Friday 24 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘শেখ হাসিনার আমলে প্রবৃদ্ধির হিসাব ছিল ভুয়া’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:৫৩

সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বাৎসরিক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশে যে উচ্চ প্রবৃদ্ধির হিসাব প্রকাশ করা হতো তা ভুয়া ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, হাসিনার দুর্নীতি নিয়ে বিশ্ব প্রশ্ন তুলতে ব্যর্থ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। ৮৪ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদ এবং ২০০৬ সালের নোবেলজয়ী ড. ইউনূস ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেন, যখন সহিংস বিক্ষোভের পর হাসিনা প্রতিবেশী ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। হাসিনা তার ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের অর্থনীতি এবং বিশাল গার্মেন্টস শিল্পের উন্নতির জন্য প্রশংসিত হলেও তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনের অভিযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ড. ইউনূস সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বাৎসরিক বৈঠকের সাইডলাইনে রয়টার্সকে বলেন, ‘তিনি (হাসিনা) দাভোসে সবাইকে শেখাচ্ছিলেন কীভাবে একটি দেশ পরিচালনা করতে হয় কিন্তু কেউ সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। এটি মোটেও একটি ভালো বিশ্বব্যবস্থা নয়।’

২০০৯ সাল থেকে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা হাসিনার বিরুদ্ধে বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, হত্যা, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগে তদন্ত চলছে। ঢাকার পক্ষ থেকে তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য নয়াদিল্লিকে অনুরোধ করা হয়েছে। হাসিনা এবং তার দল সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তবে এই অনুরোধে এখনো সাড়া দেয়নি ভারত।

বিজ্ঞাপন

ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, ‘পুরো বিশ্ব এই পরিস্থিতি তৈরিতে দায়ী। এটি বিশ্বের জন্য একটি বড় শিক্ষা। তিনি বলেছিলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে এই প্রবৃদ্ধি পুরোপুরি মিথ্যা’

তবে তিনি কেন এই প্রবৃদ্ধিকে মিথ্যা বলছেন তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি। তবে তিনি ব্যাপকভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির গুরুত্ব এবং সম্পদ বৈষম্য কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৮ শতাংশে উন্নীত হয়, যা ২০০৯ সালে হাসিনা ক্ষমতায় আসার সময় ছিল প্রায় ৫ শতাংশ। তবে কোভিড-১৯ ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পরবর্তী বছরগুলোতে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পায়। ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর একটি হিসেবে বর্ণনা করে।

বিশ্বব্যাংকের মতে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি থেকে ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ জুলাই মাসে সহিংস রূপ নেয় এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ে। হাসিনার সরকার অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করে। বিক্ষোভকারীরা ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সুপারিশ করেন।

২০২৫ সালের শেষ নাগাদ বা ২০২৬ সালের শুরুতে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ড. ইউনূস জানিয়েছেন, তিনি নিজে নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী নন।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক থাকলেও হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ড. ইউনূস ভারতে আশ্রিত হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন।

ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক সবচেয়ে শক্তিশালী হওয়া উচিত। আপনি ভারতের মানচিত্র আঁকতে পারবেন না বাংলাদেশকে না এঁকে।’

সারাবাংলা/এনজে

প্রধান উপদেষ্টা প্রবৃদ্ধি রয়টার্স শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর