ট্রেন আটকে, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের
২০ মার্চ ২০২৫ ১৫:২৯ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫ ১৭:২৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে রেললাইনে ট্রেন আটকে ও সড়ক অবরোধ করে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের কারণে কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও উত্তর চট্টগ্রামের রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আটকে পড়া ট্রেন ও সড়কে বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীদের গরমের মধ্যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) দুপুর ১২টা থেকে নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ঢাকা ছেড়ে আসা কক্সবাজারগামী ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ ট্রেন আটকে দেন। একইসঙ্গে রেললাইন সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে যানবাহন আটকে সড়কের উভয়পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
পুলিশের হস্তক্ষেপে দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক ও রেললাইন ছেড়ে যান।
ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর নিয়োগবিধি সংশোধন, ব্যবহারিক ক্লাসের প্রশিক্ষক পদের নাম ‘ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর’ না করাসহ সাত দফা দাবিতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি শুরু করেন।
আটকে পড়া পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী আলামিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো যাত্রী, সকাল ৬টার দিকে আমরা ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছি। রোজা-রমজানের দিন খুব কষ্ট পাচ্ছি। আমরা রোজাদার মানুষ। ছোট বাচ্চারা কষ্ট পাচ্ছে। আমরা প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে আটকে আছি।’
হোসাইন শামীম নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘সকাল ৬টায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে আমরা চট্টগ্রাম পৌঁছেছি সাড়ে ১১টার দিকে। আমরা যাব কক্সবাজার। আড়াই ঘণ্টার মতো এখানে আটকে আছি।’

নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
ফেরদৌসি আক্তার নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘রেলের যাত্রীদের আটকে রেখে কি দাবি আদায় হবে? আমরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। যদি বাসের কাউন্টার কাছে থাকতো আমি গাড়ি নিয়ে চলে যেতাম। আমার হাসবেন্ডও অসুস্থ।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আবু বক্কর সিদ্দিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুই নম্বর গেটে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা কক্সবাজারগামী একটি ট্রেন আটকে দিয়ে আন্দোলন করছে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ট্রেনটি সেখানে আটকে আছে। ওই রুট দিয়ে নাজিরহাটগামী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনও চলাচল করে। এখন ওই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।’
এদিন দুপুর ১২টায় নগরীর দুই নম্বর গেইট এলাকায় প্রথমে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন প্রায়ই দেড় শতাধিক পলিটেকনিক শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, শ্যামলী, এমআইটিসহ বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচিতে যোগ দেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘নন টেক, মুক্ত করো, কারিগরি পথ খুলো, ২৪ আমার অহঙ্কার, কারিগরি আন্দোলন আমার অহঙ্কার, মামা এখন মাস্টার, মামার বাড়ির আবদার, এক, দুই, তিন, চার, কারিগরিতে দুর্নীতি ছাড়’- সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীদের সাত দফা দাবি হলো- জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকতে হবে, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরসহ সকল পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ দিতে হবে, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের জন্য সকল বিভাগীয় শহরে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অতি শিগগিরই স্থাপন করতে হবে, কারিগরি শিক্ষা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর চাকরির আবেদন বাস্তবায়ন করতে হবে, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য প্রাইভেট সেক্টরে সর্বনিম্ন বেতন স্কেল নির্ধারণ করে দিতে হবে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ কোটা অনতিবিলম্বে বিলুপ্ত করতে হবে ও অবিলম্বে অযৌক্তিক রায় বাতিল করে পূর্বের নিয়োগ পদ্ধতি বহাল রাখতে হবে।
বিক্ষোভে আসা চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ইফতেখার উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চার বছর কষ্ট করে যে ডিপ্লোমা পাশ করব। আর ওরা এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে এসেছে আমাদের পড়াতে। ওরা কি জানে? ওরা ইঞ্জিনিয়ারিং এর কি জানে? ওরা সর্ব্বোচ্চ ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি পড়াবে আর কি। ওদের কীভাবে ৩০ শতাংশ কোটা দেয়।’
মাহাদি আফসার নামে আরেক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে রাতের আঁধারে নিয়োগ হয়েছে, যেটা ২০১৩ সালে হয়েছিল। তারা জেনারেল লাইন থেকে এসেছিল। আমরা চার বছর ধরে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি। ডিপ্লোমা শেষ করার পর সরকারি চাকরিতে দশম গ্রেড আমাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দশম গ্রেডের চাকরি শুধু ডিপ্লোমা পাশ শিক্ষার্থীদের। যারা এসএসসি বা এইচএসসি পাশ তারা কখনও দশম গ্রেডে আসতে পারবে না।’
‘তাদের গ্রেড ১৫ বা ১৬। তাদের নিয়োগ হয়েছে রাতের আঁধারে। আমরা এ ভুয়া নিয়োগ মানি না। জেনারেলে পড়ে যদি ওরাই আমাদের জায়গা নেই, তাহলে আমরা কেন ডিপ্লোমা পড়ছি। একজন এসএসসি পাশ করা ছেলে কীভাবে একজন ডিপ্লোমার শিক্ষার্থীকে পড়াবে এ যুক্তি কি মানা যায়?’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের কিছু দাবি নিয়ে সড়ক অবরোধ করেছিল। দুই ঘণ্টা তারা সড়ক অবরোধ করে রেখিছিল। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। দুপুর আড়াইটার দিকে তারা সড়ক ছেড়ে দেন। এখন যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।’
সারাবাংলা/আইসি/ইআ