‘বিএনপি ছাত্র-জনতার অর্জনকে ধ্বংস করতে চাইছে’

ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম

ঢাকা: নির্বাচনের পরে সংস্কারের কথা বলে বিএনপি ছাত্র জনতার অর্জনকে ধ্বংস করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ‘যুব-কনভেনশন’-এ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।

‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর যুব সংগঠন ‘ইসলামী যুব-আন্দোলন বাংলাদেশ’ এ যুব-কনভেনশন আয়োজন করে।

সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনের পরে সংস্কারের কথা বলে ছাত্র-জনতার অর্জনকে ধ্বংস করতে চাইছে। বাংলাদেশের মানুষ চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি দেখতে চায় না। যারা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাদেরকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাদেরকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম এখন চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, সিন্ডিকেট ও দখলদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘অতীতের সরকার সব কিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। তাই ধ্বংসস্তূপের ওপরে কিছু হতে পারে না। যে কারণে সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আমরা চাই। কারও ইঙ্গিতে বিচার বিভাগ চলতে পারে না।’

সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবে ৫০৫টি আসন রাখা হয়েছে। আমি মহিলাদের জন্য ১০০ সংরক্ষিত আসন চাই না। মহিলাদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট আসন চাই না। এক কক্ষ বা দ্বি-কক্ষ যাই হোক সব নির্বাচন পিআর পদ্ধতির হতে হবে। অন্যথায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। যে আন্দোলনের মাধ্যমে আজকের এই পটপরিবর্তন সেই আন্দোলন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর শীর্ষ নেতারা মাঠে ছিল। অন্য কোনো দলের শীর্ষ নেতারা মাঠে ছিল না।’

ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী

ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, ‘৫৩ বছরের লুটপাটে দেশ বসবাসের অযোগ্য হয়েছে। দেশকে বসবাসযোগ্য করতে হলে ইসলাম ও দেশপ্রেমিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। একটা মহল আলেম ওলামাদেরকে বিভক্ত করতে চায়। সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদীরা আলেমদের ঐক্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘ইসলাম, দেশ ও মানবতার বিরুদ্ধে কোনো অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে তাদের বিরুদ্ধে যুব সমাজকে সোচ্চার হতে হবে। ৫ আগস্ট যে বিজয় আমরা অর্জন করেছি, সেই বিজয় ধরে রাখতে হলে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

বলেন, ‘৫৩ বছরে ফ্যাসিস্টের উত্থান ও পতন হয়েছে কিন্তু ফ্যাসিবাদের পতন হয়নি। পিআর পদ্ধতির নির্বাচন ছাড়া জনমতের কোনো প্রতিফলন হবে না, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আমরা দ্বি-কক্ষ চাই না পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চাই। আগামী দিনে কল্যাণ রাষ্ট্র করতে চাইলে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিন। অন্যথায় আন্দোলন করে পিআর পদ্ধতি আদায় করবে ছাত্র-জনতা।’

মোকামিয়ার পীর মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস বলেন, ‘ইসলাম এসেছে আউলিয়ায়ে কেরামের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবেও ইসলামী আন্দোলনের মাধ্যমে। সকল পীর মাশায়েখকে পীর সাহেব চরমোনাইয়ের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যোগদান করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসনের কোথায় কোথায় ফ্যাসিস্টদের সহযোগী আছে তাদের তালিকা হওয়া দরকার। পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন হওয়ার পরে নির্বাচন হবে। পিআর পদ্ধতি ছাড়া আমরা নির্বাচন মানব না।’

ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘অন্তর্র্বতী সরকারকেই জুলাই বিপ্লবের একটি ঘোষণাপত্র ঠিক করতে হবে। জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যারা ছিল তাদের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যাবে। বিগত দিনে যারা ৩/৪ বার ক্ষমতায় ছিল তারা অতীত থেকে শিক্ষা নেননি। তাদের অতীত চরিত্র পরিবর্তন হয়নি। তারা উপর থেকে যে কথা বলেন তাদের কথা তৃণমূলে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’

ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেন, ‘৫৩ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা ক্ষমতায় যাওয়ার আগে সুন্দর সুন্দর কথা বলে ক্ষমতায় গিয়ে শোষণ করেছে। নব্য চাঁদাবাজ ও দখলদাররা ফ্যাসিস্ট হাসিনার পথে যাবে।’

জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘১৬ বছর আলেম ওলামাদের ওপর জুলুম করা হয়েছিল। অনেককে বিদেশ চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। জুলাই বিপ্লবে আপনাদের যে ত্যাগ ছিল তা জাতি চিরদিন স্বরণ করবে।’

সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী যুব আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ নেছার উদ্দিন বলেন, ‘১৯ জুলাই ইসলামী যুব আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ গুলি বর্ষণ করেছে। সেই ক্ষোভ থেকে আমরা ফ্যাসিস্টদের উৎখাত করে ঘরে ফিরেছি।’

সারাবাংলা/এজেড/এইচআই

অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী ইসলামী আন্দোলন মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম