বিল পরিশোধে জটিলতা
শেষ মুহূর্তে সংশোধনে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল প্রকল্প
২১ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:৫৫ | আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:৫৩
ঢাকা: বিল পরিশোধ সংক্রান্ত জটিলতায় শেষ হচ্ছে না আগারতলা-আখাউড়া ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প। সেই সঙ্গে আছে বিভিন্ন খাতে ব্যয় কমা-বাড়ার বিষয়। এসব কারণে প্রায় শতভাগ বাস্তবায়ন হলেও শেষ পর্যায়ে এসে সংশোধন করতে হচ্ছে প্রকল্পটি। এতে প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় ১ বছর মেয়াদ বাড়ছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। মূল প্রস্তাবে গত ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। প্রকল্পটির সর্বশেষ অনুমোদিত মেয়াদ গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারিত থাকলেও চূড়ান্ত বিল দাখিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় এবং বাস্তবতার প্রেক্ষিতে কিছু অঙ্গের ব্যয় বাড়া-কমার কারণে প্রকল্পটি প্রথম সংশোধিত মেয়াদে শেষ করা সম্ভব হয়নি। এগুলো নিষ্পত্তির জন্য বাড়তি সময় এবং ৩১৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা প্রয়োজন। এ প্রেক্ষিতে সরকারি তহবিল থেকে ২৪ কোটি ৯ লাখ টাকা এবং ভারতীয় অনুদান থেকে ২৯৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা সংস্থানের জন্য এই প্রথম সংশোধন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক সভায় বলেন, বাঁধ নির্মাণ, পানি নিষ্কাশন ও প্রাচীর নির্মাণ খাতে সাব ব্যালাস্টের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া এবং কিছু নতুন আইটেম যুক্ত হওয়ায়, যেমন-ইনসুলেটর টাইপ বিশেষ লাইনার সরবরাহ, ড্রেনেজ আউটলেটের জন্য কোর কাটিং ৫০০ গুণ ৫০০ মিলি মিটার, নতুন ইউআইসি ৬০ কেজি আইই রেল স্ট্যাটিক সুইচ স্থাপন ইত্যাদি এই সেকশনে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন অবকাঠামোয় প্রয়োজনীয় পূর্ত এবং আনুষঙ্গিক খাতে মাঠ পর্যায়ে কাজের বাস্তবতার কারণে নতুন আইটেম সংযোজন হওয়ায় ব্যয় বৃদ্ধি, মূল চুক্তিপত্রের বিওকিউ আইটেম অনুযায়ী বিভিন্ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন খাতে প্রকৃত প্রাক্কলনের ভিত্তিতে ব্যয় কমে যাওয়া, ট্র্যাক, সেতু এবং সিগন্যালিং এর কাজ কম হওয়ায় সিডি-ভ্যাটের ব্যয় কমা, জনবল এবং প্রাইস ফিজিক্যাল কনটিজেন্সী খাতে প্রকৃত চাহিদার ভিডিতে বায় কমা ইত্যাদি কারণে প্রকল্পের সংশোধন প্রয়োজন।
এছাড়া, প্রকল্পের আওতায় রেলপথ নির্মাণের দৈর্ঘ্য ১৪ দশমিক ২৬ কিলোমটার নির্ধারিত থাকলেও এই অংশের মধ্যে ৬ দশমিক ১৭ কিলোমিটার; আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর আরেকটি প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ফলে এ প্রকল্পে রেলপথ নির্মাণের পরিমাণ ও ব্যয় কম হয়েছে।
এই প্রকল্পে নির্ধারিত গঙ্গাসাগর ইয়ার্ডের সিগন্যালিং কাজও আখাউড়া-লাকসাম প্রকল্প শেষ করায় প্রকল্প থেকে তা বাদ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে মূল ডিপিপিতে ৩টি মেজর ব্রীজ নির্মাণের সংস্থান ছিল। এক্ষেত্রে এলাইনমেন্ট পরিবর্তন হওয়ায় বাস্তবতার কারণে ব্রীজগুলো নির্মাণের প্রয়োজন হয়নি। এসব বিবেচনায় প্রকল্প দলিলে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার জন্য প্রকল্পটির সংশোধন প্রয়োজন।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পের অনুদানের অংশ থেকে এখন পর্যন্ত ২২৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। প্রকল্প অনুদানের অবশিষ্টাংশ প্রাপ্তির বিষয়ে ইআরডি’র নিশ্চয়তা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ইআরডি’র প্রতিনিধি সভায় জানান, প্রকল্প অনুদানের প্রয়োজনীয় অবশিষ্ট অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর যে পরিমাণ অনুদান অবশিষ্ট থাকবে, তা ভারতীয় অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন অন্য কোন প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া যায় কিনা সে বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় ইআরডি’র মাধ্যমে অনুদান দেওয়ার সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠাতে পারে।
ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) কবির আহমেদ সভায় জানান, প্রকল্পের ভৌত তথা বাস্তব কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বর্ধিত সময়কালে ঠিকাদারের পাওনা পরিশোধ এবং
পিসিআর প্রণয়নসহ প্রকল্পের সব কাজ শেষ করা হবে। তাই প্রকল্পের প্রথম সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন করার জন্য সুপারিশ করা যেতে পারে।
সারাবাংলা/জেজে/আরএস