‘ভর্তি পরীক্ষায় কোটা ব্যবস্থা শহিদদের আত্মত্যাগকে অপমান’
২০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:১১ | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৪৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মেডিকেলসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহিদদের আত্মত্যাগকে অপমানিত করছে বলে মন্তব্য এসেছে চট্টগ্রামের এক সমাবেশ থেকে।
সমাবেশ থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পুনর্বিবেচনা করে পুনরায় প্রকাশের দাবিও জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বৈষম্য নিরসনের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদসহ কয়েকজন সংগঠক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ বলেন, ‘আমরা কোটা বৈষম্য দূর করার জন্য রাজপথে নেমেছিলাম। এখনো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় কোটা আছে। আমরা মনে করছি এ ব্যবস্থার মাধ্যমে আমাদের শহীদদের অপমান করা হচ্ছে। আমাদের সেসব শহিদের আত্মত্যাগকে অপমান করা হচ্ছে। রাজপথে যারা রক্ত ঝরিয়েছে সেসব রক্তকে অপমান করা হচ্ছে। আমরা চাই সকল ভর্তি পরীক্ষায় সবার সমান সুযোগ থাকুক।’
তিনি বলেন, ‘সে সঙ্গে অবশ্যই উপজাতি ও প্রতিবন্ধী কোটা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নূন্যতম মাত্রায় রাখতে হবে। আমরা চাই ভর্তি পরীক্ষায় সকল ধরণের কোটা নিরসন করে সবাইকে সুযোগের সমান অধিকার দিয়ে বৈষম্যহীন, সুষ্ঠু ও সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে এ সরকার কাজ করবে। আমাদের যেন আবারও রাজপথে এসে কোটামুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আওয়াজ তুলতে না হয়। আমরা আজই আমাদের দাবির বাস্তবায়ন চাই। সরকারকে আজই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সকল ধরণের ভর্তি পরীক্ষায় কোটা তুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের সমান অধিকারের সুযোগ করে দিতে হবে।’
সমাবেশে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক উদ্দিন মোহাম্মদ তাসকিন বলেন, ‘গণ অভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল কোটা আন্দোলন থেকে। বিগত দিনে কোটা ব্যবস্থার নাম দিয়ে অরাজকতা ও বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে আমরা ছাত্র-জনতা রাজপথে রক্ত দিয়েছে। আমাদের অনেক ভাই শহিদ হয়েছে। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে কোটা ব্যবস্থায় আজ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হল। নতুন বাংলাদেশে কেন আমাদের এ ধরণের বৈষম্য দেখতে হবে।’
‘আমরা দেখেছি ১৭৩ পেয়েও অনেক শিক্ষার্থী মেডিকেলে চান্স পাননি। আবার ১৩০ বা ১৩২ পেয়েও কোনো কোনো শিক্ষার্থী মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। আমরা চাই, এ ধরণের বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা আর না থাকুক। নতুন বাংলাদেশে এ ধরণের বৈষম্য প্রত্যাশা করি না। অনগ্রসর গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছুটা কোটা থাকবে। আর বাকি সকল ধরণের কোটা যে কোনো নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষা থেকে বাতিল করা হোক। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে সেটাকে পুনর্বিবেচনা করে নতুন করে প্রকাশ করা হোক।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য দুই শতাংশ কোটা রাখা হয়েছিল। এবার সেটা রাখা হয়েছে পাঁচ শতাংশ। গতবছর ১০৮ জনকে কোটার মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করানো হয়েছিল। এ বছর সেটা বাড়িয়ে ২৬৯ এ নিয়ে যাওয়া হল। ফলাফলে দেখে গেছে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী ১৭৩ নম্বর পেয়েও কোনো মেডিকেল কলেজে চান্স পায়নি।’
সাকিব হোসেন আরো বলেন, ‘অথচ একজন কোটাধারী শিক্ষার্থী ১৩৭ নম্বর পেয়েও সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়ে গেল। তাহলে বৈষম্য নিরসনের জন্য আমরা যে গণঅভ্যুত্থান করলাম, সে নতুন বাংলাদেশে কীভাবে ১৩৭ নম্বর পেয়ে একজন শিক্ষার্থী মেডিকেলে চান্স পায়। আমরা মেডিকেলের যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে সেটা বাতিল করে আবার নতুন করে প্রকাশের দাবি জানাই।’
সারাবাংলা/আইসি/এনজে