Tuesday 21 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাঘের শুরুতেই ঘন কুয়াশা, বিপর্যস্ত রংপুরের জনজীবন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২১ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:৪৫ | আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:১৩

রংপুরে জেঁকে বসেছে শীত। ছবি: সারাবাংলা

রংপুর: মাঘের শুরুতে রংপুর অঞ্চলে ঘন কুয়াশার পাশাপাশি জেঁকে বসেছে শীত। গত রাত থেকে উত্তরের জেলা রংপুরসহ অন্যান্য জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে। হঠাৎ করেই শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত।

বিশেষ করে গরিব, ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের ভাগ্যে জুটেছে অবর্ণনীয় কষ্ট। তবে এমন পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রংপুর আবহাওয়া অফিস জানায়, সকাল ১০টায় রংপুরের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় চূড়ান্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় দেশের শীতপ্রবণ এলাকা হিসাবে পরিচিত বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের জেলাগুলো। তাই এই জেলাগুলোতে শীত যেন এক আতঙ্কের নাম। গেল বারের মতো এবারও শীত যেন আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে শ্রমজীবী মানুষদের মাঝে। কনকনে ঠান্ডায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের গরিব-অসহায় মানুষ।

রপুরে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ছবি: সারাবাংলা

সকালে সরেজমিন নগরির মডার্ণ মোড়, পার্ক মোড়, লালবাগসহ একাধিক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশার কারণে সকাল থেকেই বেশ ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।

সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলাচল করছে। নিতান্তই প্রয়োজন কিংবা জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষের দেখা মিলছে পথে-ঘাটে।

বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে বিপদে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে অতিদরিদ্র মানুষের কষ্ট বাড়ছে। অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে আয় কমে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে শ্রমজীবী মানুষের ।

বিজ্ঞাপন

শহরতলির কামাড়ের মোড় এলাকার শ্রমজীবী কামরুজ্জামান বলেন, ‘টানা কয়েকদিন থেকে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। তার ওপরে আজ দেখা নেই সূর্যের তাই দিনের অধিকাংশ সময়ই আকাশ থাকছে মেঘাচ্ছন্ন সঙ্গে নামছে বৃষ্টির মতো কুয়াশা। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের মতো শ্রমজীবী মানুষের স্বাভাবিক জীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা।’

এদিকে তীব্র শীত উপেক্ষা করে অনেকেই বের হচ্ছেন কাজের সন্ধানে। শ্রমজীবী ও গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষগুলো কাবু হয়ে পড়েছেন।

শহরতলীর রিক্সাচালক আব্দুল হাকিম বলেন, ‘কয়েকদিন থেকে খুব শীত। বাইরে বের হওয়া কঠিন কিন্তু বাইরে না গেলে রিক্সা না চালালে না খেয়ে থাকা লাগবে।’

আরেক রিক্সাচালক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ঘন কুয়াশা আর শীতের কারণে সকালে কোনো মানুষ বাসা থেকে বের হচ্ছে না। যার ফলে আয় কমে গেছে। আর কুয়াশার কারণে রাস্তায় কিছুই দেখা যায় না।’

এদিকে শীত নিবারণে অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত উষ্ণতা অনুভব করার চেষ্টা করছেন। আবার জেঁকে বসা শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের উষ্ণতা নিতে গিয়ে কোথাও কোথাও ঘটছে অগ্নিদগ্ধের ঘটনাও। কেউ কেউ শীত নিবারণে গরম পানি ব্যবহার করতে গিয়েও দগ্ধ হচ্ছেন। অধিকাংশ দুর্ঘটনা অসাবধানতার কারণে ঘটছে।

এদিকে অগ্নিদগ্ধ রোগী ছাড়াও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতের প্রকোপে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভর্তির চাপ। গত কয়েক দিনের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক আব্দুল আহাদ জানান, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগীও বাড়তে শুরু করেছে। বেশির ভাগ শিশু ও বয়স্করা শীতে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, রংপুর ছাড়াও বিভাগের সৈয়দপুর, তেঁতুলিয়া, দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। একই সঙ্গে স্থানভেদে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা বিরাজমান রয়েছে। চলমান পরিস্থিতি কিছুটা সপ্তাহখানেক থাকবে।

জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল জানান, শীত মোকাবিলায় সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে জেলা প্রশাসনের। এরই মধ্যে নগরীর ৩৩ ওয়ার্ডসহ জেলার আট উপজেলা ও তিন পৌর এলাকায় সরকারিভাবে ৩১ হাজার ৫০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শীত মোকাবিলায় আরও কম্বলের চাহিদা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সারাবাংলা/এমপি

আবহাওয়া রংপুর শীতকাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর