দুই কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
২৩ মার্চ ২০২৫ ১৭:৩৩ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫ ১৯:৩৮
ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুটি কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির (শেয়ার লেনদেনে আইন লঙ্ঘন) অভিযোগে ৯ ব্যক্তি ও ৯ প্রতিষ্ঠানকে মোটি ১৮৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনেছে এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। শেয়ার কারসাজি করা কোম্পানি দুটি হলো- সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড ও সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
বিএসইসি‘র একটি সূত্র সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা ও ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত সময়ে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার যোগসাজোশের মাধ্যমে কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো একাধিক বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব খুলে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন- বলে বিএসইসির তদন্তে উঠে এসেছে।
বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা শেয়ার কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সি পার্ল বিচ রিসোর্ট: কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির অভিযোগে ৯ প্রতিষ্ঠান এবং ৪ ব্যক্তিকে মোট ১৮৭ কোটি ২২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা করা ব্যক্তিদের মধ্যে মো. কালাম হোসেনকে ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অন্যদের মধ্যে আবু সাদাত মো. ফয়সালকে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, জামরুল হাসান মো. ইকবাল গণিকে ১ লাখ টাকা এবং মো. আবু নাঈমকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা করা ৯ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইউডিসি কনস্ট্রাকশনকে ৬৮ কোটি ১ লাখ টাকা, ভেনাস বিল্ডার্সকে ৬৯ কোটি ১ লাখ টাকা, সাতরং অ্যাগ্রো ফিশারিজকে ২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা, হৃদয় পোল্ট্রি ফার্মকে ১০ লাখ টাকা, হাসান নার্সারিকে ২ লাখ টাকা, আমানত অ্যাগ্রো ফিশারিজকে ৪০ লাখ টাকা, সাব্বির স্টোরকে ১০ লাখ টাকা, সরকার অ্যাগ্রো ফার্মকে ১ লাখ টাকা এবং মুক্তা ফিশারিজকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তদন্তে ১ জুলাই ২০২২ থেকে ১০ আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত সময়কাল অন্তর্ভুক্ত ছিল, যে সময়কালে কারসাজিকারীরা বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করেছে। ৩ জুলাই ২০২২ তারিখে সি পার্লের শেয়ারের দাম ছিল ৪৩.৫০ টাকা, যা ১০ আগস্ট ২০২৩ তারিখে অস্বাভাবিক ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২১৭.৪০ টাকায় পৌঁছে যায়।
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স: কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির অভিযোগে ৫ ব্যক্তিকে মোট ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা করা ব্যক্তিদের মধ্যে নূরজাহান বেগমকে ১ লাখ টাকা, সাজিদুল হাসানকে ৭৫ লাখ টাকা, সায়েদুর রহমানকে ১ লাখ টাকা, ফেরদৌসি বেগমকে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ও লুতফর রহমানকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তদন্তে ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত সময়কালে কারসাজিকারীরা বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করেছে। ১৭ এপ্রিল ২০২২ তারিখে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম ছিল ৬২.১০ টাকা, যা ১২ জুন তারিখে অস্বাভাবিক ৭৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১১১.৫০ টাকায় পৌঁছে যায়।
কারসাজির পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির সিদ্ধান্ত : অভিযুক্তদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব থেকে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা ও সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিপুল সংখ্যক শেয়ার লেনদেন করে। এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যেমে তারা একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি ও পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ের জন্য প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। যার ফলে শেয়ারটির বাজার মূল্য অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সুস্পষ্ট সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন।
শেয়ার কারসাজিতে জড়িতদের বক্তব্য এবং তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, উপস্থাপিত অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থী, সেহেতু এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। যেহেতু অভিযুক্তদের কর্মকাণ্ড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) এবং সেকশন ১৭(ই)(২) লংঘন করেছে, যা সিকিউরিটিজ আইনের পরিপন্থী। যেহেতু অভিযুক্তরা উপর্যুক্ত কর্মকাণ্ড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ: যেহেতু, কমিশনের বিবেচনায়, সিকিউরিটিজ আইন ও বিধি-বিধান পরিপালনে আলোচ্য ব্যর্থতার জন্য, পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং জনস্বার্থে আলোচ্য ব্যক্তিদের জরিমানা করা হলো।
সারাবাংলা/জিএস/আরএস
পুঁজিবাজার বিএসইসি সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড ও সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড