আ.লীগের ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে গণপিটুনির নামে কুপিয়ে খুন: জামায়াত
৪ মার্চ ২০২৫ ১৯:১০ | আপডেট: ৪ মার্চ ২০২৫ ২১:১৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় গণপিটুনিতে দুই কর্মী নিহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান ও তার দুই ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করেছে জামায়াতে ইসলামী।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটির স্থানীয় নেতারা এ অভিযোগ করেছেন। সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াতের আমীর কামাল উদ্দিন ও সেক্রেটারি মুহাম্মদ তারেক হোছাইন, কাঞ্চনা ইউনিয়নের আমীর আবু তাহের ও সেক্রেটারি জায়েদ হোসেন, এওচিয়া ইউনিয়নের আমীর আবু বক্কর ও সেক্রেটারি ফারুক হোসাইন যৌথভাবে এ বিবৃতি পাঠিয়েছেন।
দলটির স্থানীয় নেতারা বলেছেন, সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের নির্দেশে তার দুই ভাই মমতাজ ও হারুনের পরিকল্পনায় দুই জামায়াত কর্মীকে গণপিটুনির নামে খুন করা হয়েছে।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক সাতকানিয়ার আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেহা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নদভী বর্তমানে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। আর আওয়ামী লীগের মেয়াদে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত নজরুল ইসলাম মানিক বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন বলে জানা গেছে।
সোমবার (৩ মার্চ) রাতে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের চূড়ামণি গ্রামের ছনখোলা এলাকায় গণপিটুনিতে দুজন নিহত হন। এ সময় গোলাগুলিতে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন।
নিহতরা হলেন, মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (৪৫) ও মোহাম্মদ ছালেক (৩৫)। এদের মধ্যে নেজাম উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের মধ্যম কাঞ্চনা এলাকার মাহমুদুল হকের ছেলে। আর ছালেক একই ইউনিয়নের গুরগুরি এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ৪-৫টি সিএনজি অটোরিকশায় করে নেজাম ও ছালেকসহ অন্তত ১২ জন যুবক ছনখোলা এলাকায় যান। তারা ওই গ্রামের দোকানের সামনে অটোরিকশা থেকে নামেন। তখন মসজিদের মাইক থেকে এলাকায় ডাকাত এসেছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
এ ঘোষণায় গ্রামের লোকজন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। অনেকে তারাবির নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হন। তারা নেজামদের ঘিরে ফেললে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। গুলিবর্ষণের মধ্যেই অটোরিকশায় করে অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও গ্রামবাসী নেজাম ও ছালেককে ধরে বেধড়ক মারধর করে। এতে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন। আর গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচজন আহত হন।
দুজন নিহতের ঘটনা নিয়ে সংবাদপত্রে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে জামায়াতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ ঘটনা একটি পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা গ্রাম অনেক আগে থেকেই একটি সন্ত্রাসকবলিত এলাকা। এওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক ছনখোলা গ্রামের পাহাড়, পাহাড়ি গাছ ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে নিতে একাধিকবার সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। গ্রামের অনেক মানুষকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অসংখ্য মামলা দিয়েছে। সাধারণ মানুষের পাহাড়, ভূমি জবরদখল করেছিল।
‘এলাকার মানুষ তার অত্যাচার-নিপীড়নে অতীষ্ঠ হয়ে তাকে বয়কট করে। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী সরকার ও প্রসাশনের সহযোগিতার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী হাসিনার পতনের পর মানিক এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করলেও তার বাহিনী ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। মানিকের ভাই হারুন ও মমতাজের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ সন্ত্রাসীরা এখনো নানা অপকর্মে জড়িত।
‘গত (সোমবার) রাতে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামী দুঃশাসনে নির্যাতিত ব্যবসায়ী নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেককে বিচারের কথা বলে ডেকে নিয়ে মাইকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ডাকাত আখ্যা দিয়ে গণপিটুনির নামে মূলতঃ চেয়ারম্যান মানিকের নির্দেশে তার ভাই মমতাজ ও হারুনের পরিকল্পনায় কুপিয়ে দুজনকে জঘন্যতম কায়দায় হত্যা করেছে, যা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
জামায়াত নেতারা আরও বলেন, ‘২০১৬ সালে মানিক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে জামায়াতের কর্মী কাঞ্চনার আবুল বশরকে নির্মমভাবে ছনখোলাতে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা অবিলম্বে চিহ্নিত খুনিদের গ্রেফতার, ঘটনার গডফাদারদের বিরুদ্ধে মামলা ও বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানাই।’
সারাবাংলা/আরডি/এমপি