অর্থ ছাড় কমলেও বেড়েছে বিদেশি সুদের চাপ: ইআরডি প্রতিবেদন
২৬ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:১১ | আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:১৮
ঢাকা: দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের কারণে বিদেশি ঋণের প্রতি ঝোঁক বেশি ছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের। বর্তমান অন্তবর্তী সরকারও একই পথে হাঁটছে। দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা খুঁজছে বর্তমান সরকার। কিন্তু উন্নয়ন সহযোগিরা অর্থ সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিলেও মিলছে না প্রত্যাশিত সেই সহায়তা।
পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলা থেকে শুরু করে সব সূচকই কমছে ডলারের অভাবে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বিগত সময়ের ঋণের অর্থছাড় কমার পাশাপাশি কমেছে নতুন করে ঋণের প্রতিশ্রুতি। বিগত বছরগুলোর নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। একইসঙ্গে ক্রমেই বাড়ছে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ। এতে প্রতি বছর সরকার যে বিদেশি ঋণ নিচ্ছে, তার বেশিরভাগই সুদ-আসলসহ পরিশোধেই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এমন তথ্য। রোববার (২৬ জানুয়ারি) চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) বৈদেশিক ঋণ সহায়তার তথ্য প্রকাশ করে ইআরডি।
এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থছাড় হয়েছে ৩৫৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার। একই সময়ে আগে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৯৮ কোটি ১৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ এসময়ে যত ঋণের অর্থ এসেছে তার ৫৬ দশমিক ২৪ শতাংশই আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধেই গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম ৬ মাসে সরকার ঋণ পরিশোধ করেছে ১৯৮ কোটি ১৭ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে যা ২৩ হাজার ৬৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৫৬ কোটি ৭৮ লাখ ডলার বা ১৭ হাজার ২৪০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের ব্যবধানে ডলারের হিসেবে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৪১ কোটি ৩৯ লাখ ডলার আর টাকার অঙ্কে বেড়েছে ৬ হাজার ৪৩৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ঋণ শোধের বাড়তি চাপে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে আগের নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ি, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ঋণের বিপরীতে শুধু সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৭৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, যা টাকার অঙ্কে ৮ হাজার ৯৩৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৬৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার বা ৭ হাজার ৫৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের তুলনায় ডলারের হিসেবে ১০ কোটি ৫৯ লাখ ডলার এবং টাকার হিসেবে ১ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা বেশি সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে সরকার যে ঋণ পরিশোধ করেছে তার মধ্যে আসল ঋণ ১২৩ কোটি ডলার বা ১৪ হাজার ৭৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ঋণের আসল পরিশোধ করতে হয়েছিল ৯২ কোটি ৬১ লাখ ডলার বা ১০ হাজার ১৮৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। বাকি ১১ হাজার ৬০১ কোটি কোটি ৮৩ লাখ টাকা সুদ বাবদ দিতে হয়েছে। সুদ আসলসহ ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়লেও কমেছে অর্থছাড়।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ৩৫৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪০৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে অর্থছাড় কমেছে ৫৩ কোটি ১৩ লাখ ডলার বা ১৩ শতাংশ অর্থছাড় কমেছে। দেশের এমন ঋণ ক্ষরার সময়ে সবচেয়ে বেশি ঋণের অর্থছাড় করেছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটি অর্থছাড় করেছে ১০৫ কোটি ডলারের বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক, সংস্থাটি এ সময়ে ৮০ কোটি ডলার অর্থছাড় করেছে। এসময়ে রাশিয়া দিয়েছে ৫৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার।
এছাড়া জাপান ৪৪ কোটি, চীন ২৬ কোটি ৭৮ লাখ, ভারত ৭ কোটি ২১ লাখ ডলার দিয়েছে। বাকি সাড়ে ৩৫ কোটি ডলার দিয়েছে এআআইবিসহ অন্যান্য দাতা সংস্থাগুলো।
অর্থছাড় কমার পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগিদের মধ্যে ঋণের প্রতিশ্রুতিতেও অনীহা দেখা গেছে। ফলে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে দেশের বিভিন্ন প্রকল্পে উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ২২৯ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ অর্থবছরের ব্যবধানে
ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৪৬৯ কোটি ১২ লাখ ডলার।
এ সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ)। সংস্থাটির কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ৯১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। এছাড়া এডিবির কাছ থেকে ৭০ কোটি, জাপানের কাছ ২৫ কোটি ২১ লাখ, এআআইবির থেকে ১৬ কোটি এবং অন্যান্য সংস্থা থেকে ২৭ কোটি ২০ লাখ ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে অর্থছাড় করলেও রাশিয়া, চীন ও ভারতের কাছ থেকে কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি।
সারাবাংলা/জেজে/আরএস