- যা অত্যন্ত আশংকাজনক। কারণ রমজান শেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত খুললে চাহিদা বাড়বে, আর তখন সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হলে দাম বাড়বে।

মসিউর বলেন, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডিমের দাম কম। পাশ্ববর্তী দেশে ডিমের দাম কম বলা হলেও প্রকৃত বিচারে কম নয়। কারণ তাদের ডিমের দাম ১০ শতাংশ কম হলে ডিমের ওজনও ১৩ শতাংশ কম। তাছাড়া তারা যে মানের ফিড খাইয়ে ডিম উৎপাদন করে, সে তুলনায় বাংলাদেশের ফিডের মান অনেক ভাল।

ওয়াপসা-বিবি’র সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার প্রামাণিক বলেন, পাশ্ববর্তী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে উৎপাদিত ডিম অনেক নিরাপদ। কারণ তাদের ফিডে এন্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রোমোটার ও মিট অ্যান্ড বোনমিল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ।

ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব) এর সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেশি দেশে খামার থেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছাতে দামের ব্যবধান থাকে মাত্র এক টাকা; সেখানে আমাদের দেশে ৩ থেকে ৪ টাকা। তাই ডিমের দাম কমাতে হলে মধ্যস্বত্ত্বভোগীর সংখ্যা কমাতে হবে।

ব্রিডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি) এর সাধারণ সম্পাদক শাহ্ ফাহাদ হাবীব বলেন, চলতি মাসে একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দামেও পতন হয়েছে। সারাবছর জুড়ে ভারসাম্যপূর্ণ বাজার ধরে রাখা সম্ভব হলে খামারি ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হবেন।

এনিমেল হেলথ কোম্পানিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আহকাব) এর সাধারণ সম্পাদক আফতাব আলম বলেন, ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হলেও এসেছে যৎ সামান্যই। এখন ডিমের চাহিদা কম। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত হবে ডিম রফতানি করে খামারিদের লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করা।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত পোল্ট্রি খামারি ও উদ্যোক্তারা বলেন, আগামী কয়েক বছরে ডিমের চাহিদা আরও বাড়বে। মাথাপিছু ডিমের চাহিদা ১৩৫ থেকে বেড়ে ৩০০ হবে। সেক্ষেত্রে উৎপাদন আড়াই গুণ বাড়াতে হবে। দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে না পারলে আমদানি করে চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে না।

সারাবাংলা/ইএইচটি/আরএস

পোল্ট্রি খাত

বিজ্ঞাপন

পবিত্র লাইলাতুল কদর আজ
২৭ মার্চ ২০২৫ ০৩:৩০

আরো

সম্পর্কিত খবর