সাফ চ্যাম্পিয়ন ঋতুপর্ণার ঘর নির্মাণে বাধা দিচ্ছে কারা?
২৩ মার্চ ২০২৫ ১৬:৩৯ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫ ১৭:৩৯
রাঙ্গামাটি: ২০২২ ও ২০২৪ সালে টানা দুইবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ বিজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কৃতী খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমার জন্য প্রশাসনের বরাদ্দকৃত জমিতে বসতঘর তুলতে বাধার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে আক্ষেপ করে শনিবার (২২ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। তবে কারা বসতঘর করতে বাধা দিচ্ছেন তা খোলাসা করেননি তিনি। এ নিয়ে ঋতুপর্ণা চাকমা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কারা বাধা দিচ্ছে; সে প্রসঙ্গে স্পষ্ট করে বক্তব্য জানায়নি কেউই। তবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন ইউএনও।
ঋতুপর্ণা চাকমা ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘২০২২ সালে প্রথমবারের মতো যখন সাফ চ্যাম্পিয়ন হই। তখন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিভাগের আমরা পাঁচ সদস্য ছিলাম। আমি আর রূপনা চাকমা রাঙ্গামাটি জেলার আর বাকি তিনজন খাগড়াছড়ি। রাঙ্গামাটি জেলা আমাদের পাঁচজনকে রাজকীয়ভাবে সংবর্ধনা এবং সম্মানিত করেন। সেসময় স্বয়ং জেলা প্রশাসক আমার নিজ গ্রামের বাড়িতে এসেছেন, আমার ঘরবাড়ি ও যাতায়াতের অবস্থান দেখে যান। তখন রুপনা চাকমাকে বাড়ি নির্মাণ করে দেন জেলা প্রশাসন। যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সব-ই বাস্তবায়ন করে দেন। আমাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো আমার কি চাওয়া পাওয়া আছে প্রশাসন থেকে, তখন আমি চেয়েছিলাম আমার এলাকাবাসীর সুবিধার্তে যাতায়াতের জন্য রাস্তা করে দেওয়ার জন্য। কারণ আমার বাড়ির যাওয়ার রাস্তা নেই। আমি আমার নিজের জন্য কিচ্ছু চাইনি। রাঙামাটি জেলা প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছিলেন রাস্তা সংস্কার করে দিবেন। সেই সঙ্গে আমাকে জায়গাসহ বাড়ি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। স্বয়ং আমাকে ডেকে নিয়ে ঘাগড়া বাজারে খাস জায়গা নির্ধারণ করেছেন এবং জায়গাটা আমারও পছন্দ হয়, সবকিছু ঠিকটাক হয়। যাইহোক রুপনার সবকিছু বাস্তবায়ন হয়েছে, আমার মনেও বিশ্বাস, আশা ছিল প্রশাসনের কাছ থেকে আমারও সবকিছু বাস্তবায়ন হবে। দুঃখের বিষয় আমার কোনোকিছু বাস্তবায়ন হয়নি। যাইহোক ঐ বিষয় নিয়ে আমি আর মাথা ঘামাইনি, অনুশোচনাও হয়নি। ২০২২ গেল সবকিছু ভুলে গেলাম, আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে মনোযোগী হই।’
তিনি আরও লিখেন, ‘২০২৪ দ্বিতীয়বারে মতো বাংলাদেশ সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় পুরস্কার জিতেছি। দ্বিতীয়বারের মতো দেশবাসী সবাই মিলে আনন্দ, উল্লাস ভাগাভাগি করে উদযাপন করি। একইভাবে ২০২২ সালে যেভাবে আমাদের সংবর্ধনা দিয়েছিলেন, ঠিক দ্বিগুণ সেভাবে-ই আমাদের রাজকীয়ভাবে সংবর্ধনা এবং সম্মানিত করেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন। ২০২২ সালে যে আমাকে মিথ্যা আশ্বাস এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এই নতুন বাংলাদেশ, এই নতুন প্রশাসনের কাছ থেকে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল বিগত ২০২২ সালে জায়গাসহ বাড়ির করে দেওয়া এবং যাতায়াতের জন্য রাস্তা সংস্কার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেই-টা বাস্তবায়ন হবে। দেরিতে হলেও কিছুদিন আগে আমাকে ইউএনও মহোদয় কাজী আতিকুর রহমান স্যার খুশির সংবাদটি জানিয়ে দেন, আমার এলাকার গ্রামবাসীর জন্য রাস্তা নির্মাণ বাবদ রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ হতে ইতোমধ্যে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। একমাস আগে জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদ সদস্য রাস্তাটি পরিদর্শনও করেছেন। ইউএনও স্যারের উনার নিজ উদ্যোগে আমার বাড়িতে সুপেয় পানির জন্য নিজেই গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাকে একটা ঘর নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। প্রশাসন রাস্তা এবং জায়গাসহ বাড়ির করে দেওয়ার অনুমোদন সম্মতি দিয়েছেন। আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রশাসনকে, খুব-ই এক্সাইটেড ছিলাম সংবাদটা শুনে। এতোদিন পর প্রশাসন আমাকে বাড়ি করে দেওয়ার সদয় সম্মতি দিয়েছেন।’
তিনি আরও লেখেন, ‘কিন্তু এরমধ্যে আমি শুনতে পাচ্ছি কোনো এক মহল থেকে বাধা আসতে শুরু করেছে। তাহলে কি আমার ঘাগড়ায় কোনো ঠাঁই নেই?? এখন আমার অনুশোচনা হচ্ছে, ২০১৭ সাল থেকে আমি দেশের জন্য খেলতেছি দেশের প্রতিনিধিত্ব করতেছি, নিজে জেলার মানুষের কাছে মূল্যায়নটা পাইলাম কই?? লিখায় যদি ভুলক্রটি থাকে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ’
কারা বসতঘর তুলতে বাধা দিচ্ছে- জানতে চাইলে ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন, ‘২০২২ সালে প্রথম সাফ জয়ী হওয়ায় পরে আমাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়ি ও বাড়ি যাওয়ার রাস্তা করে দেওয়াসহ নানা আশ্বাস দেওয়া হয়। এরপরে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা বদলি হয়ে গেলে সেই আশ্বাস শুধু আশ্বাসে থেকে যায়। আমিও এত মাথা ঘামাইনি এগুলো নিয়ে। পরে আবার ২০২৪ সালে সাফ জয়ী হওয়ায় পরে রাঙ্গামাটিতে আমাদের সংবর্ধনা দেওয়া হলে সেখানে আমি আমার সমস্যাগুলো তুলে ধরি এবং জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা আমাকে একটা ঘর ও রাস্তা করে দিবেন বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত পরশু আমাকে ইউএনও স্যার ডেকে নিয়ে ঘাগড়া বাজারে আমাকে বাড়ি করেও দেওয়ার জায়গায় দেখায় এবং জায়গাটি মাপ দেওয়া হয়। সেই জায়গাটা আমাকে দেওয়া হবে এবং আমার ঘর নির্মাণ করে হবে বলে জানান।’
ঋতুপর্ণা আরও বলেন, ‘পরদিন আমি বাড়িতে আসলে আমাকে বলা হলো সেই জায়গাটা নাকি ৭০ জনের মতো একটা কমিটির দখলে। সেই জায়গাটা যদি নিই তাহলে আমি বির্তকিত হবো এবং নানা ধরনের কর্থাবাতা বলা হয় আমাকে। যদিও আমি তারা কোনো কমিটির এবং তারা কে- এসব কিছু জানি না। বিষয়টি আমি ইউএনও এবং এডিসিকে (অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক) জানিয়েছি। বিষয়টি তারা দেখতে বলে আমাকে জানানো হয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাজী আতিকুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। গত কয়েকদিন আগে আমি ঋতুপর্ণাসহ সেই জায়গাটা দেখে আসছি। কাল (শুক্রবার) বিকেলে শুনেছি কেউ একজন ঋতুপর্ণাকে ফোন করে বলেছে যে, সেই জায়গাটা ওরা একজনের থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় কিনে নিয়েছে এখন ঋতুপর্ণা যদি ৭ লাখ টাকা দেয় তাহলে সে জায়গাটা পাবে। না হলে সেখানে ঘর নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। শুনে আমি আশ্চর্য্য হলাম যে, খাস জায়গায় তো দখলে নেওয়ার সুযোগ নেই। তাদের যদি জায়গা নিয়ে আপত্তি থাকে তাহলে তারা আমাদের কাছে আসুক। প্রশাসনের পক্ষে থেকে ঋতুপর্ণাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে আমরা বিষয়টি দেখতেছি। ইতোমধ্যে এডিসি স্যারের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, কেউ বললে তো আর হবে না আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘ঋতুপর্ণা চাকমার ফেসবুক পোস্টটি আমাদের নজরেও এসেছে। আমরা সরকারি জায়গা সরকারি টাকায় বরাদ্দ দিয়েছি। আমরা তাকে (ঋতুপর্ণা) ঘর তুলে দেব। এখানে অন্য কারোর সুযোগ নেই কিছু করার। যারা বলেছে তারা কী বুঝে বলেছে নাকি না বুঝে বলেছে সেটা আমরা বলতে পারব না।’ কারা বাধা দিচ্ছে- জানতে চাইলে এডিসি বলেন, ‘এ বিষয়টি আমরা খোঁজখবর নেব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব।’
প্রসঙ্গত, ঋতুপর্ণা চাকমার গ্রামের রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুর্গম মগাছড়ি গ্রামে। তবে গ্রামের বাড়ি মগাছড়িতে হলেও তার যাতায়াতের সুবিধার্তে উপজেলার ঘাগড়া বাজারের পাশেই সরকারি খাস জায়গা বরাদ্দ দেয় প্রশাসন।
সারাবাংলা/এইচআই
ঋতুপর্ণা চাকমা কৃতী খেলোয়াড় নারী ফুটবল দল রাঙ্গামাটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ