‘রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাইলে সব ছেড়ে মাঠে আসুন’
২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:০৯ | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:২৪
ঢাকা: রাজননৈতিক দল গঠন করতে চাইলে সব কিছু ছেড়ে ছাত্র সমন্বয়কদের মাঠে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) লন্ডন সময় সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১টা) পূর্ব লন্ডনের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে তিনি এ আহ্বান জানান। খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামানায় আরাফাত রহমান কোকো মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এ দোয়া মাহফিল আয়োজন করে।
সমন্বয়কদের উদ্দেশে ডা. জাহিদ বলেন, ‘‘ক্ষমতার মসনদে বসে রাজনৈতিক দল করার চেষ্টা করবেন না। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে টাকা নিয়ে ডিস্ট্রিবিউট করে সংগঠক হবেন— ভালো কথা, কিন্তু রাজনৈতিক দল করতে হলে সব কিছু ছেড়ে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো মঠে আসুন, কর্মসূচি দিন। জনগণকে সংগঠিত করুন। জনগণ যাকে ভালো মনে করবে তাকে গ্রহণ করবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘নিজেদেরকে অতি বা প্রতি বিপ্লবী ভাবার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন, বিএনপির জন্ম জনগণের মধ্য থেকেই হয়েছে। খালেদা জিয়া এক দিনেই তৈরি হননি। আগুনে পুড়তে পুড়তেই আজকের বেগম খালেদা জিয়া।’’
জাহিদ বলেন, ‘‘এখানে অনেকেই আছেন যারা নিজ কানে শুনেছেন ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’। যারা পালিয়ে গেছে দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা তাদের দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পালিয়ে গেছে, আবার কেউ আত্মসমর্পণ করেছেন। আর যে মানুষটি নিজের দুটি শিশুর কথা ভুলে গিয়ে, সহধর্মিণীর কথা ভুলে গিয়ে দেশ প্রেমে সাড়া দিয়ে, অস্ত্র হাতে রনাঙ্গণে যুদ্ধ করেছেন, সেই মানুষটি হচ্ছেন জিয়াউর রহমান।’’
তিনি বলেন, ‘‘চট্টগ্রামে ঘোষণা হয়েছে, আর সিলেটে প্রথম সেক্টর কমান্ডরদের মিটিং হয়েছে জেনারেল ওসমানীর নেতৃত্বে। সেখানেই প্রথম ১ নম্বর সেক্টর কামান্ডার হয়েছেন জিয়াউর রহমান। আবার সেখানেই জেড ফোর্স গঠন করা হয়েছে, সেটার কমান্ডারও জিয়াউর রহমান। কাজেই বিএনপি করবেন গর্বসহকারে। আপনাদের ইতিহাস পালিয়ে যাওয়ার নয়, সামনের দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।’’
জাহিদ বলেন, ‘‘জিয়াউর রহমান সেই মানুষ, ৭ নভেম্বর যে মানুষকে এই দেশের সিপাহী জনতা বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে এনেছিল। তখন বিএনপি ছিল না। কিন্তু মানুষের বিশ্বাস ছিল ওই মানুষটির ওপর যে, উনাকে যদি দায়িত্ব দেওয়া যায় তাহলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অখণ্ড থাকবে। তিনি নিজে ক্ষমতায় বসেননি। সিপাহী জনতা তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। তার পরেও তিনি গণভোট দিয়েছিলে এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই ক্ষমতায় ছিলেন। মাত্র সাড়ে চার বছরের শাসনামলে তলাবিহনী দেশের তলা লাগিয়েছিলেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘দেশে যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না হতো, মুক্তিযুদ্ধ না হতো, আপনারা কোনো অবস্থাতে ৯০ও দেখতেন না, ২৪ এর ৩৬ জুলাইও দেখতেন না। বহু মানুষের ত্যাগের ওপর দাঁড়িয়েই আজকের বাংলাদেশ। আমরা যেমন আবু সাঈদের কথা ভুলব না, মুগ্ধের কথা ভুলব না। ঠিক একই ভাবে ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমের কথাও ভুলব না। গত ১৫ বছর গণতন্ত্র পুরুদ্ধারের জন্য যারা যুদ্ধ করেছে, তাদের সবাইকে যার যার সম্মান দিতে হবে। বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না।’’
ডা. জাহিদ, ‘‘আরাফাত রহমান কোকো রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন না। তিনি ক্রীড়াঙ্গণের একজন মেধাবী ব্যক্তি ছিলেন। তার সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে আজ বাংলাদেশের ক্রিকেট সারা পৃথিবীতে একটি পর্যায়ে চলে এসেছে। এই কৃতিত্ব তাকে না দিয়ে অন্য কাউকে দিলে ইতিহাস বিকৃতি হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আরাফাত রহমান কোকোকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তার মৃত্যুকে আমরা কখনই স্বাভাবিকভাবে নিইনি এবং এখনও নিচ্ছি না। কাজেই আমরা এটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি, এর মূলে রহস্য কী আছে। সে অনুযায়ী এর সঙ্গে সম্পৃক্ত যারাই আছেন তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য আমরা সব সময়ই চেষ্টা করব।’’
আরাফাত রহমান কোকো মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কোঅর্ডিনেটর আবু নাছের শেখ ও শরফরাজ শরফুর পরিচালানায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/ইআ