আজ রক্তাক্ত সলঙ্গা বিদ্রোহ দিবস, জাতীয়ভাবে পালনের দাবি
২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:১৩ | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:১৭
সিরাজগঞ্জ: আজ ২৭ জানুয়ারি রক্তাক্ত সলঙ্গা বিদ্রোহের ১০২তম দিবস । ১৯২২ সালের এই দিনে তৎকালিন বৃটিশ সরকারের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনীর গুলিতে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা হাটে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার নিরস্ত্র বাঙালি শহিদ হন। সেই থেকে এদিনটি রক্তাক্ত সলঙ্গা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে দিবসটি জাতীয়ভাবে পালন ও ‘সলঙ্গা’কে উপজেলা দাবি জানিয়েছেন সলঙ্গাবাসী।
যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন উপলক্ষে মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ পাঠাগার, নূরুননাহার তর্কবাগীশ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, তর্কবাগীশ মহিলা মাদ্রাসা, তর্কবাগীশ উচ্চ বিদ্যালয় ও সলঙ্গা ফোরাম পৃথক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, র্যালি, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ।
তৎকালীন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী অসহযোগ আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলনে জনতা উদ্বেলিত হয়ে বিলেতি পণ্য বর্জন করে স্বদেশি পণ্য ব্যবহারের সংগ্রাম শুরু করেছিল। যার ঢেউ লেগেছিল সিরাজগঞ্জ জেলার সলঙ্গায়ও।
১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার ছিল বড়হাট বার। মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশের নেতৃত্বে অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনের কর্মীরা হাটে বিলেতি পণ্য কেনা-বেচা বন্ধ করতে নেমে পড়েন। আর এ স্বদেশি আন্দোলনের কর্মীদের রুখতে ছুটে আসে পাবনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আর এন দাস, জেলা পুলিশ সুপার ও সিরাজগঞ্জ মহকুমা প্রশাসক এস কে সিনহার নেতৃত্বে ৪০ জন সশস্ত্র লাল পাগড়ীওয়ালা পুলিশ।
সলঙ্গার গো হাটায় ছিল বিপ্লবী স্বদেশি কর্মীদের অফিস। পুলিশ কংগ্রেস অফিস ঘেরাও পূর্বক গ্রেফতার করে মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশকে সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুক্ত করতে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিদ্রোহে ফেটে পড়ে সলঙ্গার সংগ্রামী জনতা। জনতার ঢল ও আক্রোশ দেখে ম্যাজিস্ট্রেট জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য গুলি চালাতে নির্দেশ দেন। শুরু হয়ে যায় বুলেট বৃষ্টি। ৪০টি রাইফেলের মধ্যে মাত্র ১টি রাইফেল থেকে কোনো গুলি বের হয়নি। এ রাইফেলটি ছিল একজন বাহ্মন পুলিশের। এ সময় বিলেতীপণ্য বর্জন আন্দোলনে সাড়ে ৪ হাজার কর্মীসহ সাধারণ মানুষও নিহত হন।
সলঙ্গা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এম দুলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, আজ রক্তাক্ত সলঙ্গা বিদ্রোহের ১০২তম দিবস উপলক্ষে সিরাজগঞ্জে দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটিকে জাতীয়ভাবে পালন এবং সলঙ্গাকে উপজেলা করার দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। আমরা সলঙ্গাবাসী অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দিবসটিকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া দাবি জানাচ্ছি।
মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ গবেষণা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ও ইতিহাস গবেষক মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ বলেন, মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ শুধু সলঙ্গার জন্য নয়, তিনি দেশের জন্য আন্দোলন করেছিলেন। তার আন্দোলনের কারণেই আজ ঐতিহ্যবাহী সলঙ্গা হাটে লাখ লাখ টাকার পণ্য আমদানি-রফতানি হচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে দিবসটিকে জাতীয়ভাবে পালনের দাবি জানাচ্ছি।
সারাবাংলা/এসআর