‘টিউলিপ তার জেনেটিক্যাল লাইন ক্রস করতে পারেনি’
১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৮ | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৪০
ঢাকা: বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক তার জেনেটিক্যাল লাইন ক্রস করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক এটিএম খালেদের ‘শাহদাৎ বার্ষিকী’ উপলক্ষে এ আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।
রিজভী বলেন, ‘টিউলিপ লেখা-পড়া করেছে ইংল্যান্ডে। ইংল্যান্ডের একজন জনপ্রতিনিধি, একজন এমপি। সেখানে একটা টাকা, এক পয়াসা দুর্নীতি— এটা একটা স্বপ্নের বিষয়। কিন্তু, তার (টিউলিপ) জিন হচ্ছে বাংলাদেশের শেখ পরিবার। ওখানে লেখাপড়া করে এমপি হওয়ার পরও তার জেনেটিক্যাল যে লাইন, সেই লাইন তিনি ক্রস করতে পারেনি। করতে পারেনি বলেই তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলো আসছে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত এক ব্যবসায়ী টিউলিপকে ফ্ল্যাট কিনে দিল এবং আরেকজন আইনজীবী তার (টিউলিপ) ছোট বোন রুপত্তিকে ফ্ল্যাট কিনে দিল। আবার সেই ফ্ল্যাটে রূপত্তি টিউলিপের পরিবারকে থাকার ব্যবস্থা করে দিল। এখন লন্ডনের সব পত্র-পত্রিকায়, ইংল্যান্ডের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ কথাগুলো বেরিয়ে আসছে। ওখানের জার্নালিজম তো অত্যন্ত শক্ত জার্নালিজম। ওখানে হঠাৎ করে কারও বিরুদ্ধে সংবাদপত্র লিখতে পারে না। কিন্তু, সেখানে লেখালেখি হচ্ছে। কারণ, এগুলো সবই হচ্ছে শেখ হাসিনার একেকটা বিভৎস দুর্নীতির চিত্র। সেই চিত্র কখনো লন্ডন, কখনো নিউইয়র্ক, কখনো জাপান, কখনো মালয়েশিয়া, কখনো দুবাই থেকে একটার পর একটা বেরিয়ে আসছে।’
রিজভী বলেন, ‘আমি ভাবছিলাম এখানে কী কথা বলব। কোথা থেকে আমার বক্তব্য শুরু করব। কারণ, যেখানেই যাই ঘুরে ফিরে হাসিনার যে মহাদুর্নীতি, একেবারে গ্যালাক্সি সমান দুর্নীতি, এটা ছাড়া কোনো বক্তব্যই খুঁজে পাই না। দুর্নীতির যে বিভিন্ন ডাইমেনশন, দুর্নীতির যে বিভিন্ন মডেল, কোন মডেলটা ধরে কথা বলব? তার ভাগ্নে, ভাগ্নি, ছেলে, মেয়ে— কোনটা ধরে কথা বলব? রূপপুর পারমানবিক প্রকল্প রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে। ৫০০ কোটি টাকা শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তার ভাগ্নি— সে আবার ইংল্যান্ডের এমপি এবং সিটি মন্ত্রীর দায়িত্বে, তারা সবাই মিলে মালয়েশিয়ার এক ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ করার এ অভিযোগ একেবারে সুস্পষ্ট।’
তিনি বলেন, ‘আজকে শেখ হাসিনা কী স্ট্যাটাসে ভারতে আছেন? এটা কিন্তু কেউ বলতে পারছে না। বাংলাদেশের দুইটা পাসপোর্ট একটা কূটনৈতিক পাসপোর্ট, একটা জেনারেল পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। তারপরও তার কী স্ট্যাটাস আছে? ভারত তাকে কীভাবে রেখেছে?’
প্রয়াত এটিএম খালেদ প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘যাকে নিয়ে আজকের এই আলোচনা তিনি ছিলেন আমাদের ছাত্রজীবনে রাজনৈতিক অনুপ্রেরণা। তখন সবে মাত্র ছাত্রদলের রাজনীতি হাটি হাটি পা পা করে যাত্রা শুরু করেছে। সেই মুহূর্তে তাকে হত্যা করা হল।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা বলে বেড়াতেন এবং শেখ হাসিনার লোকেরা, বুদ্ধিজীবীরা একটা বক্তব্য খুব ফেরি করতেন, মার্কেটিং করতেন, সেটা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলতে বলতে মুখ দিয়ে তাদের ফেনা বের হত। কিন্তু, তারাই মুক্তিযুদ্ধকে সব চেয়ে বড় অপমান করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলোকে পদদলিত করেছে। ছাত্রদলকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে শেখ হাসিনার পোষ্যদের হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে দুনিয়া থেকে চলে গেছেন এটিএম খালেদ। তিনি তো একজন বীর প্রতীক।’
‘তাকে আঘাত করেছিলেন কেন? কারণ, তিনি ভিন্ন একটি রাজনৈতিক দল করে। করতেই পারে। মুক্তিযুদ্ধ কি শুধু আওয়ামী লীগ করেছে, মুক্তিযুদ্ধ কি শুধু মাত্র আওয়ামী লীগের অবদান? তা তো না। মূলত একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধে রূপ নিল, কারণ, যে অধিকারটুকু দেওয়ার কথা, নির্বাচনের যে ফলাফল প্রকাশ করার কথা, সেই ফলাফল প্রকাশ করার পরও নির্বাচনে যারা জিতেছে, তাদেরকে সরকার গঠন করতে দেয়নি। এটা তো করেছে ইয়াহিয়া খান, এটা করেছে টিক্কা খানরা, এটা করেছে জুলফিকার আলী ভুট্টরা। তারা ছিল অন্য জাতি, অন্য দেশ। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমরা এই অর্জন তৈরি করেছিলা’- বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘সেখানে সেনাবাহিনী যুদ্ধ করেছে, পুলিশ যুদ্ধ করেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যুদ্ধ করেছে। যদি আবার বিচার বিশ্লেষণ করা যায়, তাহলে দেখা যাবে আওয়ামী লীগের সেই যুদ্ধে ভূমিকা অত্যন্ত কম। কারণ, তারা যুদ্ধের ঘোষণা দিতে পারেনি। যদি সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে আন্তরিক থাকত, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা তারা দিত। ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা আর ১৭ এপ্রিল সরকার গঠন করা হয় মুজিবনগরে। তার মানে তারা সকলে দ্বিধান্বিত ছিলেন। অস্পষ্ট ছিলেন, কী করবেন কী করবেন না। এই কারণেই ওরা স্বাধীনতাত্তোর মনে করেছে যে, আমরাই থাকব এবং আমাদের যারা বিরোধিতা করবে, তারাই হচ্ছে দেশদ্রোহী। সেই চরিত্র কিন্ত শেষ দিন পর্যন্ত ছিল। শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার দিন পর্যন্ত।’
সারাবাংলা/এজেড/এমপি
টিউলিপ সিদ্দিক বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শেখ হাসিনা