‘ইতিহাসে নারীদের অবদান সুরক্ষিত রাখতে চাই’
২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৪৪
ঢাকা: সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ‘আমরা ইতিহাসে নারীদের অবদান সুরক্ষিত রাখতে চাই। একাত্তরে আমাদের মেয়েরা যুদ্ধ করেছিল, তাদেরকে আমাদের ইতিহাস ভুলে যায়। তারা সমাজে মাথা উঁচু করে ফিরে আসতে পারে না।’
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে প্রথম আলো আয়োজিত জুলাই জাগরণ, জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বলেন, ‘২০২৪ এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মেয়েরাই প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করল। তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার স্লোগানটা কিন্তু মেয়েরাই প্রথম দিয়েছিল। সেই রাতের অন্ধকারেই মেয়েরা প্রথম রাস্তায় নেমে এসেছিল। এখন আমরা নিশ্চয়ই মেয়েদেরকে হারিয়ে যেতে দেব না। মেয়েদের স্বীকৃতি আমরা নিশ্চিত করব। প্রতিটি কষ্টে, প্রতিটি যুদ্ধে, তারা যখন পাশে থাকে পরবর্তীকালে কেন তারা হারিয়ে যাবে। এবার আমরা তাদেরকে হারিয়ে যেতে দেব না।’
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘জুলাই আন্দোলন আমাদের অন্তরে, আমাদের মনে একটা ভয়ঙ্কর চিত্র রেখে গেছে। আমি একাত্তর দেখেছি, আমি চব্বিশ দেখেছি। চব্বিশে যখন তাকাই, বারবার আমার মন একাত্তারে ফিরে যায়। এই কারণে আমি সান্নিধ্য খুঁজে পাই একটি যুদ্ধের সঙ্গে আরেকটি যুদ্ধের। সেদিনও এই তরুণ ছেলেদেরকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছি। বাড়িতে চিরকুট রেখে গেছে, ডাক পড়েছে যুদ্ধে যাচ্ছি। জুলাই আন্দোলনে সেই একই বয়সের ছেলেরা-মেয়েরা বাবা, মার কাছে চিরকুট লিখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘১৫ বছর এ দেশের মানুষের ওপর যে চরম অন্যায়, খুন, গুম, অত্যাচার হয়েছিল, এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সেদিন ছেলেমেয়েরা তারুণ্যের জায়গা থেকে নয় আদর্শের জায়গা থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা এ আন্দোলনে নেমেছিল। সেদিন এই ছাত্র জনতার আন্দোলনে মানুষের ওপর শাসক গোষ্ঠীর সৈন্যদল ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, নির্বিচারে গুলি টিয়ার সেল মেরে শত শত মৃত্যু ঘটিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘৫০ বছরে গড়িয়ে গেল জাতির ইতিহাস সুরক্ষিত হলো না। কেউ কেউ সেই ইতিহাস দখল করে নিল। যারা প্রকৃত যোদ্ধা তাদেরকে আমরা ভুলে গেলাম, যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা তাদেরকে যথাযথ সম্মান দিতে পারলাম না। চব্বিশের দিকে তাকাই, ভাবি এই ইতিহাসটাও কি কেউ কেড়ে নিবে? একদিন কি এই ইতিহাসটাও বিকৃত হয়ে যাবে? এই বাচ্চারা যারা প্রাণ দিলো তাদের নামও কি মুছে যাবে? অদ্ভুত অদ্ভুত নতুন নাম সৃষ্টি হবে?’
প্রথম আলোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ রকম আরও অনেক অনেক উদ্যোগের প্রয়োজন হবে। ইতিহাস থেকে শুধু ক্যামেরাবন্দি নয়, আমাদের চিত্তে এঁকে দিতে হবে। এই ইতিহাসকে আর বিকৃত করা যাবে না। যারা যুদ্ধ করেছে তাদেরকে খালিহাতে ঘরে ফিরে যেতে দেওয়া হবে না। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা আমাদের সকলের দায়িত্ব, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব।
উপদেষ্টা বলেন, ‘এতদিন সমাজে আমরা যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি, মিথ্যার ওপর শাসনব্যবস্থা চালিয়েছি, মিথ্যার ইতিহাস লিখেছি, মিথ্যার নেতৃত্ব দিয়েছি, মিথ্যার ওপর গায়ের জোরে মিথ্যা রাজত্ব কায়েম করেছি, এতো অন্যায় এই তরুণ সমাজ সেটা ঘৃণা করেছে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এবার যদি আমরা সমাজকে তার অতীতের পথ থেকে সরিয়ে আনতে না পারি, মনে রাখতে হবে আগামী প্রজন্ম কিন্তু এভাবে আবার যুদ্ধ করবে।’
তিনি বলেন, ‘একাত্তর, চব্বিশ এবং আজকের বাস্তবতায় এই যে উদ্যোগ, শত শত উদ্যোগে পরিণত হওয়া দরকার। আমাদের ভাবা দরকার গণঅভ্যুত্থানের এক্সিবিশনটাকে আগামী প্রজন্মের জন্য এই ইতিহাসগুলো স্থায়ী এক্সিবিশনে রূপ দিতে হবে যাতে এই ইতিহাস আমাদের চোখের সামনে থাকে।’
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক এবং প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সামাদ শরীফ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, এই প্রদর্শনী চলবে ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
সারাবাংলা/এফএন/ এইচআই