‘ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন হয়নি’
২০ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:৪৫ | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:০৫
ঢাকা: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ২০০১ সালে ২০ জানুয়ারি রাজধানীর পুরনা পল্টনে কমিউনিস্ট পার্টির সমাবেশে বোমা হামলার সময় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। বোমা হামলার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে তদন্তের নামে আরেকটি তাণ্ডব চালিয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০১ সালের সেই স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে, কিন্তু ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারী ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীর পুরনা পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এসব কথা বলেন। সিপিবি কার্যালয় সামনে নিহতদের স্মরণে অস্থায়ী বেদী তৈরি করে বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলো এতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সমাবেশে বোমা হামলার বিচার চাইতে একটি মামলা দায়ের করা হলো। তৎকালীন সরকারের পুলিশবাহিনী হত্যাকারীদের চিহ্নিত না করে বরং ফ্যাসিবাদী কায়দায় বামপন্থিদের ওপর তান্ডব চালাতে থাকে। ওই সময় সরকারের আচরণ ছিল রহস্যজনক।
তিনি বলেন, সমাবেশের একটি ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল। ও ভিডিও রেকর্ডে দেখা গেছে একটি লোক ব্যাগ নিয়ে আসা যাওয়া করছে। কিন্তু তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। মনোযোগ দিয়ে এবং আন্তরিকতার সঙ্গে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনার তদন্ত করা হয় নি। এরপর থেকে একের পর এক সিপিবি র অন্যান্য সমাবেশে উদীচীর সমাবেশে হামলা করা হয়। এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল সিপিবি ও বাম ধারার রাজনীতি ধ্বংস করার। কিন্তু তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার সিপিবিকে ধ্বংস ও বিভক্ত করতে পারিনি।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আরও বলেন, দেশে একটি লুটেরা ও দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট রয়েছে। এদের কাজ হলো ক্ষমতার পরিবর্তন হলে রং বদলিয়ে ক্ষমতার দিকে চেপে বসা। গত ৫ আগস্ট এর পর গঠিত বর্তমান সরকারের সময়েও তাই দেখছি। দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি, লুটতরাজ দখলদারিত্ব, ক্ষমতার আধিপত্য ধরে রাখার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারের পতন হয়েছে ঠিকই কিন্তু ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এই পরিবর্তন করতে হলে জনগণের সরকার প্রয়োজন। তাই নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার করা প্রয়োজন তা করে দ্রুত নির্বাচন দিন। জনগণের জানা আছে নির্বাচনের জন্য কতটুকু সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কারের কথা বলে কালক্ষেপণ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অপ্রয়োজনীয় কাজ করে সময় নষ্ট করবেন না। তাহলে দেশের জনগণ আবার ফুসে উঠতে পারে। তিনি আবারও রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য বামধারার রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানান।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ২০০১ সালে ২০ জানুয়ারি সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার মামলার সাক্ষ্য দেওয়ার ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, ওই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবীরা আদালতে বলেছেন, ”এটি একটি ছোট দল। সমাবেশের জন্য যে মাইকটি ব্যবহার করা হয়েছিল সেটি বিস্ফোরণ হয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। কোনো বোমা হামলা হয়নি।”
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তর নেই। সরকার কী করছে, কী করতে চাচ্ছে- তা বোঝা মুশকিল। বিগত সরকারের শাসনামলে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গিয়েছিল, বেকারত্ব বেড়ে চলছিল। এই ধারা এখনো অব্যাহত।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সরকার প্রয়োজনীয় কাজে মনোযোগী নন। দেশের অভ্যন্তরে নানা সংকট। সরকার সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ না করায় দেশি-বিদেশি নানা অপশক্তি অপতৎপরতার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করারও সাহস দেখাচ্ছে কোনো কোনো মহল। এসব ঘটনা চলতে থাকলে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করলে দেশে আরেকটি বিপ্লব শুরু হবে।
সিপিবি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ বলেন, প্রতিদিনই বৈষম্য, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন বাড়ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। আমরা বারবার গণতন্ত্র ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, কিন্তু বারবারই পেছন থেকে আমাদের ঐক্যবদ্ধের ওপরে আঘাত করা হয়েছে। এ ধরনের আঘাতের নমুনা আবার দেখতে পাচ্ছি। তাই সরকারকে অনুরোধ করব যে, কোনো দলের এজেন্ডা নিয়ে সামনে এগুনোর চেষ্টা করবেন না। তাহলে জনগণ আপনাকেও ক্ষমা করবে না।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/ইআ