Monday 27 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মালিকপক্ষের গড়িমসির কারণে প্রাপ্য বেতন পাচ্ছেনা ট্যানারি শ্রমিকরা’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:০৫

প্রাপ্য বেতনের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা: মালিকপক্ষের গড়িমসির কারণে ট্যানারি শিল্পের শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য সরকার ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো অনুযায়ী আইনগত প্রাপ্য বেতন পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। মালিকপক্ষ অনর্থক বিলম্ব করছে যা শিল্পের সার্বিক স্থিরতা ও কল্যাণে মোটেও কাম্য নয়।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। ট্যানারি শিল্পের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংশ্লিস্ট কর্মকর্তাদেও হস্তক্ষেপ কামনা করেন ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতারা।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাধারন সম্পাদক আব্দুল মালেকসহ অন্যান্য নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে গত ২৩ জুলাই ২০২৩ তারিখে ট্যানারি শিল্প সেক্টরের নিম্নতম মজুরি সুপারিশের জন্য নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে। কিন্তু তৎকালীন সরকারের সময় গঠিত উক্ত মজুরি বোর্ডে ট্যানারি শিল্পের মালিকপক্ষের প্রতিনিধি থাকলেও ট্যানারি শিল্পের শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রতিনিধিকে না রেখে আইন বহির্ভূতভাবে অন্য সেক্টর থেকে তাদের দলীয় একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করায় শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ইউনিয়ন ও অংশীজনের আপত্তি ও প্রতিবাদের কারণে ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রতিনিধি রাখা হয়।

বিজ্ঞাপন

বোর্ড গঠনের পর থেকে দীর্ঘ ১৫ মাসব্যাপী মোট ১০টি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং সকল পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে নিম্ন মজুরি বোর্ড গেজেটের মাধ্যমে খসড়া সুপারিশ প্রকাশ করে। গেজেটে অনুযায়ী কোনো পক্ষ থেকে আপত্তি উত্থাপিত না হওয়ায় নিয়মানুযায়ী নিম্নতম মজুরি বোর্ড তাদের সুপারিশ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বরাবর প্রেরণ করে। এই ধারাবাহিকতায় গত ২১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে গেজেটের মাধ্যমে ট্যানারি শিল্পে বিভিন্ন গ্রেডে কর্মরত শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য চূড়ান্ত নিম্নতম মজুরীর হার প্রকাশ করেছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর নির্দেশনা মোতাবেক ২১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ থেকেই এই নিম্নতম মজুরি পাওয়া বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্পে কর্মরত সকল শ্রমিক ও কর্মচারীদের আইনগত অধিকার।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, মালিকপক্ষ তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে সরকার ঘোষিত ৫টি গ্রেড এ নির্দেশিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে অনীহা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে শ্রমিকদের আইনগত প্রতিনিধি হিসেবে ইউনিয়নের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, ৫টি গ্রেডে ট্যানারী শ্রমিকদের জন্য সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বিষয়ে ইউনিয়নের পক্ষে যে কোন ধরণের ছাড় প্রদান করা অসম্ভব।

নিম্নতম মজুরী বোর্ডে মজুরির এই পরিমাণ মালিকপক্ষই প্রস্তাব করেছিল আর ইউনিয়ন শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তার গবেষণাভিত্তিক প্রস্তাবনা ২৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ১৮ হাজার ১ টাকায় করার সিদ্ধান্তে একমত হয়েছে। তাই ২১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ থেকে এই নিম্নতম মজুরি কার্যকর করার কথা থাকলেও জানুয়ারি ২০২৫-এ এসেও মালিকপক্ষের এ ধরণের অনীহা অত্যন্ত দুঃখজনক ও শিল্পের সার্বিক উন্নয়নের অন্তরায় বলে বক্তারা সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য প্রকাশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মালিকপক্ষের ইচ্ছাকৃত এই গড়িমসিতে চরম হতাশায় থাকা ট্যানারি শ্রমিকরা যে কোনো মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য যে কোন ধরণের কর্মসূচিতে চলে যেতে পারে, যার দায়ভার মালিকপক্ষকেই নিতে হবে। ট্যানারি শিল্পের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যে কোন ধরণের সহযোগিতার জন্য ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন অঙ্গীকারবদ্ধ। তাই দেশে প্রচলিত আইনের যেকোন ধরনের লঙ্ঘন ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন শ্রমিকদের স্বার্থে মেনে নিবে না।

সংবাদ সম্মেলনে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সদস্যরা ৩ দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হচ্ছে-

১. ৫টি গ্রেডে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত নিম্নতম মজুরি গ্রেড অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে হবে। গ্রেড কমানো বা একিভূত করার মতো বেআইনি উদ্যোগের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

২. নির্দিষ্ট গ্রেড এ কাজ করেও যে সকল ক্ষেত্রে শ্রমিকরা গ্রেড অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন না, সেই সকল শ্রমিকদের গ্রেড অনুযায়ী বেতন প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ডি আই এফ ই এর পক্ষ থেকে পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করা।

৩. আইন বহির্ভূতভাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে শ্রমিকদেরকে যে কোনো ধরণের কাজে নিযুক্ত করা নিষিদ্ধ করা।

সারাবাংলা/এ এইচ এইচ/এনজে

ওয়ার্কার্স পার্টি ট্যানারি বেতন মালিকপক্ষ সংবাদ সম্মেলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর