জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিট নিয়ে যা বলল বিএনপি
২২ মার্চ ২০২৫ ১৩:১৬ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫ ১৭:০০
ঢাকা: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো স্প্রেডশিট নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘স্প্রেডশীট এ যে অপশন/ পছন্দগুলোর ঘরে টিক চিহ্ন দিতে বলা হয়েছে তাতে একটি বিষয় প্রতিভাত হয়েছে যে, যে বিষয়গুলো প্রস্তবাকারে আসতে পারতো তা প্রস্তাব না রেখে Leading Question এর আকারে হ্যাঁ, না, উত্তর দিতে বলা হয়েছে।
‘যেমন, প্রস্তাবগুলো গণপরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চাই কি না? হ্যাঁ অথবা না বলুন। কিন্তু প্রথমে সিদ্ধান্ত আসতে হবে যে, গণপরিষদের প্রস্তাবে আমরা একমত কিনা? একইভাবে ‘গণভোট’, ‘গণপরিষদ এবং আইন সভা’ হিসাবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চাই কিনা ইত্যাদি হ্যাঁ, না বলুন’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (২২ মার্চ) সকালে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংবিধানের ‘প্রস্তাবনার’ (Preamble) মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশে থাকলেও তা স্প্রেডশিটে উল্লেখ করা হয় নি। স্প্রেডশিটে ৭০টির মত প্রস্তাব উল্লেখ করা হলেও মূল প্রতিবেদনে সুপারিশ সংখ্যা প্রায় ১২৩টির মত।’’
‘‘একইভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১৫০টির মতো সুপারিশ তুলে ধরা হলেও স্প্রেডশিটে মাত্র ২৭টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশই সংবিধান সংস্কারের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই আমরা মনে করছি, স্প্রেডশিটের সাথে মূল সুপারিশমালার ওপর আমাদের মতামত সংযুক্ত করে দিলে বিভ্রান্তি এড়ানো যাবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটের অবস্থা এবং কমিশন সদস্যদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য বিবৃতির মধ্যে মিল পাওয়া যায়, যাতে জনমনে প্রশ্নের জন্ম হতে পারে যে, সকল বিষয় যেন একটি পূর্ব নির্ধারিত কর্মপরিকল্পনার অংশ; যা গণতন্ত্রের স্বার্থের পক্ষে কিনা বলা মুশকিল। সুপারিশমালা পর্যালোচনায় প্রতিয়মান হয় যে, এতে ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের অযৌক্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে, যা অনভিপ্রেত।’’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সুপারিশমালায় সাংবিধানিক কমিশনসহ (এনসিসি) নতুন নতুন বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সমস্ত কমিশনের এখতিয়ার, কর্মকাণ্ডের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তাতে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে যতটা সম্ভব Undermining করা এবং ক্ষমতাহীন করাই উদ্দেশ্য, যার ফলশ্রুতিতে একটি দুর্বল ও প্রায় অকার্যকর সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র, জনগণের মালিকানার প্রতিফলন হয় নির্বাচিত সংসদ এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। কিন্তু সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ পর্যালোচনা করলে প্রতিয়মান হয় যে, রাজনীতিবিদরা অপাংতেয় এবং অনির্বাচিত লোকদেরই দেশ পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করা শ্রেয়।’’
‘‘জনগণের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য, কৃষ্টি এবং সংস্কৃতি ও ধর্মবোধ এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েই বিভিন্ন সংস্কার ও সাংবিধানিক সংশোধনী প্রণীত হওয়া বাঞ্ছনিয়’’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘‘ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে সমুন্নত রেখে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের ফ্যাসীবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জুলাই গণঅভ্যূত্থানের শহীদদের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই বর্তমান সময়ের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। বৃহত্তর জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সকল সংস্কার প্রচেষ্টা পরিচালিত হবে – এটাই জাতীয় প্রত্যাশা।’’
‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো স্প্রেডশিট বিএনপি মতামতা দেবে কিনা?’— এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আমরা রেসপন্স করছি, যেটাতে ‘হ্যাঁ’ দেওয়া দরকার ‘হ্যাঁ’ দিচ্ছি, যেটাতে ‘না’ দেওয়ার দরকার ‘না’ দিচ্ছি। সেই সাথে আমাদের মতামতগুলো তুলে ধরছি। আমরা টোটালি কো-অপারেট করছি।’’
‘তারেক রহমানে সব মামলা আইনি প্রক্রিয়ায় শেষ হয়েছে। এখন তিনি দেশে আসবেন কিনা। আসলে কবে নাগাদা আসবেন?’— এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘‘এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ আমরা নির্ধারণ করিনি। আমাদের যখন মনে হবে এখন উপযুক্ত সময়, সেই সময় তিনি আসবেন।’’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সারাবাংলা/এজেড/ইআ