Saturday 05 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বসন্তেই বাজারে অপরিপক্ক তরমুজ!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৭ মার্চ ২০২৫ ০৯:৩৫ | আপডেট: ৭ মার্চ ২০২৫ ১১:৩৬

নগরীর সাহেববাজার থেকে তরমুজ কিনছেন এক ক্রেতা। ছবি: সারাবাংলা

রাজশাহী: তরমুজের মৌসুম শুরু হয় চৈত্রের শেষে ও বৈশাখের শুরুতে। অর্থাৎ, এপ্রিল মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত তরমুজ পাওয়া যায়। কিন্তু বাজারে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে দেখা মিলছে তরমুজের। প্রকৃতিতে এখনও শীতের আমেজ থাকায় দাম ও বিক্রি দুটিই কম বলে জানিয়েছেন তরমুজ বিক্রেতারা। তবে রমজান মাসে বাড়বে তরমুজের দাম।

ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, এসব তরমুজ অপরিপক্ক। খাওয়ার অনুপোযোগী। বিক্রেতা বলছেন, এগুলো বারোমাসি তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে। মৌসুম শুরু হলে আবারও তরমুজ উঠবে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ থেকে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুর, রেলগেট, রেলস্টেশন ও শিরোইল, সাগরপাড়াসহ বিভিন্ন বাজারে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। নগরীর শালবাগান পাইকারী আড়ত থেকে তরমুজ কিনে খুচরা বাজারে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছেন ফল ব্যবসায়ীরা। খুচরায় প্রতি কেজি ৬০ টাকা দর হাঁকা হচ্ছে এসব তরমুজের।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৫ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত ওজনের তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বাজার, পাড়া ও মহল্লার মোড়ের দোকানে ছোট ও মাঝারি আকারের তরমুজ বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। গেল বছর বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়েছিল। শেষ সময়ে ৩০ টাকাতেও বিক্রি করতে হয়েছিল ব্যবসায়ীদের।

নগরীর সাহেববাজার থেকে তরমুজ কিনছিলেন খরবোনা এলাকার বাসিন্দা আশিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বসন্ত শুরু হলেও এখনও শীত আছে। রাতে ও ভোরে টের পাওয়া যাচ্ছে। মৌসুমী ফল বলে সন্তানদের জন্য তরমুজ কিনেছি। বিক্রেতা বললেও দেখে মনে হচ্ছে কাঁচা আর অপরিপক্ক হবে। বাড়িতে গিয়ে দেখতে হবে কেমন স্বাদ হয় তরমুজের।

বিজ্ঞাপন

তরমুজ নিয়ে কয়েক বছর ধরে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে চলছে এক ধরনের অসন্তোষ। বিক্রেতারা পিস হিসাবে কিনে বিক্রি করছেন কেজি দরে। গত কয়েক বছরেও এ বিষয়ে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি বাজার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ২০২১ সালে করোনা মহামারির সময় পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রির নির্দেশ দিয়েছিল প্রশাসন। এরপর আর তরমুজ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

বিক্রেতা সাগর আলী বলেন, অন্য বছরের চেয়ে অনেক আগেই এবার বাজারে তরমুজ এসেছে। আগাম জাতের তরমুজ চাষ করেছেন অনেক চাষি। আমরাও লাভের আশায় পাইকারি কিনে খুচরা বিক্রি করছি। এসব তরমুজ আমদানি করা হচ্ছে বরিশাল থেকে। পর্যায়ক্রমে এসব তরমুজ বিভিন্ন জেলা থেকে আরও আসবে।

আগাম জাতের কালা, বাংলালিংক, গ্রামীণ, আনারকলি, অলক্লিন, চায়না-২, এশিয়ান-২, বালিসহ বিভিন্ন জাতের তরমুজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এ অঞ্চলে গরম বেশি পড়ায় তরমুজের ব্যাপক চাহিদা থাকে। তবে এবার আবহাওয়া অন্যরকম থাকায় ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়তে পারেন।

সাগরপাড়ায় রহমত আলী নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ছোট সাইজের তরমুজের ওজন হয়েছে চার কেজি। ৬০ টাকা কেজিতে দাম এসেছে ২৪০ টাকা। কিন্তু এই তরমুজের দাম কোনোভাবেই ১২০ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। ভালো হতো পিস হিসাবে কিনতে পারলে। দেশের জনগণকে নিয়ে ব্যবসায়ীরা তামাশা শুরু করেছেন। এসব দেখার যেন কেউ নেই দেশে।

বিক্রেতারা বলছেন, আগামী মাসের মাঝামাঝি থেকে পুরোদমে তরমুজের মৌসুম শুরু হবে। তখন দাম কিছুটা কমবে। নগরীর শালবাগান এলাকার ফলের আড়তদার শাহজামাল বলেন, এ সময় যে ১০০ তরমুজ ২৫ হাজার টাকায় থেকে কেনা যেত। এবার তা একই দামে আছে। গত বছরে পাইকারি আমরা ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। এবার একটু কম। চাহিদা থাকায় এসব তরমুজ আনতে হচ্ছে। এবছরেও আমরা ৫০ টাকা কেজিতে পাইকারি বিক্রি করছি।

আড়তদাররা বলছেন, এসব তরমুজ বরিশাল বিভাগ নিয়ে আসা হচ্ছে। বরগুনা ও ভোলা থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে তরমুজ। এরপর নিয়ে আসা হবে খুলনা ও চুয়াডাঙ্গা থেকে। নাটোরের তরমুজ সব শেষে নিয়ে এসে বিক্রি করা হয়।

কৃষি বিভাগ বলছে, দেশে তরমুজ সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে ওঠে। এটাই তরমুজের প্রধান মৌসুম। কিন্তু সম্প্রতি বাজারে এ সময় ছাড়া অন্য সময়েও তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে মে থেকে সেপ্টেস্বর পর্যন্ত এ তরমুজ বেশি পাওয়া যায়। এ তরমুজকে অনেকে নাম দিয়েছেন ‘বারোমাসি তরমুজ’। তরমুজ-গুলো অসময়ে ওঠার কারণে চাষিরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। কোনো স্থানে হলুদ রঙের খোসার অ-মৌসুমি তরমুজেরও চাষ হচ্ছে। দিন দিন অ-মৌসুমে তরমুজ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

উল্লেখ্য, রাজশাহীতে খুব কম পরিমাণ জমিতে তরমুজের চাষ হয়ে থাকে। গ্রীষ্মের তরমুজ এখনও বাজারে আসেনি, সেগুলো মিলবে আরো দেড় মাস পর গ্রীষ্মকাল শুরু হলে। এখন যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো আগাম জাতের তরমুজ।

সারাবাংলা/এনজে

তরমুজ মৌসুম রাজশাহী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর