ছাত্রদের রাজাকারের সঙ্গে তুলনা!
এখনো পরিচালক পদে বহাল ঢাবি শিক্ষক
২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৪৪ | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:০৬
ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ও ভালনারিবিলিটি ইনস্টিটিউটের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক মনিরুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে বিরোধিতার অভিযোগ উঠেছে। তিনি জুলাই আন্দোলনের বিরোধিতা করে শিক্ষার্থীদের রাজাকারের (সো কলড সাধারণ) সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। সেইসঙ্গে সব শিক্ষককে এ বিষয়ে ফেসবুক পোস্ট করতে বলেছিলেন- এমন একটা বার্তা সারাবাংলার হাতে এসেছে।
সেই বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘আমরা নির্বাক ২৫ মার্চ ১৯৭১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ এবং নির্যাতন রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী করেছিল তার সাথে ১৬ এবং ১৭ জুলাই ২০২৪ আমাদের প্রক্টর এবং হলে হলে দায়িত্ব পালনরত প্রভোস্ট এবং আবাসিক শিক্ষকদের উপর আমাদেরই ছাত্র (so called সাধারণ) নামক নতুন রাজাকাররা যে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে এই দুয়ের মধ্যে আমি অন্তত কোন তারতম্য দেখিনি।’
তিনি সব শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কথা জানিয়ে লিখেছেন, ‘প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ (Dear Colleagues) আসুন আজ আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (social media) তে নিজ নিজ টাইমলাইনে (timeline) এ লিখে প্রতিবাদ করি এবং সত্যটা দেশ তথা বিশ্বের কাছে তুলে ধরি আমাদের এই অমানুষ রূপী সাধারণ ছাত্ররা তাদের শিক্ষকদেরকে কীভাবে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করছে।’
এ ছাড়াও, তার বিরুদ্ধে জিয়া হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, আন্দোলনের সময় অধ্যাপক মনিরুজ্জামান হাউজ টিউটর থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর হাত তুলেছেন। এমনকি আন্দোলনের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। আন্দোলনের পর তার এসব বিষয় জানাজানি হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। পরে অবশ্য ইনস্টিটিউটের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হাত করে আবার ফেরত আসেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক সারাবাংলাকে জানান, আওয়ামী লীগের আমলে তিনি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সবচেয়ে আস্থাভাজন ছিলেন। সেজন্য তিনি আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ সমর্থন করেছেন। এমনকি কোটা আন্দোলনেরও তিনি বিরোধিতা করেন। যদিও ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে পর তিনি নিরপেক্ষ সাজার চেষ্টা করছেন।
কিন্তু তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠতার কিছু ছবি সারাবাংলার হাতে রয়েছে। এ সব বিষয়ে অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘কারও সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা আমার নেই। আমি নিরীহ একজন মানুষ। আন্দোলনের সময় আমাকে হল প্রশাসন যে দায়িত্ব দিয়েছে সেটাই করেছি। আর দীপু মনি আমার এলাকার এবং নওফেলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক যখন আমি লন্ডনে পড়তে গিয়েছিলাম তখন থেকে।’
এদিকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধাচারণের পরও তার বহাল তবিয়তে থাকার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আফাজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করেছি ফ্যাসিবাদ হটাতে। কিন্তু প্রশাসন সেই ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসন করছে। এ বিষয়ে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে যেতে দুই বার ভাবব না।’
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা গণহত্যার দোসর তাদের বাংলাদেশে থাকার আইনগত অধিকার নেই। যারা বিগত সময়ে ফ্যাসিবাদের সহযোগী ছিলেন এবং জুলাই আন্দোলনে বিরোধিতা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। বরং তারা এখনো বুক ফুলিয়ে হাঁটছে। যেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসন যেহেতু ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সেহেতু আমরা অতিদ্রুত আওয়ামী লীগের দোসর শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করব।’
এ বিষয়ে ঢাবির সাদা দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুস সালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের একটা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। যে কমিটি এই বিষয়গুলো কাজ করছে। আর, তাকে নিয়ে অভিযোগগুলো সত্য হয়ে থাকলে সেটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। এ ঘটনাগুলো সত্য হলে, আমি মনে করি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
তার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকার পরও তিনি কিভাবে পরিচালক পদে বহাল আছেন? জানতে চাইলে ঢাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সাইমা হক বিদিশা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে যখন সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ এসেছে আমরা সেগুলোর ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়াও, আমাদের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
ঘটনাগুলো সত্য হলে সহযোগী অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা?- এই প্রশ্নের উত্তর জানতে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানকে একাধিকবার ফোনে কল দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সারাবাংলা/এআইএন/পিটিএম