রাজস্ব ক্ষতি ও চোরাচালানের প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে তামাক কোম্পানি
২৪ মার্চ ২০২৫ ১৭:১৩
ঢাকা: আসছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বিভ্রান্ত করতে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে বলে মনে করছেন তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো। সংগঠনের কর্মকর্তারা বলছেন, তামাক কোম্পানিগুলো তামাকের কর না বাড়াতে যে তথ্য প্রচার করছে তার কোনো সত্যতা নেই। বরং বাজেটের আগে এ ধরনের প্রপাগান্ডা চালিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে।
সোমবার (২৪ মার্চ) ‘কর বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে তামাক কোম্পানির অপপ্রচার ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারের এসব কথা বলেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর ট্যোবাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে অনলাইন মিটিং প্লাটফর্ম জুমে আয়োজিত ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সভাপতি ও বিএনটিটিপি’র টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য বিশিষ্ট ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক।
ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, তামাক কোম্পানি প্রচার করে তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধি করলে চোরাচালান বাড়বে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাজেট ঘোষণার কয়েকমাস আগে গণমাধ্যমে অবৈধ সিগারেট উদ্ধারের খবর আসে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিশ্বে যেসব দেশে সিগারেটের দাম সবচেয় কম তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রতিবেশি দেশগুলোতেও সিগারেটের দাম বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। তাই বেশি দামের দেশ থেকে কম দামের দেশে সিগারেট চেরাচালান হয়ে আসবে এই যুক্তি টেকে না।
বিইআর ও বিএনটিটিপির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের প্রায় সব খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রে বড় তামাক কোম্পানিগুলোর নিয়মিত সংযোগ রয়েছে। ফলে সব বিক্রিয়কেন্দ্র তাদের নজরদারি ও পর্যবেক্ষণে থাকায় নকল সিগারেট বিক্রির প্রপাগান্ডা গ্রহণযোগ্য নয়।
বক্তারা আরও বলেন, চেরাচালান তত্ত্বে সুবিধা করতে না পেরে তামাক কোম্পানি ‘দেশে অবৈধ সিগারেটের উৎপাদন বৃদ্ধি’ তত্ত্ব হাজির করে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাজেটের আগে দেশের আনাচে-কানাচে, গ্রামে-মাঠে ও পরিত্যাক্ত ভবনে নকল সিগারেট কারখানা আবিষ্কারের সংবাদ বেশ ফলাওভাবে উঠে আসে। আইনশৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ভাঙ্গাচোরা পুরানো মেশিন, তামাক পাতার গুড়া ও কিছু সিগারেট দেখানো হয় তথাকথিত নকল সিগারেট কারখানাগুলোয়। যেখানে একজন দারোয়ান ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আর কাউকেও আটক করতে দেখা যায়নি। এসব ঘটনা তামাক কোম্পানিই এনবিআরকে প্রভাবিত করতে ঘটিয়ে থাকে বলে বলে সবার বিশ্বাস।
কর বৃদ্ধি করলে রাজস্ব কমে যাবে বলেও প্রতি বছর তামাক কোম্পানিগুলো প্রপাগান্ডা চালায় উল্লেখ করে বক্তারা আরও বলেন, তাদের এই অপপ্রচারেরও কোনো ভিত্তি নেই। কারণ এনবিআরের তথ্যে দেখা গেছে, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে তামাকজাত দ্রব্য থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোনো অর্থবছরেই রাজস্ব আদায়ের হার কমেনি। বরং গত ১৮ বছরে তামাকজাত দ্রব্যে থেকে রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১১ গুণ।
ওয়েবিনারে বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা সক্রিয়ভাবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের অর্ধশত প্রতিনিধি এ ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেন।
সারাবাংলা/জেআর/এনজে