ডাঙায় উঠতে চান ১১ পরিবার
কালনী নদীতে ভাসতে ভাসতে ৫০ বছর
২১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:১৩
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কালনী নদীতে জলে ভাসা জীবনযাপন করছেন ১১ পরিবার। ৫০ বছর ধরে বংশপরম্পরায় তাদের নৌকায় বসবাস। বেদে সম্প্রদায়ের ওই পরিবারগুলো আর জলে নয়, উঠতে চান ডাঙায়। তারা আগামী প্রজন্ম নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। ছেলে-মেয়েদের শেখাতে চান পড়ালেখা।
নৌকায় বসবাস করা ওইসব বাসিন্দাদের স্থানীয়ভাবে বাইদ্যা নামে পরিচিত। তাদের জন্ম-মৃত্যু ও বিয়ে সবই হয় নদীর জলে ভেসে নৌকায়। উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের চাঁন্দপুর গ্রামের কালনী নদীতে থাকা বেদে পরিবারের সঙ্গে সারাবাংলা’র কথা হয়। জানান তাদের জীবনের গল্প।
কথা বলে জানা যায়, ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নৌকায় বসবাস করে আসছেন তারা। বংশপরম্পরায় তাদের জীবন ও জীবিকা নৌকায়। এখন আর তারা নৌকায় বসবাস করতে চান না। তাদের মধ্যে অনেকেই জায়গা-জমি কিনেছেন। কেউ কেউ বাড়িঘরও তৈরি করেছেন।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, তারা নৌকায় রাঁধেন, নৌকাতে খাওয়া-দাওয়া করেন, নৌকাতেই ঘুমান। বর্তমানে ১৩টি নৌকায় ১১টি পরিবার বসবাস করছে। তবে তারা অন্যান্য বেদের মত সাপ-বেজি’র খেলা দেখান না, তাবিজ-কবচ বিক্রি করেন না। এখানকার বেদে নারীরা মাথায় নিয়ে টুকরিতে করে কসমেটিকসহ বিভিন্ন ব্যবহার্য জিনিস বিক্রয় করেন। পুরুষদের গ্রামে গ্রামে গিয়ে শঙ্খের শাঁখা বিক্রি করতে দেখা যায়। এসব নারী ও পুরুষরা প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেরী করে হরেক রকমের পণ্য বিক্রি করে থাকেন। রাতে সবাই নৌকাতেই থাকেন।
টুকদিরাই গ্রামের রনবির দাস বলেন, এখানে উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণের বাইদ্যা রয়েছে। উচ্চবর্ণের বাইদ্যাদের সরদার ছিলেন নয়ন বাইদ্যা। তার আর্থিক অবস্থা খুব ভাল ছিল। আর এই নয়ন বাইদ্যার দলের লোকজনদের বেশির ভাগ এখন নৌকা ছেড়ে টুকদিরাই গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তাদের একটা অংশ ডাঙায় স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও আরেকটা অংশ গ্রামের পাশে নদীতে নৌকায় ভাসমান অবস্থায় বসবাস করে।
বেদে সম্প্রদায়ের আসমিনা বেগম বলেন, ‘অনেক বছর ধরে আমরা নৌকার বাসিন্দা। নৌকায় বসবাস করা খুবই কষ্টসাধ্য। জলে বসবাস করায় সুখে-দুঃখে কাউকে পাশে পাইনা। অভাব-অনটনে আসে না সাহায্য।
জামাল হোসেন বলেন, ‘আমার দুই ছেলে, এক মেয়ে। আমার এক নাতিন স্কুলে পড়ে। আমাদের সন্তানরা আর আদি পেশায় থাকতে চায় না। অন্য পেশায় যাচ্ছে। যে কারণে ডাঙায় উঠছে অনেকেই। ঘরবাড়ি বাঁধছে। আমিও নৌকা ছেড়ে ডাঙায় বসবাস করতে চাই।’
মকবুল হোসেন বলেন, আমরা চার ভাই, দুই ভাই নৌকায় থাকি। এক ভাই গার্মেন্টস শ্রমিক ও অপর ভাই ওয়ার্কশপে কাজ করে। নৌকায় বসবাস করে জীবন চালানো কঠিন। যে কারণে দুই ভাই আদি পেশা ছাড়েন।
করিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিটন চন্দ্র দাস বলেন, বেদে পরিবারগুলো অনেক বছর ধরে চাঁন্দপুর গ্রামের কালনী নদীর কূল ঘেঁষে বসবাস করে আসছে। এদের মধ্যে অনেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) করেছেন। তাদেরকে ভিজিএফ’র চালসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এসআর
১১ পরিবারের নৌকায় বসবাস কালনী নদী জলে ভাসা জীবন দিরাই উপজেলা ভাসতে ভাসতে ৫০ বছর সুনামগঞ্জ