‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাত জেগে পাহাড় পাহারা দিবেন’
১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৫৯ | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৫০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে পাহাড় রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাত জেগে পাহারা দিতে বললেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিদের ৯টা-৫টা অফিস সময় হিসেব করা উচিৎ নয়।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে পলিথিন বিরোধী এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা একথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘চট্টগ্রামে পাহাড় কাটে, আমি আসি আর বন্ধ করি। এভাবে টম অ্যান্ড জেরি আমি আর খেলতে পারব না। আমি আসব, ফোন করব, আপনি যাবেন, পাহাড় কাটা বন্ধ হবে, কাল আবার পাহাড় কাটবে। এভাবে হয় না। চট্টগ্রামের পাহাড় কাটা নিয়ে আমরা শনিবার (১৮ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। আপনারা তো আমাকে আগে থেকে চেনেন।’
সভায় উপস্থিত বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তারা রাতে পাহাড় কাটে। রাত জেগে পাহারা দেবেন। এটা আপনার দায়িত্ব। এটা সরকারের আইন। ৯টা-৫টা অফিস কোনো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী করতে পারে না। কেউ বলতে পারবে না আমার অফিস টাইম ৯টা থেকে ৫টা। তাকে সব সময় প্রজাতন্ত্রের সেবায় থাকতে হবে।’
‘বিভাগীয় কমিশনার পাহাড় কাটার একটা তালিকা তৈরি করে দিয়েছেন। আমরা বারবার বলেছি তালিকায় মালিকদের নাম দেবেন, তারা দেননি। এখন আবার বলছি, তালিকা পূর্ণ করে মালিকদের নাম দিন। পাহাড় যখন কাটবে মালিককে গ্রেফতার করবেন, শ্রমিকদের নয়। দুজন মালিককে গ্রেফতার করবেন, দেখবেন পাহাড় কাটা বন্ধ হবে। এই টম অ্যান্ড জেরি খেলা আর আমাকে দিয়ে খেলাবেন না।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ঢাকায় রাত দুইটার সময় এসএমএস আসে- আপা অমুক জায়গায় পাহাড় কাটা হচ্ছে। আমি ঘুম ভাঙিয়ে তিনটার সময় সেটি পাঠাই। ওনারা আবার লোক জোগাড় করতে করতে ছয়টা বাজে। পাহাড় কাটা শুরু হয়েছে রাত ১১টায়, সাতটার মধ্যে পাহাড় কাটা শেষ। আপনি যদি গাছ কেটে ফেলেন গাছ লাগাতে পারবেন। নদী দখল করে ফেললে দখলদার উচ্ছেদ করতে পারবেন। আপনাদের মধ্যে যদি কারও পাহাড় কেটে ফেলার পর পাহাড় সৃষ্টি করার জাদু থাকে তাহলে আমাকে বলে দেবেন। যদি জাদু জানা না থাকে তাহলে পাহাড় কাটতে দেওয়া যাবে না।’
‘আপনারা তালিকায় মালিকের নাম দেবেন। সব মালিককে আপনারা রেজিস্ট্রি ডাকে চিঠি পাঠাবেন, এটা আপনার পাহাড় আপনি আর কাটবেন না। সরকারি আইনে অপরিহার্য জাতীয় প্রয়োজন ছাড়া পাহাড় কাটা নিষেধ। মালিকদের নাম ধরে চট্টগ্রামের শীর্ষ পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞপ্তি দেবেন। এই দাগ-খতিয়ানে পাহাড় আছে এগুলো কাটা যাবে না। তারপর চট্টগ্রাম শহরের কোথায় কোথায় পাহাড় আছে তা দেখার জন্যে একটা স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি করেন। বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিডিএ, বন বিভাগ, সিটি করপোরেশন পুলিশ সব সংস্থার প্রতিনিধি নিয়ে এটা করতে হবে। চট্টগ্রামকে সাতটা ভাগে ভাগ করে ফেলেন। এই সাতটা কর্মকর্তা সাতটা ভাগের দায়িত্বে থাকবে,’– বলেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আহসান হাবীব ও নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ূন কবির এবং চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তৌহিদ হোসেন বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/আরডি/এনজে