Monday 24 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘যৌবন হারিয়েছে’ প্রমত্ত পদ্মা, কমেছে পানির প্রবাহ

ডিস্ট্রিক্ট করসপন্ডেন্ট
২২ মার্চ ২০২৫ ১৬:৪১ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫ ১৬:৪৪

পদ্মার চিরচেনা রূপ ও জৌলুস হারিয়ে জেগেছে চর

রাজশাহী: রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের জীবিকার অন্যতম আশ্রয়স্থল ছিল পদ্মা নদী। এক সময় এই নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন জেলেরা। কয়েক দশক আগেও দূর থেকে শোনা যেত প্রমত্তা পদ্মার গর্জন। পদ্মার অববাহিকায় গড়ে উঠেছে এ অঞ্চলের সভ্যতা ও সংস্কৃতি। পদ্মার সেই যৌবন আর নেই। হারিয়েছে চিরচেনা রূপ ও জৌলুস। পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় আয়তন কমেছে অর্ধেক, কমেছে গভীরতাও। প্রমত্তা পদ্মা এখন শুধু ‘মরুভূমি’।

বিজ্ঞাপন

পদ্মার পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদ। আবাসস্থল হারিয়েছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। একইসঙ্গে প্রতিবছর নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষিজমিতে সেচ এবং খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিচ্ছে।

পানির গভীরতা অনেক কমে গেছে, পাশাপাশি প্রবাহ কমেছে ২৬ দশমিক ২ শতাংশ

আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড কনজারভেশন’ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, ১৯৮৪ সালের তুলনায় শুকনো মৌসুমে পদ্মা নদীর আয়তন কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। পানির গভীরতা কমেছে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ। পাশাপাশি প্রবাহ কমেছে ২৬ দশমিক ২ শতাংশ।

অন্যদিকে মিঠা পানির সরবরাহ কমেছে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত। এ ছাড়া পদ্মা অববাহিকায় বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৯ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। অববাহিকায় বেড়েছে তাপমাত্রা। ১৯৮১ সালে রাজশাহী অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৯ সালে সেটি বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৬ দশমিক ২ ডিগ্রি।

রাজশাহী অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ১২৫ ফুট নিচে অবস্থান করছে। গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। রাজশাহী এবং এর পাশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার বরেন্দ্র এলাকায় শীতেই পানি শূন্যতায় চৌচির হয়ে পড়েছে খাল, বিল এবং পুকুর। খাওয়ার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

অতীতে যে জায়গাগুলো পানির নিচে তলিয়ে থাকত, এখন সেসব জায়গায় মানুষ যাচ্ছে, ছবি তুলছে

রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে চারঘাটের সরদহ পর্যন্ত পদ্মার ৭০ কিলোমিটার অংশ নিয়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। ওই এলাকার নয়টি পয়েন্টে মৎস্য প্রজাতির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পদ্মা পাড়ের ২৭টি জেলেপল্লি থেকে নেওয়া হয় জীবন-জীবিকার তথ্য। স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে পদ্মার বর্তমান চিত্র তুলে আনার চেষ্টা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষাকালেও প্রবাহ কমেছে পদ্মায়। ফারাক্কা চালুর আগে বর্ষায় পানির গড় প্রবাহ ছিল সেকেন্ডে ১২ হাজার ১১৫ ঘনমিটার। বর্তমানে এ প্রবাহ নেমে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৮২৭ ঘনমিটারে।

গবেষকরা আরও জানান, ১৯৮০ সালে পদ্মা অববাহিকায় দৈনিক গড় বৃষ্টিপাত ছিল ৫ দশমিক ২ মিলিমিটার। ২০১৯ সালে এসে দৈনিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ দশমিক ২ মিলিমিটারে। গত ৩০ বছরে বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পঞ্চাশ থেকে ষাট ফুট নিচে নেমে গেছে।

শুকনো মৌসুমে পদ্মা নদীর আয়তন কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, রাজশাহীতে বন্যাকালীন পদ্মায় পানির উচ্চতা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। তবে নভেম্বরে পদ্মায় পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৬ মিটার। ডিসেম্বরে উচ্চতা ছিল ৫ দশমিক ৩৭ মিটার এবং জানুয়ারিতে পদ্মার পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ৪ দশমিক ৫৫ মিটার। ফেব্রুয়ারিতে পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ৩ দশমিক ৭১ মিটার ও মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাওয়া যায় ৩ দশমিক ৯১ মিটির। এপ্রিল ও মে মাসে এই উচ্চতা আরও কমবে এবং প্রায় পুরো পদ্মা শুকিয়ে যাবে বলে জানিয়ে পাউবো।

গবেষক দলের সদস্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামস মুহা. গালিব বলেন, ওই প্রবন্ধে আমরা ১৯৮২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পদ্মার হাইড্রোলজিক্যাল, জলবায়ু ও নৃতাত্ত্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে মৎস্য প্রজাতির সম্পর্কের প্রক্রিয়া অনুসন্ধান করেছি। তাতে পদ্মার আয়তন অর্ধেক কমে যাওয়ার তথ্য বের হয়ে আসে। জীববৈচিত্র্য বিরূপ প্রভাবের কারণে এ অঞ্চলের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। পদ্মায় এখন আর তেমন ইলিশ পাওয়া যায় না। ফারাক্কা চালুর আগে পদ্মায় ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ ছিল সুলভ। পদ্মা অববাহিকতার হাজার হাজার জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মাছ না পাওয়ায় গত ৫ দশকে জেলেদের ৪ ভাগের ৩ ভাগই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসাইন বলেন, পদ্মায় এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। শুশুক ও ঘড়িয়ালের যে একটা বড় প্রজনন ক্ষেত্র ছিল তা এখন আর নেই বললেই চলে। আগে পদ্মায় বড় ইলিশ পাওয়া যেত। এখন কিছু ইলিশ মিললেও আকারে ছোট।

সারাবাংলা/এইচআই

নদীর আয়তন কমেছে পদ্মা পানির প্রবাহ প্রমত্ত পদ্মা যৌবন হারিয়েছে রাজশাহী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর