‘তামাক সিন্ডিকেটে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার’
২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৪৫ | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৪৭
ঢাকা: খুচরা পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ে বাধ্য করছে তামাক কোম্পানিগুলো। ফলে সরকার প্রতিদিন রাজস্ব হারাচ্ছে প্রায় ১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট আয়োজিত ‘বাজার সিন্ডিকেট একটি ষড়যন্ত্র: উদাহরণ- তামাক কোম্পানি’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সভায় বক্তরা এসব কথা বলেন।
রুরাল অ্যাসোসিয়েশন ফর নিউট্রিশন ইমপ্রুভমেন্ট (রানি)’র সিইও ফজলুল হকের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ, উবিনীগে’র পরিচালক সীমা দাস সীমু, ভাইটাল স্ট্র্যাটিজিস এর কারিগরী পরামর্শক আমিনুল ইসলাম সুজন এবং ৭১ টিভির বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য’র সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনটিটিপি এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (টিসিআরসি) এর প্রকল্প সমন্বয়ক ফারহানা জামান লিজা।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, মোড়কে উল্লেখিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে সকল পর্যায়ে তামাকজাত দ্রব্য সরবরাহের আদেশ থাকলেও কোম্পানিগুলো এই নির্দেশনা মানছে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্যের চেয়ে খোলাবাজারে অধিক মূল্যে সিগারেট বিক্রয় হওয়ায় ভোক্তার পকেট থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা অতিরিক্ত চলে যাচ্ছে। ফলে সরকার প্রতিদিন রাজস্ব হারাচ্ছে প্রায় ১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া অধিকাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্য উৎপাদনকারীদের লাইসেন্স না থাকা এবং পণ্যের মোড়কে ব্যান্ডরোলসহ মোড়কজাতকরণে প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্যাদি না থাকায় রাজস্ব ফাঁকি দেবার সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি প্রবন্ধ উপস্থাপনায় স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং প্রবর্তন, ডিজিটাল ট্যাক্স ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং সিস্টেম চালু, মোড়কের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য যুক্তকরণ এবং কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের ব্যবহার বেশি হলেও এ থেকে প্রাপ্ত করের হার অত্যন্ত কম। ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের অনিয়ন্ত্রিত বাজার এর সুযোগে বিভিন্নভাবে তামাক কোম্পানি রাজস্ব ফাঁকি দেবার সুযোগ পাচ্ছে। এ ছাড়াও ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যে ভোক্তাকে আকৃষ্ট করতে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর বিভিন্ন সুগন্ধি ও কৃত্রিম রং ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের নজরদারীর পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।
বক্তারা আরও বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের অভিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তামাকের চাষ, তামাকের বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব ফাঁকির অনিয়ম রোধে সকল পর্যায় থেকে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এই লক্ষ্যে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে ‘এমআরপি’ আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা মনিটর করার পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত মোবাইল কোর্টে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি যুক্ত করতে হবে।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের স্থানীয় সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, সকল তামাক কোম্পানি, ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদেরকে বাধ্যতামূলক লাইসেন্সিং ব্যবস্থার আওতায় আনা জরুরি। স্থানীয় পর্যায়ে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসার মাধ্যমেই সামগ্রিকভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে শক্তিশালী করা সম্ভব।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এইচআই
বাজার সিন্ডিকেট একটি ষড়যন্ত্র: উদাহরণ- তামাক কোম্পানি বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট